গরম ও বষার্য় শিশুর যতœ

গ্রীষ্ম শেষে একটা ভ্যাপসা গরম অতিবাহিত হচ্ছে। এই ভ্যাপসা গরমে সবচেয়ে কষ্টকর সময় কাটে আমাদের শিশুদের। বষার্র ভ্যাপসা গরমের কথা মাথায় রেখেই ফ্যাশন হাউসগুলো সাজিয়েছে নতুন পোশাকে। বষার্য় সাধারণত আমরা হালকা রঙের পোশাক কম পরে থাকি তাই গাঢ় রঙের পোশাক নিবার্চন করে অনেকে...

প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

রহিমা আক্তার মৌ
গরম ও বষার্য় শিশুর যতেœ পরিবারকে একটু বেশিই সচেতন হতে হবে মডেল : ডা. সালমা বিনতে রহমান, ওমেরা ফাতিমা ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল
‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’ শিশুকে সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে প্রয়োজন একটি সুন্দর পরিবারের, আর সুন্দর পরিবার মানেই সচেতন ও দায়িত্বশীল পরিবার। গ্রীষ্ম শেষে একটা ভ্যাপসা গরম অতিবাহিত হচ্ছে। এই ভ্যাপসা গরমে সবচেয়ে কষ্টকর সময় কাটে আমাদের শিশুদের। বষার্র ভ্যাপসা গরমের কথা মাথায় রেখেই ফ্যাশন হাউসগুলো সাজিয়েছে নতুন পোশাকে। বষার্য় সাধারণত আমরা হালকা রঙের পোশাক কম পরে থাকি তাই গাঢ় রঙের পোশাক নিবার্চন করে অনেকে। আবার বলা হয় হালকা রঙের পোশাকে গরম কম, একটা ঠাÐা ঠাÐা আভাস থাকে বলে অনেকে গরম থেকে শিশুকে দূরে থাকতে শিশুর জন্য হালকা সুতি কাপড়ের পোশাক নিবার্চন করেন। এবার হালকার মধ্যে সাদা, চাপা সাদা, হালকা আকাশি কিংবা গোলাপি, হালকা সবুজ, ধূসর, বাদামি হালকা লাল, হলুদ ও নীলের হালকা শেডগুলোকে পছন্দের তালিকায় থাকছে বেশি। প্রিন্টের কাপড়ের ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য ছোট বা মাঝারি ধরনের পোশাক বেশি মানানসই। এই গরমে শিশুর পোশাক নিবার্চনে এলিনা এমদাদ (ফ্যাশন হাউস নিপুণের ডিজাইনার) বলেন, ‘এ সময় শিশুদের পোশাক হওয়া উচিত একদম পাতলা, হাতাকাটা ও ঢিলেঢালা। যাতে শিশুর শরীরে সহজেই বাতাস প্রবেশ করতে পারে। গরমের দিনে অন্তত চারবার পোশাক পরিবতর্ন করা উচিত। খেলাধুলা, ঘুমানো কিংবা বাসায় পরার জন্য আলাদা পোশাক নিবার্চন করা যেতে পারে।’ গরমের দিনে পরিবারগুলোকে সবার আগে খেয়াল রাখতে হয় শিশুর দিকে। শিশুর খাবার থেকে পোশাক, সব হওয়া চাই আরামদায়ক। তাই ঈদেও শিশুর জন্য হালকা-পাতলা কাপড়ের পোশাকই উপযুক্ত পোশাক। যে পোশাকে শিশু ঘামাবে না, দিনে কয়েকবার করে পোশাক চেঞ্জ করে দেয়া যায়, সেভাবেই ঈদের প্রস্তুতি পরিবারগুলোর। মনে রাখতে হবে সৌন্দযের্র কথা ভেবে ভুলেও শিশুকে ভারি বা মোটা কাপড়ের পোশাক দেয়া ঠিক হবে না। শিশুর জন্য সুতি কাপড়ের বিকল্প আসলে কিছুই নেই। সুতি কাপড় বাতাস চলাচলে সক্ষম এবং দ্রæত পানি শোষণ করতে পারে বলেই অধিকাংশ মানুষ পরিবারের ছোট সোনামণির জন্য সুতির পোশাক নিয়ে থাকেন। শিশুরা যেহেতু বেশি ছোটাছুটি করে তাই তাদের ঘামও হয় বেশি। সুতির পাশাপাশি ভয়েল, সুইস ভয়েল, আদ্দি, ভিসকস, মিক্সড ভয়েল, বেক্সি ভয়েলসহ নানারকম সুতি কাপড়ে তৈরি হচ্ছে শিশুদের পোশাকগুলো। এ ছাড়া কটনের সঙ্গে টি-শাটর্ ফেব্রিক দিয়েও তৈরি হচ্ছে পোশাক। বাজারে আছে সুতি, লিনেন ও গেঞ্জি কাপড়ের বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক। পাতলা তঁাত কাপড়ও আরামদায়ক। সুতির ওপরে নেট, সাটিন ইত্যাদি কাপড় ব্যবহার করে পোশাকে জমকালো ভাব আনা হয়েছে। বোতামেও রাখা হয়েছে বিশেষত্ব। ব্যবহার করা হয়েছে ফিতা এবং পমপম। এবার পোশাকের হাতার ছঁাটে গত কয়েকবারের মতোই রাখা হয়েছে বৈচিত্র্য। কোনোটির ঘাড় ছঁাটা আবার কোনটি ঘাড় থেকে কনুই পযর্ন্ত হাতার ওপরের অংশে বোতাম বা ফিতা দিয়ে দেয়া হয়েছে। এই পোশাক গরমে শিশুর জন্য যেমন আরামদায়ক তেমনি ঈদের পোশাকের বিশেষত্বটাও ধরে রাখা যায়। অধ্যাপক শাহমিনা রহমান (বাংলাদেশ গাহর্স্থ্য অথর্নীতি কলেজের বস্ত্রপরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগের সহকারী) বলেন, ‘শিশুদের জন্য পোশাক নিবার্চনে তাদের আরামের দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। বাতাস চলাচল করতে পারে এমন পোশাক বেছে নিন, সে ক্ষেত্রে সুতি সবচেয়ে ভালো।’ জলবায়ুর প্রভাবে ঋতু পরিবতের্নর সঙ্গে অনেক সময় আমাদের পরিবেশের মিল থাকছে না। প্রতিনিয়ত পরিবতর্ন হচ্ছে সেই সঙ্গে প্রকৃতিও বদলায় তার রূপ। এই মেঘ এই বৃষ্টিÑ এ যেন বিশ্ব প্রকৃতির শিশুসুলভ এক লুকোচুরি খেলা। আবহাওয়ার পরিবতের্নর সঙ্গে সঙ্গে পরিবতর্ন আসছে পোশাকেও। আমাদের দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোও এ সময়ে শিশুদের জন্য তৈরি করে ফ্যাশনেবল সব আরামদায়ক পোশাক। গরমে শিশুর নানা সমস্যা ও প্রতিকার গরমে শিশুর বিশেষ যতেœর প্রয়োজন। এ জন্য পরিবারের প্রয়োজন এ সময় শিশুর খাওয়া-দাওয়া, গোসল ও পোশাক নিবার্চনের সময় বিশেষ যতœবান হওয়া। শৈশব ফ্যাশন হাউস শুধু শিশুদের পোশাক তৈরি করে থাকে। বষার্ ও এই গরমে তারা তৈরি করেছে বিভিন্ন ধরনের পোশাক। শৈশবের ডিজাইনার মিচেল লির বলেন, ‘আমরা সব সময়ই বাংলাদেশের আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে কাপড় বেছে নিই। গরমে শিশুদের পোশাকটা যেন আরামদায়ক হয়, তাই আমরা হালকা রঙের সুতি, লিনেন ও নরম গেঞ্জি কাপড়ের পোশাক তৈরি করেছি।’ কোথায় কেমন পোশাক পরবে শিশুÑ এ ব্যাপারে পরামশর্ দিলেন ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশের প্রধান নিবার্হী সৌমিক দাস। তিনি বলেন, ‘গরমে পোশাকটি পরে যেন শিশু স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। বাসার বাইরে ঘুরতে গেলে ছেলে শিশুদের জন্য টি-শাটর্, হাফ হাতা শাটর্, পাতলা জিনস বা গ্যাবাডিের্নর প্যান্ট বেছে নিতে পারেন। মেয়েদের বেলায় সুতি কাপড়ের ফ্রক বা শাটের্র সঙ্গে থ্রি-কোয়াটার্র লেগিংস অথবা নরম জিনস, কুতির্র সঙ্গে ট্রেন্ডি পালাৎজো পরতে পারে অনায়াসেই।’ গ্রীষ্মকালের প্রচÐ গরম সবার জন্য কষ্টকর। বাচ্চারা খুব বেশি স্পশর্কাতর বলে তারা অনেক গরম আবহাওয়ায় সহজে খাপ খাওয়াতে পারে না। তীব্র গরমে শিশু নানারকম স্বাস্থ্য জটিলতার মুখোমুখি হয়। তাই বাবা-মায়ের উচিত সব সময় তাদের যতœ নিয়ে সচেতন থাকা। তবে শিশুদের জন্য যে ধরনের পোশাকই নিবার্চন করা হোক না কেন, তা যেন খুব বেশি অঁাটসঁাট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ‘গত ঈদের মাত্র ২১ দিন আগে আমাদের ঘর আলো করে ওমেরার জন্ম হয়। ছোট্ট বেবির দেখাশোনা যতœ সব মিলিয়ে একটা টেনশান কাজ করেছিল। এখন ওর বয়স একবছর। ঈদের আনন্দ আমাদের অনেকটা। আল্লাহর রহমতে পরিবারের সবার সঙ্গে ওমেরা ঈদ করবে। এখন বষার্র সময় বলে একটু বেশি সচেতন হতে হচ্ছে আমাদের। বৃষ্টি হলেই ঠাÐা, আবার পরক্ষণেই ভ্যাপসা গরম। বৃষ্টি আর গরমকে মাথায় রেখেই ওর জন্য শপিং করেছি। শুধু শপিং নয়, ঈদের এই আনন্দ আয়োজনে অনেক অতিথিদের মধ্যে ওর প্রতি আলাদা যতœ নেয়ার কথাও ভেবে রেখেছি। যেহেতু আমরা দুজনই চাকরিজীবী, তাই ছুটির দিনগুলো একসঙ্গে সবাই মিলেই কাটাবো। কোথাও বের হলে পরিবেশ, স্থান, সময় ভেবেই ওর জন্য অতিরিক্ত পোশাক নিয়ে নেব। গরমে বারবার চেঞ্জ করতে হতে পারে, সে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি ওর খাবারের প্রতি খুবই যতœশীল হতে হবে। ঈদ উপলক্ষে সব বাসায় প্রায় সময় তৈলাক্ত খাবার হবে, সেসব থেকে ওকে দূরে রাখতে হবে। ওর উপযুক্ত খাবার সঙ্গে নিতে হবে। পোশাকের দিকে ওর জন্য সুতি ভয়েলের আরামদায়ক পোশাক নিয়েছি। কিছু জমকালো পোশাক নেয়া হয়েছে, আবহাওয়া বুঝে ঠাÐা পড়লে সেগুলো পরাবো। সব মিলিয়ে ঈদের প্রস্তুতি ভালো।’