নিরাপদ জ্বালানি তৈরিতে কলাপাড়ার নারীরা

প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

চঞ্চল সাহা, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
কলাপাড়াসহ উপকূলীয় এলাকায় এক সময় বিভিন্ন গাছের কাঠ ছিল জ্বালানির একমাত্র অবলম্বন। ধীরে ধীরে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গ্যাসের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও হারিয়ে যায়নি গোবর জ্বালানি ব্যবহার। ফলে শীত মৌসুমে শতশত রমণীরা ব্যস্ত থাকেন গোবরের জ্বালানি তৈরিতে। বছরের অন্যান্য মৌসুমে বাড়ির পাশে বড় ধরনের খাদা তৈরি করে গরু কিংবা মহিষের গোবর সংরক্ষণ করা হয়। শীত মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ওই গোবর দিয়ে জ্বালানি তৈরির কাজ। পৌরশহরসহ উপজেলার সব ইউনিয়নে অধিকাংশ বাসাবাড়িতে শীত এলেই রমণীরা রমণীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন গোবর দিয়ে জ্বালানি তৈরিতে। এক সময় খোলা মাঠে মাটি খুঁড়ে শত বছরের পুরনো গাছের গোড়া উঠিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে রোদে শুকিয়ে লাকড়ি হিসেবে বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসতো এক ধরনের ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে গাছের গোড়া না থাকায় সংকট দেখা দিয়েছে কাঠের এ জ্বালানির। তবে রান্না কিংবা অন্যান্য কাজে পর্যাপ্ত গ্যাসের ব্যবহার হলেও প্রত্যন্ত এলাকায় এখনো শুরু হয়নি গ্যাসের ব্যবহার। ফলে বাড়িতে বাড়িতে গোবর দিয়ে জ্বালানি তৈরির প্রচলন এখনো থেমে থাকেনি। গোবরের এ জ্বালানিকে গ্রাম্য ভাষায় ঘুঁটে/বড়ে বলা হয়। এক থেকে দেড়-দুই ফুট গাছের চিকন ডালে মুঠো মুঠো করে গোবর আটকে দিয়ে কিংবা শুধু গোবর দিয়ে গোল আকৃতিরও ঘুঁটে/বড়ে তৈরি করা হয়। গ্রাম্য এলাকায় যে সব কৃষক গরু কিংবা মহিষ পালন করেন তারাই গোবর দিয়ে জৈব সারের পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানি তৈরি করেন। তবে শীত মৌসুমে গোবরের তৈরি এ জ্বালানি বর্ষা মৌসুমের জন্য মজুদ করা হয়। গোবরের এ জ্বালানি অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় ভালো বলে এ জ্বালানি প্রত্যন্ত এলাকার রমণীদের পছন্দের। এ ছাড়া এ জ্বালানির রান্নায় স্বাদও বেশি বলে এখনো এর কদর কমেনি। উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মুকুল মৃধা জানান, গোবরের জ্বালানি একটি উৎকৃষ্ট জ্বালানি। এটি ব্যবহারে প্রত্যন্ত এলাকার রমণীরা স্বাচ্ছন্দবোধ করেন বলে তিনি উলেস্নখ করেন। একই গ্রামের গৃহবধূ বীথি রানী জানান, গোবরের জ্বালানি স্বাভাবিকভাবে জ্বলে বিধায় রান্নায় কোনো প্রকার ঝামেলা হয় না। এ ছাড়া গ্যাসের তুলনায় এ জ্বালানির রান্নায় স্বাদও বেশি বলে তিনি মনে করেন। এদিকে উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের এক রমণী সুনীতি হাওলাদার জানান, গোবরের ঘুঁটে বাঙালির ঐতিহ্য। অন্যান্য জ্বালানি হারিয়ে গেলেও নিরাপদ জ্বালানি হিসেবে গোবরের জ্বালানি আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে বলে তিনি উলেস্নখ করেন।