জীবন সংগ্রামে হাল ছাড়েননি রাবেয়া বেগম

প্রকাশ | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

পাবনা প্রতিনিধি
সবার কাছে 'ডিম দাদি' হিসেবে পরিচিত রাবেয়া বেগম
পাবনার রাবেয়া বেগম, সত্তর বছর বয়সেও জীবন সংগ্রামে হাল ছাড়েননি। কারো কাছে হাত পেতে নয়, ডিম বিক্রি করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। ৩০ বছর ধরে ডিম বিক্রি করায় এখন সবার কাছে পরিচিত 'ডিম দাদি' হিসেবে। অদম্য মনোবল নিয়ে তিনি প্রতিদিন ২০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে গ্রাম থেকে ডিম কিনে বিক্রি করেন পৌর সদরে। আর এভাবে ডিম বিক্রির টাকায় কিনেছেন জমি, নির্মাণ করেছেন বসতঘর। দুই সন্তানকে মানুষ করে বিয়ে দিয়েছেন। নিজের পায়ে দাঁড়ানো আর আত্মনির্ভরশীল হওয়ার এক অনন্য উদাহরণ তিনি। আলাপকালে চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের পৈলানপুন গ্রামের রাবেয়া বেগম জানান, খুব অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছিলেন বাবা-মা। স্বামী আলিমুদ্দিন কৃষিকাজ করে যা উপার্জন করতেন তাই দিয়ে সুখেই কাটছিল দিন। বিয়ের বছর খানেকের মাথায় রাবেয়া খাতুন জন্ম দেন একটি কন্যা সন্তানের। তার পাঁচ বছর পর সংসারের খুটিনাটি বিষয় নিয়ে মতের অমিল হওয়ায় স্বামী আলিমুদ্দিন রাবেয়াকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। তখন রাবেয়া খাতুন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সেখান থেকেই শুরু তার জীবনের গল্প। স্বামী ছেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে দিশেহারা হয়ে পড়েন রাবেয়া। গ্রামে ঘুরে ঘুরে শুরু করেন পাউরুটিসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি। এর মাঝে জন্ম হয় পুত্র সন্তানের। দশ বছর এভাবে চলার পর শুরু করেন ডিম বিক্রি। গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রথমে হাঁস-মুরগির ডিম কেনেন, পরে চাটমোহর পৌর সদরে গিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করেন। প্রতিদিন অন্তত ২০ কিলোমিটার রাস্তা খালি পায়ে হেঁটে তিনি ডিম কেনাবেচা করেন। এভাবেই একা সংগ্রাম করে অনেক কষ্টে ছেলেমেয়েকে বড় করে তোলার পর বিয়ে দেন। ৩০ বছর ধরে ডিম বিক্রি করায় রাবেয়া বেগম সবার কাছে এখন পরিচিত 'ডিম দাদি' হিসেবে। কিন্তু এই বয়সেও একমাত্র সন্তান তার দেখভাল না করায়, কারো কাছে হাত না পেতে বয়ে চলেছেন নিজের জীবন তরি। ডিম বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চালানো ও দুই সন্তান মানুষ করার পাশাপাশি পাঁচ শতক জমি কিনে বাড়ি করেছেন। কয়েক শতক জমি লিজও রেখেছেন। রাবেয়া বলেন, আলস্নাহ যেভাবে নেয়, সেভাবে কষ্ট করে চলি। পরের কাছে হাত পাতার আশা আমার কখনও থাকে না। এখন সরকার যদি কিছু দেয়, দিবি। না দিলি আমার কিছু বলার নাই। রাবেয়া বেগমের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ডিম কেনেন চাটমোহর পৌর সদরের দোলবেদীতলার বাসিন্দা রনি রায় ও টুম্পা দাস তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাবেয়া বেগমের কাছ থেকে ডিম কেনেন। বাজার থেকে কিনতেই হয়, তাই ডিম দাদির কাছ থেকে ডিম কেনেন তারা। এই বয়সেও যে নিজের জীবন সংগ্রাম চালানো যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ রাবেয়া। গুনাইগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, রাবেয়া খাতুনের মতো সংগ্রামী নারী বর্তমান সমাজে খুঁজে পাওয়া কঠিন। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে একটা বয়স্কভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে। আগামীতে তাকে একটি ঘর করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।