রোমাঞ্চেঘেরা সুন্দরবন

সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সুন্দরবনকে জালের মতো জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভ‚মির লবণাক্ততাসহ ছোট ছোট দ্বীপ...

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

আহনাফ ইশতিয়াক
বেড়ানো
ভ্রমণপিপাসু আমরা অনেকেই। কিন্তু সেই সঙ্গে যদি অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মনোভাব থাকে তাহলে রহস্য আর রোমাঞ্চেঘেরা সুন্দরবন হতে পারে আপনার বেড়ানোর জন্য আদশর্ জায়গা। টাইগারদের খুঁজে খুঁজে একনজর দেখার অভিজ্ঞতাও কম রোমাঞ্চকর নয়। দুভার্গ্যবশতই যদি আপনি বাঘ দেখতে না-ই পান, তবে নৌকার গলুইতে বসে শ্বাসমূলের বনটি দেখতে থাকুন, এক ধরনের স্বপ্নময় ঘোরে কেটে যাবে আপনার সময়। জালের মতো বিছানো শত শত নদী আর খালের বঁাকে বঁাকে সৌন্দযের্র পসরা দেখে প্রাণ জুড়ানো অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন। সুন্দরবন সমুদ্র উপক‚লবতীর্ নোনা পরিবেশের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভ‚মি। এই বন বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গজুড়ে বিস্তৃত। ১০,৬০০ বগির্কলোমিটারজুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বগির্কলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। এমন নৈসগির্ক দৃশ্যাবলি দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূবর্ এশিয়ায় আর দ্বিতীয়টি নেই। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ একই নিরবচ্ছিন্ন ভ‚মিরূপের অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের সূচিতে ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে যথাক্রমে সুন্দরবন ও সুন্দরবন জাতীয় পাকর্ নামে। সুন্দরবনকে জালের মতো জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভ‚মির লবণাক্ততাসহ ছোট ছোট দ্বীপ। মোট বনভ‚মির ৩১.১ শতাংশ, অথার্ৎ ১,৭৫৬ বগির্কলোমিটারজুড়ে রয়েছে নদী, খাল ও খাড়ি এলাকা। বনভ‚মিটিতে রয়েছে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও চিত্রা হরিণ, কুমির কামট ও সাপসহ ৪২ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। রয়েছে মদনটাক ও ধনেশসহ ৩৫ প্রজাতির পাখি। সুন্দরবনে রয়েছে ৪০ ধরনের ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ। বনের অভ্যন্তরের নদ-নদীতে বাস করে প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ। এই ম্যানগ্রোভ বন ১৯৯২ সালের ২১ মে রামসার সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পায়। করমজল : সুন্দরবনের পূবর্ বনবিভাগের চঁাদপাই রেঞ্জের অধীনে করমজল পযর্টনকেন্দ্র। এটা সুন্দরবনের প্রথম স্পট। মংলা থেকে চার ঘণ্টায় ঘুরে আসা যায় অনায়াসেই, কোনো পারমিশনের প্রয়োজন হয় না, ২৩ টাকার প্রবেশ টিকিট সংগ্রহ করলেই যথেষ্ট। টিকিট কেটে ঢোকা মাত্রই দেখতে পাবেন, সুন্দরবনের সুবিশাল মানচিত্র। এখান থেকেই সুন্দরবন সম্পকের্ মোটামুটি ধারণ নিতে পারেন। এখানে রয়েছে বনে হঁাটার জন্য একটি ট্রেইল ও ওয়াচ টাওয়ার, সুন্দরবনের অন্য স্পটগুলোতে হরিণ, কুমির বা বানর দেখতে পান বা না পান করমজলে তাদের দেখবেনই। কারণ তাদের বেঁধে রাখা হয়েছে। এ দৃশ্য অবশ্য যে কোনো চিড়িয়াখানাতেও দেখা যায়। করমজলেই রয়েছে দেশের একমাত্র মিষ্টি পানির কুমির প্রজনন কেন্দ্র। আর এখানেই পাবেন সুন্দরবনের বিখ্যাত মধু। নদীপথে খুলনা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার এবং মংলা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এ পযর্টন কেন্দ্রটির অবস্থান। মংলা থেকে ইঞ্জিন নৌকায় চড়লে করমজলের জেটিতে পেঁৗছানো যাবে এক থেকে দেড় ঘণ্টায়। হিরণ পয়েন্ট : বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত পৃথিবীর সবর্বৃহৎ লোনাবন। সুন্দরবনের দক্ষিণাংশের একটি সংরক্ষিত অভয়ারণ্য। এর আরেক নাম নীলকমল। প্রমত্তা কুঙ্গা নদীর পশ্চিম তীরে, খুলনা রেঞ্জে এর অবস্থান। হিরণ পয়েন্ট, ইউনেস্কো ঘোষিত অন্যতম একটি বিশ্বঐতিহ্য। অভয়ারণ্য হওয়ায় এখানে অনেক বাঘ, হরিণ, বানর, পাখি ও সরীসৃপের নিরাপদ আবাসস্থল। সুন্দরবন এলাকায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার অন্যতম একটি স্থান হলো হিরণ পয়েন্ট। এখানে দেখা পাওয়া যায় চিত্রা হরিণ, বন্য শূকরের; পাখিদের মধ্যে আছে সাদা বুক মাছরাঙা, হলুদ বুক মাছরাঙা, কালোমাথা মাছরাঙা, লাজর্ এগ্রেট, কঁাদা খেঁাচা, ধ্যানী বক প্রভৃতি। এ ছাড়া আছে প্রচুর কঁাকড়ার আবাস। আর আছে রঙ-বেরঙের প্রজাপতি। কটকা-কচিখালী : কচিখালী এলাকার সংলগ্ন সমুদ্র তীরবতীর্ অংশের তৃণভ‚মি জাতীয় বনভ‚মি ১২০ বগর্মাইল এলাকায় কটকা-কচিখালী অভয়ারণ্য অবস্থিত। এই বিস্তীণর্ তৃণভ‚মিতে প্রায় সারা বছর বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী নিভের্য় বিচরণ করে। এখানে বন্যপ্রাণী পযের্বক্ষণ টাওয়ার রয়েছে। দুবলারচর : দুবলার চর সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূবের্ অবস্থিত একটি দ্বীপ, যা চর নামে হিন্দুধমের্র পুণ্যস্নান, রাসমেলা ও হরিণের জন্য বহুল পরিচিত। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মধ্যে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চর। দুবলার চর মূলত জেলে গ্রাম। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ। প্রতিবছর কাতির্ক মাসে (নভেম্বর) হিন্দু ধমার্বলম্বীদের রাসমেলা এবং পুণ্যস্নানের জন্যও দ্বীপটি বিখ্যাত। এটি একটি নয়নাভিরাম দ্বীপ। এখানে চিত্রল হরিণের দলকে ঝঁাকে ঝঁাকে চরতে দেখা যায়।