পরিবার যেন না করে অসম্মান

আসলে অভিভাবকরা সবসময় চান একমাত্র তাদের সন্তানই জিপিএ-৫ পাবে যে কোনো কিছুর বিনিময়ে। সেখানে সন্তানের চাওয়া-পাওয়ার কোনো মূল্য থাকে না। একজন সন্তান যখন পড়তে বসে তখন চিন্তা করবেন তার পড়ার প্রতি মনোযোগ আছে কিনা? খেলার সময় তাকে জোর করে পড়তে বসালে তার মন পড়ে থাকবে খেলার দিকে। পড়া হবে কোত্থেকে...

প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

তানিয়া তন্বী
আমাদের দেশে এখনো সেই চিরাচরিত সনাতন প্রথাই চালু রয়ে গেছে। বতর্মান আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এসেও আমরা পারিনি নিজেদের সেভাবে গঠন করতে। আমরা বাসায় কম্পিউটার, উন্নত মানের ল্যাপটপ, মোবাইল, এলইডি টিভি ব্যবহার করি ঠিকই কিন্তু আমাদের মনন-মানসিকতায় সেকেলে ভাবটা স্পষ্ট রয়েই গেছে। সেটা নষ্ট করার কোনো যন্ত্র যদি তৈরি হতো তাহলে আজ এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পায়নি বলে অভিভাবকের কথার খেঁাটায় রুমানা, শ্যামলীর মতোন মেয়েদের আত্মহত্যা করতে হতো না। কেন এই মানসিক নিযার্তন? কোনোদিন কি ভেবে দেখেছেন, আজকে যে কন্যাশিশুটিকে আপনি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেনি বলে মানসিক নিযার্তন করছেন, কদিন বাদে সে চলে যাবে শ্বশুরবাড়ি। যেখানে আপন মা-বাবার কাছে কোনো সান্ত¡নার বাণী পায় না মেয়েরা সেখানে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সেই মেয়ে ভালো থাকবে তা আমরা আশা করি কী করে? নিযার্তন তো শুরু হয় নিজের পরিবার থেকেই। মেয়ে হয়ে জন্মেছে বলে কি খুব বেশি পাপ করেছে? তাহলে তো সেই পাপের অংশীদার আপনারাই (অভিভাবকরা)। আপনারাই তো তাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। অ-আ বণর্মালা পড়তে শিখিয়েছেন। দোষ তো মেয়েটার নয়, দোষ আপনাদের। যেখানে পাসের হার কম দেয়া হয়েছে, সেখানে না হয় মেয়েটার রেজাল্ট মনের মতো হয়নি। তাই বলে তাকে কথায় কথায় অপমান অপদস্ত কেন করা হবে? তারও তো মান-সম্মান আছে। অমুকের মেয়ে জিপিএ-৫ পেতে পারলে তুমি কেন পাওনি? তোমার জন্য আমরা তো কম টাকা খরচ করিনি? সবসময় কোচিং, প্রাইভেট টিউটর দিয়েই রেখেছি। তারপরও কেন রেজাল্ট খারাপ হলো? আসলে অভিভাবকরা সবসময় চান একমাত্র তাদের সন্তানই জিপিএ-৫ পাবে যে কোনো কিছুর বিনিময়ে। সেখানে সন্তানের চাওয়া-পাওয়ার কোনো মূল্য থাকে না। একজন সন্তান যখন পড়তে বসে তখন চিন্তা করবেন তার পড়ার প্রতি মনোযোগ আছে কিনা? খেলার সময় তাকে জোর করে পড়তে বসালে তার মন পড়ে থাকবে খেলার দিকে। পড়া হবে কোত্থেকে? সে এই সময়ে কোন বিষয়টা নিয়ে পড়তে চাচ্ছে? সে চায় ইংরেজি পড়তে আর আপনি বলবেন বাংলা পড়তে। এভাবে আপনার মতামত সবসময় সন্তানের ওপর চাপিয়ে দিতে গিয়েই তো যত বিপত্তি সব সৃষ্টি করা হয়। কেন জোর করা হবে পড়ার জন্য? একটা মেয়ে যখন এইচএসসিতে পড়ে তখন সে অনেক কিছুই বুঝতে শেখে। তাকে পড়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হয় না। কারণ সে বোঝে যে কতটুকু পড়লে কিংবা কীভাবে পড়লে সে ভালো রেজাল্ট করবে। আমরা অনেক সময় দেখি সব লিখে এসেছে তারপরও দুভার্গ্যক্রমে কম নাম্বার পায়। তা কিন্তু ইচ্ছাকৃত নয়। তার জন্য সে তো দায়ী হতে পারে না। আজ যদি সন্তানটি ছেলে হতো তখন কিন্তু অভিভাবকরা কখনো এভাবে নিষ্ঠুর আচরণ করত না। শুধু কন্যাশিশু বলেই তার প্রতি এরকম অবিচার। কিন্তু এভাবে আর কতদিন কন্যাশিশুরা ঘরে-বাইরে নিযাির্তত হবে? অভিভাবকদের এরকম নিষ্ঠুর আচরণের ফলেই দেখা যায় এই বয়সী মেয়েরা শান্তির জন্য কোনো একটা ছেলের সঙ্গে সম্পকের্ জড়িয়ে তার সঙ্গে থাকার জন্য ঘর ছেড়ে চলে যায়। তখন কিন্তু মেয়েরা একবারও ভেবে দেখে না সে ভুল করছে না শুদ্ধ করছে। তারা চায় শুধু মানসিক শান্তি। সেই মানসিক শান্তি পরিবার থেকে পায় না বলেই কন্যাশিশুরা বিপথে পা বাড়িয়ে ফেলে নিজেরই অজান্তে। একদিকে পরিবারের মান-মযার্দা নষ্ট করে অন্যদিকে নিজের জীবনকে করে তোলে বিপযর্স্ত। তাই অভিভাবকরা সচেতন হোন, যতœশীল হোন নিজের কন্যাশিশুটির প্রতি। তাকে মযার্দা দিন। যে মেয়েকে ঘরে মযার্দা দিতে কুণ্ঠিত, সেই মেয়ে বাইরে গিয়ে মযার্দা পাবে সেই আশা করাটা ভুল। তাকে কন্যাশিশু নয়, শুধু সন্তান হিসেবে দেখুন। এভাবে মানসিক নিযার্তন করে কোনো কন্যাশিশুকে বড় করে তুলবেন না। তাকে মানসিক চাপ সৃষ্টি করবেন না কোনো কাজ করার জন্য। সুন্দর আচরণ করবেন দেখবেন সেই আপনার আশার আলো হয়ে জ্বলে উঠবে। কারণ যে মেয়ে আজ আপনার ঘর আলো করে আছে, সেই মেয়েকে কয়দিনই বা আপনার কাছে রাখতে পারবেন? বিয়ে হয়ে গেলে তো মেয়েকে আর কাছে পাবেন না। তখন শত ইচ্ছা করলেও মেয়ে আপনার কাছে থাকতে পারবে না। যতদিন আপনার কাছে আছে ততদিন একটু সম্মানের সহিত ওকে বঁাচতে দিন এবং বঁাচতে শেখান। তাহলে সেই মেয়ে বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করতে পারবে নিজের এবং পরিবারের সম্মান বঁাচানোর জন্য। অভিভাবকরা কন্যাশিশুদের সুসন্তান হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করুন। আর কোনো মেয়ে যেন পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করার জন্য আত্মহত্যা না করে।