আসন্ন শীতের প্রস্তুতি

আসছে শীত। এ সময় সব কিছুরই চাই একটু বাড়তি যতœ। নিজের ত্বক, চুল থেকে শুরু করে পোশাক-আশাক এমনকি বাসাবাড়ির দিকেও রাখতে হয় পরিচ্ছন্ন খেয়াল। শীতের আগে কিছু কাজ যদি গুছিয়ে রাখতে পারা যায় তাহলে পুরো শীতকালটা আপনি থাকবেন নিশ্চিন্ত। গুরুত্বপূণর্ এসব শীতের প্রস্তুতি নিয়ে লিখেছেনÑ ফারজানা তাজরিন

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অল্প অল্প করে পাল্টে গেছে প্রকৃতির ধরন। ভোরের হিম হিম ঠাÐা বাতাস জানিয়ে দিচ্ছে শীতের বাতার্ মডেল : সুমাইয়া আক্তার নদী
হেমন্ত এসে গেছে। অল্প অল্প করে হলেও এরই মধ্যে বেশ কিছুটা পাল্টে গেছে প্রকৃতির ধরন। শেষ রাত ও ভোরের হিম হিম ঠাÐা বাতাস জানিয়ে দিচ্ছে পৌষ, মাঘের আগমনী বাতার্। আরও দিন পনেরোর মধ্যে কমে যাবে সূযের্র তেজ আর বেড়ে যাবে কুয়াশার দৌরাত্ম্য। কারণ নভেম্বর মাস ঢুকল বলে! তাই সময় হাতে থাকতে থাকতে সেরে নিন আসন্ন শীতের বেশ কিছু গুরুত্বপূণর্ কাজ। যেগুলো অগ্রিম করে রাখতে পারলে কমে যাবে আপনার ও আপনার পরিবারের অনেকটা কষ্ট। গুছিয়ে রাখুন লেপ-কম্বল-কঁাথা : এখন সকালের দিকে যে রোদ আছে তা লেপ, কম্বলের মতো ভারী জিনিস রোদে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই অনেক দিন ধরে তুলে রাখা লেপ, কম্বল, কঁাথাগুলোর এখনই সময় কড়া রোদে দেয়ার। লেপ, কঁাথা, কম্বল যথেষ্ট পরিমাণে না থাকলে কিনে নিতে হবে এখনই। লেপ রোদে দেয়ার পর এলোমেলো ভঁাজে না রেখে অবশ্যই রোল করে ভঁাজ রাখতে হবে। এ ছাড়া কম্বলের কভার, লেপের কভার এগুলো ধুয়ে রোদে শুকিয়ে তারপর ব্যবহার করতে হবে। কম্বল রোদে দেয়ার সময় আরও একটা গুরুত্বপূণর্ জিনিস মাথায় রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ঝাড়ার সময় এর লোমগুলো যেন উঠে না যায়, সে জন্য নরম ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া ছেঁড়া বা পোকায় কাটা লেপ বা কম্বলজাতীয় কিছু থাকলে সেগুলো সারিয়ে রোদে দেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। গোছানো থাক শীতের পোশাক : সোয়েটার, শাল, চাদর, জ্যাকেট ইত্যাদি পোশাক ভালো করে ধুয়ে অবশ্যই কড়া রোদে শুকিয়ে রাখতে হবে। রোদ থেকে তোলার পর ভালোভাবে ঝেড়ে রাখতে হবে শীত পোশাকগুলো। সোয়েটার, শাল, চাদর এগুলো পুরনো হয়ে গেলে প্রয়োজনে এখনই কিনে নিতে পারেন। ভোরে কিংবা সকালে ঘর থেকে বেরোনোর সময় সুতির পাতলা হালকা ফ্যাশনেবল শালগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো কেনা না থাকলে এখনই কিনে নিতে হবে। শুধু তাই নয়, যেখানে এ পোশাকগুলো রাখা হবে সেখানে এয়ার ফ্রেশনার, ন্যাপথলিন এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকার সংক্রমণ হবে না। আবার পোশাকগুলো থেকে সুন্দর ঘ্রাণ আসবে। অনেক দিন ধরে তুলে রাখা শাল ব্যবহার না করলে হলদেটে দাগ পড়ে যায়। এমন হলে শালটি ড্রাইওয়াশ করিয়ে নিতে হবে। উল বা ফ্লানেলের যে কোনো কাপড় ব্যবহারের আগে ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া বাচ্চাদের পোশাকের ব্যাপারেও এখন থেকেই সতকর্ হতে হবে। কানটুপি, হাত মোজা, পায়ের মোজা এখনই কিনে রাখুন। হঠাৎ করেই শীত নেমে গেলে তারা যাতে কষ্ট না পায়। ছেলেদের কোট, বেøজার ব্যবহারের আগে ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে হবে। রোদ থেকে আনার পর এগুলো হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। মাফলার, কানটুপি, হাত মোজা, পায়ের মোজা সব সময় হাতের নাগালেই রাখতে হবে। আগের বছর কেনা থাকলেও দেখে নিন সেগুলো ছিঁড়ে বা ফুটো হয়ে গেছে কিনা। তাহলে নতুন কিনে নিতে হবে। প্রস্তুত এবার ঘরের কোণও : শীতের সময় ঠাÐার মাত্রাটা পরিমাপ করা আসলেই কঠিন। আজ হালকা শীত তো কাল শৈত্যপ্রবাহ! যেহেতু ঘরের মেঝে এ সময় বরাবরই ঠাÐা থাকে, তাই মেঝেতে ব্যবহার করতে পারেন কাপের্ট, শতরঞ্জি কিংবা ফ্লোর ম্যাট। এ ছাড়া এ সময়টাতে ঘরের জানালায় ব্যবহার করতে পারেন ভারী জানালার পদার্। খুব ভালো করে দেখে নিন ঘরের জানালার কোনো শাসির্ কিংবা কাচ ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে কিনা? নষ্ট হয়ে থাকলে তা এখনই সারিয়ে নিতে হবে। শীতে ব্যবহাযর্ সামগ্রী; যেমন ওয়াটার হিটার, গিজার, ইলেকট্রিক শাওয়ার, রুম হিটারÑ এগুলো ঠিক আছে কিনা এখন থেকেই সেদিকে খেয়াল করতে হবে। আর সব সময় যে জিনিসটা মাথায় রাখতে হবে তা হলো পযার্প্ত আলো-বাতাস। শীতে উষ্ণতা পেতে ঘরে পযার্প্ত রোদ আসার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে ঘর যেমন পরিচ্ছন্ন থাকবে তেমন পরিবারের সবার ঠাÐাজনিত অসুখ-বিসুখও কম হবে। শীতে পারিবারিক স্বাস্থ্য : শীতে বড়দের তেমন একটা অসুখ হতে দেখা না গেলেও একটু অসচেনতায় শিশুদের হতে পারে মারাত্মক ঠাÐাজনিত সমস্যা। তাই হাতের কাছে কফ সিরাপ, সদির্ ও জ্বরের ওষুধের মতো ফাস্ট এইড সঙ্গে রাখুন। এই সিজনে বাচ্চাদের জন্য হামদদর্ ও চমনপ্রাশ নিয়মিত সেবন সদির্র প্রকোপ কমাতে ও শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে এগিয়ে রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া বড়দেরও ত্বক ফাটা পায়ের গোড়ালি ফাটার মতো কমন ঝামেলা প্রায়ই পোহাতে হয়। তাই গোসলের পর অলিভ অয়েল, ভেসলিন ইত্যাদির ব্যবহার শুরু করতে পারেন এখন থেকেই। হাতের কাছে না থাকলে এখনো কিনে রাখুন। বিশেষ করে চাকরিজীবীরা যারা দিনের অনেকটা সময় কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তারা ২৪ আওয়ার মশ্চায়রাইজার যুক্ত লোশন ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে দিনের অনেকটা সময় থাকা যাবে প্রাণবন্ত আর ঝলমলে। শুধু যে গ্রীষ্মকালেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হয় এ ধারণা ভুল। শীতেও ত্বককে সূযের্র ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার দরকার। শীতকালে এসপিএফ ১৫-৩০ সম্পন্ন সানস্ক্রিন ত্বকের জন্য বেশ উপযোগী। শীতে আমরা ত্বককে যত কম সম্ভব পানির সংস্পশের্ আনার চেষ্টা করি। কিন্তু শীতকালে যদি আপনি মুখে পানির ঝাপটা দেন তাহলে ত্বকটা আর শুষ্ক থাকবে না। এতে ত্বকে আদ্রর্তা বজায় থাকবে। শীতে গোসলের সময় অনেকেই গরম পানি ব্যবহার করেন। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে, অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক।