বিতর্কে আটকে গেল 'হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক' স্থাপন

প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

নন্দিনী ডেস্ক
এতিম-বিপন্ন শিশুদের জন্য দেশে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু মায়ের বুকের দুধ সংরক্ষণের 'হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক' চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও ধর্মীয় প্রশ্নে বিরোধিতার মুখে আটকে গেছে। এতে আইনগত ও ধর্মীয় সমস্যা আছে মর্মে 'মিল্ক ব্যাংক' স্থাপনের বিরোধিতা করে এবং এ ব্যাপারে যথাযথ শর্তারোপ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। জনস্বার্থে নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান। নোটিশে ধর্ম মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ), নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র (স্ক্যানো), নবজাতক আইসিইউ (এনআইসিইউ) এবং ঢাকা জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়েছে। আইনজীবীর পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, 'ইসলাম ধর্মমতে, কোনো শিশু কোনো মহিলার দুধ পান করলে ওই মহিলা ওই শিশুর দুধমাতা হয়ে যায় এবং ওই মহিলার সন্তানরা উক্ত শিশুর ভাইবোন হিসেবে গণ্য হয়। ফলে বাংলাদেশে ওই 'মিল্ক ব্যাংক' স্থাপনের ফলে একই মায়ের দুধ পানের কারণে ভবিষ্যতে ভাই-বোনের মধ্য বিয়ে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা চরমভাবে সামাজিক অরাজকতা সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, ভাই ও বোনের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ এবং তা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইন 'মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরীয়ত) প্রয়োগ আইন, ১৯৩৭' এর সরাসরি লঙ্ঘন।' এ ব্যাপারে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. মজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এই কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। এটা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পর সবার সম্মতি পেলে সম্ভব হলে এটা চালাব। প্রসঙ্গত, হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের উদ্যোগটি ঢাকা জেলার মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইসিএমএইচ) নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র (স্ক্যানো) এবং নবজাতক আইসিইউর (এনআইসিইউ) নিজস্ব উদ্যোগ। বেসরকারি আর্থিক সহায়তায় ব্যাংকটি স্থাপন করা হয়েছে। এটি গত ১ ডিসেম্বর চালু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। আইসিএমএইচ ক্যাঙারু মাদার কেয়ারে মা ছাড়া খালা, নানি বা অন্যদের সঙ্গে যে নবজাতকদের রাখা হচ্ছে, তারাও এই দুধ খেতে পারবে। স্ক্যানো ও এনআইসিইউতে থাকা অপরিণত বয়সে জন্ম নেওয়া ও অসুস্থ নবজাতকদের সংরক্ষণ করে রাখা দুধ খাওয়ানো হবে। ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া ২ হাজার গ্রামের কম ওজনের নবজাতকদের মা বা অন্য অভিভাবকদের ত্বকের সংস্পর্শে রেখে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাকে ক্যাঙারু মাদার কেয়ার বলে। এ ছাড়া দত্তক নেওয়া সন্তানের অভিভাবকরা এখান থেকে দুধ নিয়ে খাওয়াতে পারবেন। বিভিন্ন সময় স্বজনরা নবজাতককে ফেলে দেন, এই স্বজন-পরিত্যক্ত নবজাতকদের বাঁচাতেও মিল্ক ব্যাংক কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। মায়েদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ ও বিতরণে কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা নেওয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, মিল্ক ব্যাংক স্থাপনের ফলে বাজারজাত করা মায়ের দুধের বিকল্প শিশুখাদ্যের ব্যবহার কমবে। নবজাতকদের বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। নবজাতকের মৃতু্যঝুঁকি ও অপুষ্টির হার কমানো সম্ভব হবে। আইসিএমএইচের সহযোগী অধ্যাপক মজিবুর রহমান হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ব্যাংক চালু করার আগে তিনি নিজে স্পেন ও ভারতের দুটি হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক পরিদর্শন করে এসেছেন। তিনি বললেন, যে মায়েদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করা হবে, সেই মায়েদের মারাত্মক রোগ (হেপাটাইটিস বি এবং এইচআইভি) আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দুধ সংগ্রহ করা হবে, যাতে নবজাতক রোগের ঝুঁকিতে না পড়ে। ইনস্টিটিউটের এনআইসিইউ এবং স্ক্যানোর ইনচার্জ এবং মিল্ক ব্যাংকের সমন্বয়ক মজিবুর রহমান জানান, সবচেয়ে বেশি (২১৬টি) হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক রয়েছে ব্রাজিলে, যার মাধ্যমে ২৮ শতাংশ নবজাতকের মৃতু্য রোধ এবং ৭৩ শতাংশ শিশুর অপুষ্টি রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এমনকি ভারতেও ব্যাংক স্থাপনের পর নবজাতকের মৃতু্য রোধ করা সম্ভব হয়েছে। য়