আজও বন্ধ হয়নি গৃহকমীর্ নিযার্তন

প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

শারমিন শবনব
দিন দিন শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু কমে যাচ্ছে শিক্ষার মান। শিক্ষিত আর সুশিক্ষিত শব্দ দুটির পাথর্ক্য অনুধাবন করতে পারছে না বেশিরভাগ মানুষ। মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত হচ্ছে না। গৃহকমীের্দর মানুষের চোখে না দেখে মূলত পশুর চোখে দেখা হচ্ছে। নানান অজুহাতে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নিযার্তন করা হচ্ছে। এসব নিযার্তনের বেশিরভাগই রয়ে যায় অগোচরে। মাঝে মাঝে থলের বিড়াল বেরিয়ে এলে প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসে। যদিও নিযাির্ততদের সবাই সঠিক বিচার পায় না। আজকাল গৃহকতার্ ও গৃহকত্রীর্রা তাদের নিজেদের সন্তানকে শৈশব থেকে এমনভাবে বেড়ে তোলেন, তাতে তারা দরিদ্র মানুষগুলোকে অনেকটা ঘৃণার চোখে দেখে। মানুষ হিসেবে মযার্দাটুকুও দিতে চায় না। আমরা বরাবরই ভুল পথে হেঁটেছি। এখনো হঁাটছি। আমাদের অধঃপতনগুলো এসব কারণেই ঘটে চলেছে। গৃহকমীের্দর নিয়ে কমর্রত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিস বিলসের পরিসংখ্যান মতে, ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পযর্ন্ত সারাদেশে কমর্স্থলে শারীরিক নিযার্তনের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৪১ গৃহকমীর্। হাসপাতালে যেতে হয়েছে ৪১৩ জনকে। যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ১৮৭ জন। আর ১৪ মাসে নিযাির্তত ১৫৬ জনের ৯০ ভাগই কিশোরী ও শিশু। দিন দিন নিযার্তনের মাত্রা আর নিযাির্ততদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরে তা যেন অতীতের সব রেকডের্ক ছাপিয়ে গেছে। ২০১০ সালে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের করা জরিপের তথ্যানুযায়ী, ওই সময় শুধু রাজধানীতেই গৃহকমীর্র সংখ্যা ছিল ২০ লাখ। এরপর কোনো পরিসংখ্যান করা না হলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বতর্মানে সারা দেশে অন্তত ৪০ লাখ দরিদ্র মানুষ গৃহকমীর্ হিসেবে কমর্রত। উদ্বেগজনক হলেও সত্যি, তাদের মধ্যে অন্তত ৫ লাখ শিশুও রয়েছে। যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গৃহকমীর্র কাজে নিয়োজিত। শিক্ষা মানে শুধু একটা সাটিির্ফকেট অজর্ন নয়। নিজেকে আদশর্ ও প্রকৃত মানুষ করে গড়ে তোলা। পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে এক দৃষ্টিতে দেখার মানসিকতা গড়ে তোলা। সমাজের দরিদ্র, অসহায় মানুষগুলোকে বুকে টেনে নেয়ার মনোবৃত্তি তৈরি করা। অথচ সমাজের বাস্তবচিত্র সম্পূণর্ উলটো। এই উলটো পথ থেকে আমাদের দ্রæত সরে আসতে হবে। নইলে ধ্বংস অনিবাযর্। সেই ধ্বংসলীলার কবল থেকে আমরা কেউ-ই রেহাই পাব না। মূলত গৃহকমীর্রা আমার আপনার মতোই স্বাভাবিক রক্ত মাংসের মানুষ। নেহাৎ পেটের দায়ে তারা অন্যের বাড়িতে ফাইফরমাশ ঘাটে। তারাও হতে পারতো আমাদের মা, বোন, সন্তান। ভাগ্যের অসহায়ত্ব আজ তাদের এমন পরিস্থিতির শিকার করেছে। একবার নিজেকে তাদের জায়গায় দঁাড় করিয়ে যদি ভেবে দেখি আমরা তাহলে সমস্যা অনেকাংশই লাঘব হবে। দেশে অমানবিক কাজের সংখ্যা কমে যাবে। সুশিক্ষিত লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। নিযার্তন শব্দটি লজ্জায় নিজেই মুখ লুকাবে। সুন্দর একটি আগামীর মুখ দেখবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ থাকবে না। বিশ্বের বুকে আমরা মাথা তুলে দঁাড়াব একদিন।