বেড়ানো

চিচিং ফঁাক তোজেংমা

নৈঃশব্দের বুনো পরিবেশে একটা সময় পথ হারিয়ে ফেলি। ভুল পথে উঠে যাই উঁচু এক পাহাড়ে। কি আর করা নামতে হবে আবারও তবে বাড়তি পাওনা চ‚ড়া থেকে দেখা চারপাশের অসম্ভব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দযর্। মনের আনন্দে দুপুর পযর্ন্ত হেঁটেই চলছি...

প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

মো. জাভেদ হাকিম
প্রকৃতির রাজা খাগড়াছড়ির দীঘিনালার তোজেংমায় পযর্টকরা ছবি : ‘দে-ছুট’ ভ্রমণ সংঘ
নাম তার তোজেংমা। আর দে-ছুট ভ্রমণ সংঘের পাগলারাÑ প্রকৃতির টানেই ঘর ছাড়তে পছন্দ করে। ঢাকা থেকে রাতের বাসে ছুটি প্রকৃতির রাজা খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা। ভোর সাড়ে ৪টায় পেঁৗছাই। গেস্ট হাউসের রুমে গিয়ে গাইডের অপেক্ষায় কিছুটা সময় চিৎ-কাত হয়ে শুয়ে নিই বিশ্রাম। অতঃপর সকাল ৯টায় রুম থেকে বের হয়ে নাশতা শেষে বাইকে ছুটি আলমগীর টিলা। মাত্র বিশ মিনিটের মধ্যেই পেঁৗছাই। এবার ভরসা দুই পা। সকাল ১০টায় হঁাটা শুরু। উঁচু-নিচু টিলা-পাহাড়-ঝিরি-ঝোপঝাড়, জঙ্গল দিয়ে শুধু হঁাটছি। গাইড নিজেও ঠিকমতো চেনে না। শুধু লোকেশননিভর্র করে এমন নিঝুম-বুনো পাহাড়ি পথে হাইকিং, ট্র্যাকিং সত্যিই অন্যরকম রোমাঞ্চকর অনুভ‚তি। নৈঃশব্দের বুনো পরিবেশে একটা সময় পথ হারিয়ে ফেলি। ভুল পথে উঠে যাই উঁচু এক পাহাড়ে। কি আর করা নামতে হবে আবারও তবে বাড়তি পাওনা চ‚ড়া থেকে দেখা চারপাশের অসম্ভব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দযর্। মনের আনন্দে দুপুর পযর্ন্ত হেঁটেই চলছিÑ যেথায় হারিয়েছিলাম পথ সেথায় এসে এবার ঝিরি পথ ধরি। দুই পাশে গভীর জঙ্গল, সূযের্র রশ্মিও হার মেনেছে। সেই রকম পথেই এগিয়ে যাই। ঝিরির বয়ে যাওয়া পানির তীব্রতাই বলে দেয় আর বেশি দূরে নয় লুকিয়ে থাকা বুনো সৌন্দযর্ তোজেংমা ঝণার্। ঠিক ঠিকই আধা ঘণ্টার মধ্যেই রিমঝিম ছন্দ তোলা পানির শব্দ ভেসে আসে কানে। পানির উৎস ধরে এগুতেই সামনে পড়ে ইয়া উঁচু এক পাহাড়। প্রকৃতির আপন খেয়ালেই পাহাড়টি দুই ভাগ হয়ে সেই কল্পকাহিনীর আলী বাবার চিচিং ফঁাক দুগের্র রূপ ধারণ করে আছে। এসবই প্রকৃতির লীলাখেলা। পিচ্ছিল পাথর টপকিয়ে সুড়ঙ্গর ভিতরে ঢুকতেই চোখ ওঠে কপালে। আরে এ যে সত্যি সত্যি বাস্তবের ধন-দৌলতের দুগর্। ভাগ হয়ে যাওয়া দুই পাহাড়ের দুই পাশ থেকে গড়িয়ে পড়ছে অবিরাম পানির ধারা। আহ্ কি শান্তি। নিজর্নতায় জঙ্গলী পরিবেশে গুহা আকৃতির দুই পাহাড়ের ওপর থেকে দুটো ঝণার্র সফেদ সাদা পানি তীব্রগতিতে ছুটে এসে আলিঙ্গন করে একই বিন্দুতে। পানির ক্ষীপ্ততায় সৃষ্টি হওয়া প্রাকৃতিক বাথটাবে সঁাতার কাটা যাবে অনায়াসে। ঝণার্ দুটোর উচ্চতা খুব বেশি উঁচু নয় তবে তোজেংমার রয়েছে ভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্য আর উদ্ভুত আকৃতির নজর কাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দযর্। ঝণার্র আছড়ে পড়া পানির তীব্রতাও বেশ। আশপাশে নেই কোনো বসতি তাই তোজেংমা নামের আভিধানিক অথর্ কী তা এবারের জন্য আড়ালেই রয়ে গেল। অনিন্দ্য সৌন্দযের্র নয়নাভিরাম প্রকৃতির মোলাটে সাজানো রূপবতী-গুণবতী-লজ্জাবতী পাহাড়ের কোলে নিজেকে লুকিয়ে রাখা অসম্ভব ভালো লাগার তোজেংমার শুভ্র পানিতে প্রায় ঘণ্টাখানেক ভিজে ফেরার পথ ধরি। গুহা মুখে এসে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠি বিদায় তোজেংমা বিদায়। কীভাবে যাবেন : ঢাকার গাবতলী-ফকিরাপুল-সায়েদাবাদ থেকে দিনে-রাতে প্রতিদিন খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালা বিভিন্ন পরিবহনের এসি/ নন এসি বাস ছেড়ে যায়। দীঘিনালা বাজার থেকে মোটরবাইকে আলমগীর টিলা। কোথায় থাকবেন : দীঘিনালা বাজারে বিভিন্ন গেস্টহাউস রয়েছে। ভাড়া সাধ্যের মধ্যেই। খাবেন কোথায়: গেস্টহাউসগুলোর পাশেই বেশকিছু খাবারের হোটেল রয়েছে। খরচপাতি : খরচ জনপ্রতি এক রাত দুই দিনের জন্য ২৫০০/= টাকা হলেই যথেষ্ট। অবশ্য খরচটা নিভর্র করে অনেকটা নিজেদের সামথের্্যর ওপর। গাইড : আলমগীর টিলা থেকে স্থানীয়দের সাহায্য নিন। সারা দিনের জন্য এক হাজার টাকা দিলেই হবে। টপস: তোজেংমা ঝণার্ এখনো লোকচক্ষুর অন্তরালে সুতরাং টিমে অন্তত ছয়-সাতজন হলে ভালো হবে, এর অবস্থান দুগের্ম তাই পযার্প্ত পরিমাণে শুকনো খাবার, স্যালাইন, পানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে নিন, সঙ্গে চটের ব্যাগ রাখুন সেখানেই বজর্্য ফেলুন, মনে রাখবেন তোজেংমার পথ এখনো বুনো আর জংলী সুতরাং আপনার অতি উচ্ছ¡াস যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়।