একজন শিল্পী মোদকের গল্প

প্রকাশ | ০৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সুমন্ত গুপ্ত শিল্পী মোদক। যিনি অধ্যবসায় আর কঠিন পরিশ্রমের বিনিময়ে ছিনিয়ে নিয়েছেন জীবনের সফলতা। বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রবল ইচ্ছাশক্তিই পারে জীবনযুদ্ধে জয়লাভ করাতে। ক্লাস এইট পর্যন্ত কোনো শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়েননি শিল্পী মোদক। মা-ই ছিলেন তার শিক্ষক। হবিগঞ্জের রামকৃষ্ণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী হিসেবে তিনি জুনিয়র বৃত্তি লাভ করেন। সে সময়কার প্রধান শিক্ষক শিল্পীর নাম স্কুলের দেয়ালে লিখে রাখেন। সেই প্রধান শিক্ষক আজ বেঁচে নেই, কিন্তু তার প্রিয় ছাত্রী শিল্পীর নাম আজও স্কুলের দেয়ালে আছে। সেই মেধাবী শিল্পীই ৩৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে কর্মরত আছেন পঞ্চগড় জেলায়। পরিবারে আর্থিক অনটন ছিল, কাপড় সেলাইয়ের কাজ করে মা-ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতেন। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য শিল্পীকে স্কুলে বেতন দিতে হতো না। এমনকি শিক্ষকরাই তাকে বই, খাতা, নোট সংগ্রহ করে দিতেন। স্কুলে সবসময় বিতর্ক প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা ও গানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। স্কুলের পরীক্ষায় সবসময় প্রথম হয়েছেন শিল্পী। ২০০৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় দারিদ্র্যকে খুব ভালোভাবে বুঝতে শেখেন। তখন থেকেই টিউশনি শুরু। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তির পর প্রতিদিন মেহেন্দীবাগ এলাকার বাসা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে কলেজে আসতেন। কলেজের শিক্ষকরা আন্তরিক ছিলেন, এদের মধ্যে বিনাবেতনে প্রাইভেট পড়িয়েছেন কয়েকজন। অদম্য শিল্পী মোদক বরাবরই বিনয়, ভদ্রতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অকৃত্রিম সম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন। তিন-চারটে টিউশনি, আর ভার্সিটি যাওয়া ছাড়া কোনো সময়ই নষ্ট হতে দেয়নি তিনি। ২০০৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় ভর্তি হন শিল্পী। তবে যেহেতু বিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলেন, তাই বাংলা ছেড়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব ও বীজবিজ্ঞান বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রতিদিনই বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত টিউশনি করাতেন নিজের খরচ জোগাড়ের জন্য। অনার্স ও মাস্টার্স, দুটোতেই সিজিপিএ ৩.৯ পেয়ে পড়াশোনা শেষ করেন, আর এই অসাধারণ ফলাফলের জন্য অর্জন করেন রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক। ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবেন, কিন্তু সার্কুলার না হওয়াতে শুরু করেন বিসিএসের প্রস্তুতি। মধ্যে সিলেটের শাহজালাল সিটি কলেজে এক বছর শিক্ষকতা করেছেন। বিসিএসে ধাপে ধাপে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর অবশেষে ফলাফলে তিনি সুপারিশপ্রাপ্ত হলেন প্রশাসন ক্যাডারে। শিল্পী চান যারা দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে পড়াশোনা করেন তাদের সাহায্য করতে। পাশাপাশি দেশসেবা ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখেন।