নতুন বছরে নারীদের প্রত্যাশা

প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

জেলী আক্তার
বিশ্ব কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, কোন কালে একা হয়নি কো জয়ী,/ পুরুষের তরবারি।/ প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে,/ বিজয়ালক্ষ্ণী নারী। আর সেই নারীরাই আজ অবহেলার স্বীকার, অত্যাচারের স্বীকার। নারী নির্যাতন এক ধরনের সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কর্মহীনতা, নানা কারণে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে নারীরা। তাই নতুন বছরে নারীদের প্রত্যাশা যৌতুকপ্রথা বিলুপ্ত হোক : এখনো অনেক পরিবার আছে যেখানে মেয়ের জন্ম মানে অনাকাঙ্ক্ষিত। মেয়ের জন্ম মানেই মুখ কালো করে সাদর সম্ভাষণ জানানো, কারণ এই মেয়েটা এক সময় বড় হবে তাকে বিয়ে দিতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা তার জন্য একটা থলেয় টাকা জমাতে হবে। বিশেষ দারিদ্র্য কষাঘাতে পিষ্ট মানুষ যেন মাথায় একটা বোঝা তৈরি হয়। দিনের পর দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য যৌতুকের মোটা অংক তৈরি করতে হয়। একটা মেয়ের বিয়ে দিতে বাবার সর্বস্ব বিলিন হয় তবুও চায় মেয়েটা ভালো থাকুক। কিন্তু ছেলেপক্ষের চাহিদা মেটে না একটার পর একটা প্রয়োজন লেগেই থাকে। কখনো বা মেহেদী রং ওঠার আগে সংসার ভেঙে যায়। আজ আমরা বিভিন্ন জায়গায় স্পষ্ট লেখা দেখি যৌতুক নেবো না যৌতুক দেবো না। বর্তমান একটা সরকারি চাকরিজীবী ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে গেলে টাকার পরিমাণ কম হলেই যেন সোনার হরিণ হাতছাড়া হয়ে যায়। নতুন বছরে নারীদের প্রত্যাশা মেয়েদের যৌতুক দিয়ে বিয়ে দেয়া বন্ধ হোক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে যৌতুকপ্রথা নির্মূল করা হোক। পারিবারিকভাবে নারীদের বৈষম্য দূর হোক: আজ ও পরিবার আছে যারা ভাবে ছেলেরাই শেষ বয়সে তাদের দায়ভার নেবে। তাদের বংশের প্রদীপ ছেলেরা। তারা ভাবে বড় মাছের মাথাটা ছেলের, তারা ভাবে ছেলেদের পড়াশোনা করা উচিত মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে লাভ নেই; কিন্তু এটা কতটা যৌক্তিক তা একবার উপলব্ধি করা দরকার নয় কি? মেয়েদেরকে ছেলেদের মতো সুযোগ-সুবিধা দিলে তারাও অনেক কিছু করতে পারে। আজ নারীরা বিশ্বকাপ জয়ী। আজ নারীরা অ্যাডভেঞ্চার, নারী হয়েও এভারেস্ট জয়ী নিশাত মজুমদার ও সেভেন সামিট সম্পন্নকারী ওয়াসফিয়া নাজরিন। আজ নারীরা যুদ্ধবিমান পাইলট, আজ নারীরাই গবেষক, চিকিৎসক, সাউথ এশিয়ান গেমসে ভারোত্তোলন স্বর্ণপদক অর্জনকারী। গণপরিবহণের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক : জীবনের প্রয়োজনে কাজের তাগিদে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছুটে চলতে হয় কখনো গণপরিবহণে; কিন্তু সেই গণপরিবহণে যদি নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না থাকে তাহলে নারীরা কীভাবে চলাচল করবে? কীভাবে দৈনন্দিন জীবনে চলবে? স্বাধীনদেশে স্বাধীনভাবে চলাফেরা আমাদের সবার কাম্য তবুও কেন এই ধর্ষণ? নতুন বছরে নারীদের প্রত্যাশা গণপরিবহণে ধর্ষণ রোধ এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। নারী নির্যাতন বন্ধ হোক : সমকাল পত্রিকার এক তথ্য মতে আজ ও নারীরা নির্যাতনের স্বীকার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে ৬৯৭ নারীকে ধর্ষণ, ১৮২ জনকে গণধর্ষণ ও ধর্ষণ শেষে ৬৩ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। নতুন বছরে নারীদের প্রত্যাশা নারীদের জীবন যেন এভাবে সস্তা হয়ে না ওঠে। নারীদের প্রত্যাশা আইনের আওতায় এনে এমন অভিযোগে অভিযুক্তদের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তির ব্যবস্থা করা। নারীদের শতভাগ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা : নারীরা আজ পিছিয়ে নেই তারাও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে, প্রত্যেক কর্মক্ষেত্রে আজ নারীরা অংশগ্রহণ করছে। ঘরে-বাইরে তারা কর্মব্যস্ত জীবনযাপন করছে। পোশাক কারখানায় কর্মরত নারীশ্রমিকদের শতকরা ২২ দশমিক ৪ ভাগ কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। এভাবে অবহেলিত হলে নারীর নিরাপত্তা কোথায়? তারা সমাজ ও সংসারের হাল ধরছে তারা নিজেরাই উপার্জন করে স্বাবলম্বী হচ্ছে সংসারে হাত-পা গুটিয়ে বসে না থেকে নিজের উপার্জনের মাধ্যমে সংসারে উন্নতি করছে। তবুও আজ নারীরা অবহেলিত। পরিসংখ্যান বু্যরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। এর মধ্যে শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত ২৩ লাখ ৭৭ হাজার এবং অশিক্ষিত ৩ লাখ। আর অশিক্ষিত বেকারদের মধ্যে নারী ১ লাখ ৭৩ হাজার। বেকার সমস্যা মানবজীবনের অভিশাপ। তবে নতুন বছরে নারীদের প্রত্যাশা শিক্ষিত নারীদের কর্মসস্থান নিশ্চিত করা। তাদের বেকারত্ব অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয়া। এবং অর্ধ শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত নারীদের কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। কর্মক্ষমে নারী-পুরুষের বেতন বৈষম্য দূর করি : কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ দুজন সমান অবদান রাখলেও কখনো কখনো নারীরা বৈষম্যের শিকার হন। তারা পুরুষের মতো কাজ করলেও তারা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারে না। কর্মক্ষেত্রে পুরুষের অগ্রাধিকার বেশি। কারণ নারীরা দুর্বল এই ভাবনা। কিছু কিছু কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান কাজ করা সত্ত্বেও পুরুষের বেতন বেশি নারীর বেতন কম। আমরা চাই নারী-পুরুষের এই বেতনবৈষম্য দূর করা হোক। নতুন বছরে নারীদের প্রত্যাশা নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা। নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করে একে অপরের সহযোগী হয়ে সমাজের উন্নতি সাধন করা। নতুন বছরে নারীদের প্রত্যাশা সর্বত্র নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত সেটা ঘরে কিংবা বাইরে।