আমার চেতনা আমার একুশ

বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার ইতিহাসে ৫২'র ভাষা আন্দোলন একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। হাজার বছর ধরে পূর্বসূরিদের বহু ত্যাগ, তিতিক্ষা, সাধনা ও দুস্তর পথ পাড়ি দিয়ে বাংলা ভাষাকে ৫২'র দোরগোড়ায় আসতে হয়েছিল। নারীদের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যবোধের প্রথম উন্মেষ ঘটেছিল তখন থেকেই। এই উপলব্ধির মধ্যদিয়ে স্বাধীনতার ভিত তৈরি হয়েছিল। এবং তারই ফলে আমরা লাভ করেছি স্বাধীনতা। তারপরও বর্তমানের বাংলা ভাষার দৈন্য চেহারা দেখে ভারাক্রান্ত হই এত ত্যাগ, তিতিক্ষা, শহিদ ভাইয়ের রক্তের বদলে যে আন্দোলন সুবর্ণ ফসল পেয়ে আমরা ধন্য হয়েছিলাম। ইদানীং বাংলা ভাষা চর্চায় তা দেখা যাচ্ছে না। ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত সেই মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন।

প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার ইতিহাসে ৫২'র ভাষা আন্দোলন একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। হাজার বছর ধরে পূর্বসূরিদের বহু ত্যাগ, তিতিক্ষা, সাধনা ও দুস্তর পথ পাড়ি দিয়ে বাংলা ভাষাকে ৫২'র দোরগোড়ায় আসতে হয়েছিল। এই ধারাবাহিকতার ইতিহাস এই ছোট্ট নিবন্ধে বলা সম্ভব নয়। ১৯৪৭ সাল থেকে অর্থাৎ পাকিস্তান সৃষ্টির সূচনাকাল থেকে ভাষার পথযাত্রা দিয়ে শুরু করছি আমার কথামালা। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই পহেলা সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে ১৯নং আজিমপুর আবাসিক বাসাবাড়িতে তমদ্দুন মজলিস নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গঠিত হয়। এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল জাতির তাহজিব, তমদ্দুন, কৃষ্টিকে সমুন্নত রেখে জাতীয় সত্তার উন্মোচনে নতুন নতুন দ্বার উদঘাটন করা। এই লক্ষ্যের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মজলিস বেছে নিয়েছিল অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আদায় করা। এই দাবিকে গতিময় করার জন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যে তমদ্দুন মজলিশ প্রকাশ করে তিন প্রাজ্ঞজনের লেখা সংবলিত একটি পুস্তিকা। এই পুস্তিকাটি প্রকাশিত হলে সচেতন জনগোষ্ঠীর মনে ভাষার প্রশ্নটি আলোড়ন সৃষ্টি করে। আমি তখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা। এই ভাষায় আমরা কথা বলি। এই দেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হবে এ খুশিতে আমরা আবেগে আপস্নুত হয়ে উঠি। অধ্যাপক আবুল কাসেম ছিলেন আমাদের পূর্বপরিচিত। এই সুযোগের সূত্র ধরেই আমি এবং আমার ছোট বোন মমতাজ তমদ্দুন মজলিসের কর্মী হই। মাঝেমধ্যে ছুটির দিনে আমরা মজলিসের অফিসে যেতাম। পোস্টার, ব্যানার বানানোসহ আরও অনেক কাজে আমরা বড়দের সাহায্য করতাম। এই সময় দুই-চারজন মহিলাদেরও মজলিসে আসতে দেখি। তাদের নাম যথাক্রমে জেবুন্নিসা বেগম, দৌলতুন্নেছা বেগম ও আনোয়ারা বেগম। তারা তিনজনই উচ্চশিক্ষিত ছিলেন। মজলিসের আদর্শে বিশ্বাসী ও ভাষার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন এই মহিলারা। বর্তমানের মতো তখন মেয়েদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ ছিল না। অনেক বাধা-বিপত্তির মধ্যদিয়ে তাদের দিনযাপন করতে হতো। