শিরিন বানু মিতিল

বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও নারীনেত্রী

১৯৭১ সালে ২৫ মাচর্ কালরাতে পাক হানাদারদের আক্রমণ শুরু হলে ২৭ মাচর্ পাবনা পুলিশ লাইনে প্রতিরোধ যুদ্ধে সবর্স্তরের মানুষ অংশ নেয়। সেই যুদ্ধে তিনি বীরকন্যা প্রীতিলতাকে অনুসরণ করে পুরুষ বেশে অংশ নেন। পরদিন পাবনা টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ৩৬ জন পাকসেনার সঙ্গে জনতার তুমুল যুদ্ধ হয়, যাতে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী যোদ্ধা। এই যুদ্ধে ৩৬ জন পাকসেনা নিহত এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

সেলিনা মেহজাবিন
শিরিন বানু মিতিল
মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয়, সেই ১৯৭১ সালে পাবনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভানেত্রী ছিলেন শিরিন বানু মিতিল। তার মা সেলিনা বানু বামপন্থী আন্দোলনের প্রথম সারির নেত্রী। নানার বাড়ি ছিল এককালে বামপন্থীদের শক্ত ঘঁাটি। এমনই রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন মিতিল। ১৯৫০ সালের ২ সেপ্টেম্বর পাবনায় খোন্দকার শাহজাহান মোহাম্মদ ও মা সেলিনা বানু দম্পতির ঘরে জন্ম নেন শিরিন বানু। মা পাবনা জেলার ন্যাপ সভানেত্রী এবং ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের এমপি ছিলেন; বাবাও ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে ১৯৫২ সাল পযর্ন্ত কমিউনিস্ট পাটির্র সঙ্গে যুক্ত। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেয়ায় ছোটবেলা থেকেই রাজনীতি সচেতন। শিরিন স্কুলজীবনেই ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পাবনা এডওয়াডর্ কলেজের বাংলা বিভাগের প্রথমবষের্র ছাত্রী ছিলেন। ১৯৭০-১৯৭৩ সাল পযর্ন্ত পাবনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভানেত্রী এবং কিছু সময়ের জন্য পাবনা জেলা মহিলা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদিকাও ছিলেন। ১৯৭১ সালে ২৫ মাচর্ কালরাতে পাক হানাদারদের আক্রমণ শুরু হলে ২৭ মাচর্ পাবনা পুলিশ লাইনে প্রতিরোধ যুদ্ধে সবর্স্তরের মানুষ অংশ নেয়। সেই যুদ্ধে তিনি বীরকন্যা প্রীতিলতাকে অনুসরণ করে পুরুষ বেশে অংশ নেন।পরদিন পাবনা টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ৩৬ জন পাকসেনার সঙ্গে জনতার তুমুল যুদ্ধ হয়, যাতে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী যোদ্ধা। এই যুদ্ধে ৩৬ জন পাকসেনা নিহত এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। ৯ এপ্রিল নগরবাড়িতে যুদ্ধের সময় পাবনার পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধের কন্ট্রোল রুমের পুরো দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এরপর ভারতের স্টেটসম্যান পত্রিকায় তার ছবিসহ পুরুষ সেজে যুদ্ধ করার খবর প্রকাশিত সেই বেশে আর যুদ্ধ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু তাতে তিনি দমেননি, পাবনা শহর পাকিস্তানি সেনারা দখলে নিলে ২০ এপ্রিল তিনি সীমানা পেরিয়ে ভারতে যান। সেখানে বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত নারীদের একমাত্র প্রশিক্ষণ শিবির ‘গোবরা ক্যাম্পে’ যোগ দেন। পরে মেজর জলিলের নেতৃত্বে পরিচালিত ৯ নাম্বার সেক্টরে যোগ দেন। দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ায় পড়তে যান। সেখানকার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভাসিির্ট অব রাশিয়ায় নৃবিজ্ঞান বিষয়ে পড়া শেষে ১৯৮০ সালে দেশে ফেরেন তিনি। এর মধ্যে ১৯৭৪ সালে মাসুদুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শিরিন বানু বেসরকারি সংস্থা পিআরআইপি ট্রাস্টের ‘জেন্ডার অ্যান্ড গভনের্ন্স’ বিষয়ে পরামশর্ক হিসেবে কমর্রত ছিলেন। তিনি চাইল্ড অ্যান্ড মাদার কেয়ার (সিএমসি) নামে একটি সেবাকেন্দ্রের সঙ্গেও বিশেষজ্ঞ হিসেবে যুক্ত ছিলেন। ২০০৫ সালে ভারতীয় অথর্নীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী কমলা ভাসিনের নেতৃত্বে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত সহস্র সংগ্রামী নারীর যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, তাতে বাংলাদেশের ১৬ জনের মধ্যে শিরিন বানুও ছিলেন। শিরিন বানু মিতিল ২০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।