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়েদের উর্দু. আরবি, ফারসি ছাড়া সাধারণ লেখাপড়ার চর্চা হতো কম। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার, নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর পরই সমগ্র দেশজুড়ে মুসলমান মেয়েদের জাগরণের সাড়া পড়ে গেল। গ্রামে, গঞ্জে, শহরে, বন্দরে মেয়েদের স্কুল, কলেজে লেখাপড়ার হার বেড়ে গেল। অভিভাবকরাও মেয়েদের উচ্চশিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠলেন। তার শুভ ফল অচিরে দেখা গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীসংখ্যা ক্রম বৃদ্ধিতে। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলমান ছাত্রী সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। ১৯৪৭-১৯৫১ মাত্র চার বছরের ব্যবধানে ভাষা আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সংখ্যা ৮০-৮৫ জন। এবং এই ছাত্রীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ভাষা আন্দোলনে গৌরবময় ভূমিকা রেখে গেছেন। ১৯৫০-১৯৫১-তে ড. সাফিয়া খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওমেন হল ইউনিয়নের জিএস ছিলেন, '৫২-৫৩-তে ছিলেন ভিপি। তাকে দিয়ে ভাষা আন্দোলনে নারীদের ভূমিকার প্রথম পর্ব শুরু হয়। বলা যায় তিনি ছিলেন তখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীদের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তার ভাষ্য মতে, তিনি ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন সচেতন অনুভূতি নিয়ে। পারিবারিক বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে ছেলেদের সঙ্গে জোর কদমে এগিয়ে গেছেন ভাষা আন্দোলনকে আরও গতিময় করতে। তার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা দলে দলে স্কুল, কলেজে গিয়ে ভাষা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায় এবং সংঘবদ্ধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওমেন হলের ছাত্রীরা ভাষা আন্দোলনে দুঃসাহসিক অবদান রেখেছেন। এবং এই সত্য কথাটি আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। এই সময়ে ছাত্রীদের মধ্যে যারা ভাষার ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন তারা হলেন- সুফিয়া খাতুন (বিচারপতি ইব্রাহিম সাহেবের মেয়ে), সামসুন নাহার, রওশন আরা বাচ্চু, সারা তৈফুর, কাজী আমিনা, মাহফিল আরা, খুরশিদি খানম, হালিমা খাতুন প্রমুখ। হালিমা খাতুন, সুফিয়া বেগম ও রওশন আরা বাচ্চু এখনও ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ভূমিকা রাখার জন্য ফেব্রম্নয়ারি এলেই নানা সভা-সমিতিতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে স্মৃতিচারণের দাওয়াত পান। ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যারা তমদ্দুন মজলিসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আনোয়ারা খাতুন। তিনি ছিলেন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং ৫২'র ভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য। গাইবান্ধার বেগম দৌলতুন্নেছা ও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনিও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন ১৯৫৪ সালে। নাদেরা বেগম ও লিলি হকের নামও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। হামিদা খাতুন, নুরজাহান মুরশিদ, আফসারী খানম, রানু মুখার্জী প্রমুখ মহিলারাও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। একুশে ফেব্রম্নয়ারিতে নৃশংসতার প্রতিবাদে অভয়দাশ লেনে এক সভায় নেতৃত্ব দেন বেগম সুফিয়া কামাল ও নুরজাহান মুরশিদ। ধর্মঘট উপলক্ষে প্রচুর পোস্টার ও ব্যানার লেখার দায়িত্ব পালন করেন ড. সাফিয়া খাতুন ও নাদিরা চৌধুরী। বেগম দৌলতুন্নেছার নেতৃত্বে একটি প্রতিবাদ মিছিলও হয়। ২৮ ফেব্রম্নয়ারিতে মিছিলে গুলি চালানোর প্রতিবাদে নুরজাহান মুরশিদ ও লায়লা সামাদের নেতৃত্বে নিন্দা প্রস্তাব গৃহিত হয়। পরে এই আন্দোলনে শরিক হয় লুলু বিলকিচ বানুসহ আরও অনেক সচেতন নারীরা। ১৯৪৭ সালে আজাদ পত্রিকায় বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে একটি লেখা প্রকাশ হলে যশোরের হামিদা সেলিম রহমান নামে এক মহিলা একটি নিবন্ধ লেখেন পরে তিনি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক হয়েছিলেন। এ সময় সুফিয়া খাতুন, হালিমা খাতুন না দুজন মহিলার নাম শোনা যায়। যারা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। নারায়ণগঞ্জের মরগান হাইস্কুলে হেড মিস্টেস মমতাজ বেগম স্থানীয়ভাবে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে নেতৃত্ব দেন। সিলেটের মেয়েরাও ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল এবং তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনের নিকট প্রতিনিধিও পাঠায়। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেয় সিলেটের মুসলিম লীগের নেত্রী জোবেদা খাতুন চৌধুরানী। অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সাহারা বানু, সৈয়দা লুৎফুন্নেছা, রাবেয়া বেগম প্রমুখ। বিল্পবের দেশ, বিদ্রোহের দেশ চট্টগ্রাম। যে কোনো সময়ে দেশ ও জাতির প্রয়োজনে চট্টগ্রামের ভূমিকা অগ্রগামী। ভাষা আন্দোলনেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। চট্টগ্রামেও বেশকিছু কলেজছাত্রী এবং সে সময়ের ভদ্র মহিলারাও ভাষা আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম তোহফাতুন্নেছা আজিম, সৈয়দা হালিমা, সুলতানা বেগম, নুরুন্নাহার জহুর, আইনুন নাহার, আনোয়ারা মাহফুজ, তালেয়া রেহমান, প্রতিভা মুৎসুদ্দি। ভাষা আন্দোলনে রাজশাহীর মহিলাদের ভূমিকা অপরিসীম। রাজশাহীতে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- ড. জাহানারা বেগম বেনু, মনোয়ারা বেগম বেনু, ডা. মহসিনা বেগম, ফিরোজা বেগম ফুনু, হাফিজা বেগম টুকু, হাসিনা বেগম ডলি, রওশন আরা, খুরশিদা বানু খুকু, আখতার বানু প্রমুখ। ভাষা আন্দোলনের সেই উত্তাল দিনগুলোর কথা মনে এলে মনে পড়ে ইতিহাসের আড়ালে ঢাকা তিনজন নারীর কথা। ১৯নং আজিমপুরের অন্দরমহল ছিল এই তিন নারীর কর্মশালা। কোনোরূপ মিটিং, মিছিলে অংশ না নিয়েও এই তিন নারী দিনের পর দিন তমদ্দুন মজলিসের বিপস্নবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ কিছু তরুণদের আদর্শিক প্রেরণার উৎস ছিলেন। এই তিনজন হলেন- রাহেলা খাতুন, রহিমা খাতুন ও রোকেয়া বেগম। রাহেলা খাতুন ছিলেন অধ্যক্ষ আবুল কাসেমের স্ত্রী, রহিমা খাতুন ছিলেন তার বোন এবং সাহিত্যিক ও সাংবাদিক সানাউলস্নাহ নূরীর স্ত্রী। রোকেয়া বেগম ছিলেন আবুল কাসেম সাহেবের সম্বন্ধীর স্ত্রী। স্বামীর আদর্শিক কর্ম উদ্যোগকে সম্মান করে রাহেলা খাতুন নিজের জীবনের সমস্ত আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়ে সারাক্ষণ মোমবাতির মতো জ্বলেছেন, পুড়েছেন আর আগরবাতির মতো সুবাস ছড়িয়েছেন। একঝাঁক আদর্শবাদী তরুণদের তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণার উৎস। রোকেয়া বেগমও প্রতিদিন বিশ-ত্রিশজন মানুষের রান্নার কাজে সাহায্য করতেন রাহেলা খাতুনকে হাসিমুখেই। রহিমা খাতুনও রাতের কর্মের সঙ্গী ছিলেন। রাত ২টার আগে এই তিন নারী ঘুমানোর সুযোগ হতো না, মজলিস কর্মীদের হই-হুলেস্নাড়, গন্ডগোলের জন্য। এই কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যেও এই তিন নারী ভাষা আন্দোলনের মূল উৎসকে বেগবান রাখতে নিজেদের সব রকমের শারীরিক ও মানসিক শান্তিকে দূরে রেখে অবিরাম তমদ্দুন মজলিসের দূর প্রবাসী কর্মী-ভাইদের সুখ-সুবিধার প্রতি সচেষ্ট থাকতেন। গফুর ভাইয়ের মুখে শুনেছি ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ২২ ও ২৩ ফেব্রম্নয়ারিতে পুলিশের ধরপাকড় চলেছিল। সেই রাতে পুলিশ এসেছিল বাড়িতে। রাহেলা খাতুন সাহসিকতার সঙ্গে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশের মোকাবিলা করেন। এই সুযোগে কাসেম ভাই ও গফুর ভাই পেছনের দরজা দিয়ে সরে পড়েন। পুলিশ ঘরে তাদের না পেয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। প্রেম, ভালোবাসা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতা দিয়ে নারীরা ভাষা আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তিকে সচল রেখেছিলেন। উলিস্নখিত নারীরা ছাড়াও আরও কিছু নারীদের কথা জানা যায় আতাউর রহমান খানের সাক্ষাৎকার থেকে। তিনি বলেছেন- একুশে ফেব্রম্নয়ারির দুই-তিন দিন পর তারা কয়েকজন আজিমপুর কলোনিতে গিয়েছিলেন ভাষা আন্দোলনের চাঁদা তুলতে। সেই সময় অনেক মহিলা তাদের প্রিয় সোনার অলংকার যেমন- আংটি, কানের দুল, গলার হারও ছুড়ে দিয়েছিলেন। সেই সময়ে নারীদের ভাষার প্রতি আবেগঘন ভালোবাসা, অনুভূতি দেখে তিনি অভিভূত হয়েছিলেন। সুখের কথা নারীদের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যবোধের প্রথম উন্মেষ ঘটেছিল তখন থেকেই। এই উপলব্ধির মধ্যদিয়ে স্বাধীনতার ভিত তৈরি হয়েছিল। এবং তারই ফলে আমরা লাভ করেছি স্বাধীনতা। লাল-সবুজ পতাকা শোভিত স্বাধীন বাংলাদেশ। তারপরও কিছু বর্তমানের বাংলা ভাষার দৈন্য চেহারা দেখে ভারাক্রান্ত হই এত ত্যাগ, তিতিক্ষা, শহিদ ভাইয়ের রক্তের বদলে যে আন্দোলন সুবর্ণ ফসল পেয়ে আমরা ধন্য হয়েছিলাম। স্বাধীনতা, জাতীয়তা ও সংস্কৃতি রক্ষার তাগিদ অনুভব করেছিলাম। ইদানীং বাংলা ভাষা চর্চায় তা দেখা যাচ্ছে না। ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত সেই মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার, সেস্নাগান সর্বস্ব এখন। সাম্প্রদায়িকতার নামে ২০০ বছর ধরে প্রোথিত অনেক শব্দের আমদানি করার সচেতন প্রয়াস চালাচ্ছে একশ্রেণির স্বঘোষিত গবেষক। পরিভাষা সৃষ্টির প্রয়াস-বাংলা ভাষাকে একধাপ নিচে নামিয়ে দিয়েছে। বাংলা ভাষার শ্রম্নতি মাধুর্য হারিয়ে যাচ্ছে। আজন্ম পরিচিত ভাষার বিবৃতির ছড়াছড়ি, বানানে স্ব-ইচ্ছা প্রণোদিত ই-কার, ঈ-কারের ব্যবহারে ভাষা হয়ে উঠেছে দুর্বোধ্য ও ব্যবহারের অযোগ্য। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে বিকৃতি ঢুকে ভাষা আন্দোলনের সাফল্যকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে দিচ্ছে।