বিয়ের সাজোনি সাজো...

বিয়ে মানেই আলাদা একটা আনন্দ। বিয়ের দিন ধাযর্ হওয়ার পর থেকেই বর-কনের সাজ-পোশাক ও রূপচচার্ কী হবে, এই নিয়ে আলোচনার ধুম পড়ে যায়। প্রত্যেক বিয়েতে মূল আকষর্ণ হলো কনের সাজ। আর প্রতি বছরই কনের সাজে যোগ হয় ভিন্ন মাত্রা। ট্রেন্ডি, ফিউশন ও ট্রাডিশনসহ বিভিন্ন সাজে এ সময়ের কনেদের আগ্রহ বাড়ছে। বিয়ের একেক অনুষ্ঠানে একেক লুক দিতেই সাজের এই ভিন্নতা। আজকাল বিয়েতে রূপচচার্র ক্ষেত্রে কনের চেয়ে বরও পিছিয়ে নেই। সেই সঙ্গে কম গুরুত্বপূণর্ নয় বরের পোশাকও। উৎসবের এ আয়োজন নিয়ে লিখেছেনÑ সোরিয়া রওনাক

প্রকাশ | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রং অনুযায়ী সাজও ভিন্ন হয়ে থাকে মডেল : লিয়ানা লিয়া
পুরোদমে চলছে বিয়ের মৌসুম। সাধারণত শীত মৌসুমেই বেশি বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এ সময় স্বস্তিকর পরিবেশে কাজের সুযোগ থাকে বলে সবারই আগ্রহ থাকে। প্রত্যেক বিয়েতে মূল আকষর্ণ হলো কনে ও বরের সাজ। তাদের সাজের ভিন্নতা নিয়েই আজকের আয়োজন। কনের সাজ বিয়েতে সবচেয়ে বেশি উৎসুক দৃষ্টি থাকে কনের সাজ নিয়ে। বিয়ের শাড়ি গয়নার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কনের সাজ কেমন হলো এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার যেন শেষ নেই। একটা সময় ছিল যখন কনের সাজ বাড়িতেই সম্পন্ন হতো। কালের আবহে পাল্টে গেছে দিন, পাল্টে গেছে ক্ষণ। এখন ঘরে বসে কনের সাজের দিন আর নেই। অপরূপ কনের সাজ তুলে ধরতে সৃষ্টি হয়েছে বিউটি সেলুনের। যারা রীতিমতো গবেষণা করে কনেকে সাজিয়ে থাকে। শুধু তাই নয়Ñ একেক অনুষ্ঠানের সাজ পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর একেক রকম হয়ে থাকে। অথার্ৎ গায়ে হলুদ, বিয়ে এবং বৌভাতের সাজ একেক স্টাইলের হয়ে থাকে। কোনোটার সঙ্গে কোনোটার মিল নেই। আর মিল থাকার কথাও নয়। সঙ্গত কারণেই তিনটি উৎসবের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন রকমের। মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। আর এ সচেতনতার প্রভাব পড়েছে বিয়ে-শাদিতে। যে কারণে এখন আকদের মতো অনুষ্ঠানে কনে বিউটি সেলুনে এসে সেজে যায়। এটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক দিক। হলুদের সাজ আর বিয়ের সাজেই মেয়েদের আগ্রহ থাকে বেশি। হলুদের সাজে এক ধরনের ফ্লাওয়ারিশ ভাব লক্ষ্য করা যায়। অথার্ৎ হলুদের প্রতিটি পদক্ষেপে ফুলের প্রাধান্য বিদ্যমান। এ কারণেই হলুদের সাজে ফুলের প্রভাব লক্ষণীয়। হলুদে কনেকে সাজানো হয় ফুলের গহনায়। আর ফুলের গহনা কী রঙের তার ওপর নিভর্র করে হলুদের সাজ। সেই সঙ্গে শাড়ির রং তো রয়েছেই। কেউ বাসন্তি কিংবা গাঢ় হলুদ রঙের শাড়ি কিংবা হালকা হলুদ রঙের শাড়ি পরে থাকে। যে কারণে রং অনুযায়ী সাজও ভিন্ন হয়ে থাকে। হলুদে চোখের সাজ বলতে একটু লাইনার কিংবা কাজল টেনে দেয়া। পাপড়িতে ফ্লাওয়ার বেজ হালকা শেড। প্রথাগত বিয়ের সাজের বাইরে এখন সাজানো হয় কনেকে। বিশেষ করে থিম বেজ সাজ। যেমন পিকক কিংবা ফেয়ারি সাজ। পিকক থিম বেজ বলতে স্টেজ থেকে শুরু করে বর-কনের বসার জায়গা পযর্ন্ত সবকিছুতেই থাকছে ময়ূরের সাজ। আর এর ওপর নিভর্র করেই সাজানো হয় কনেকে। শাড়ি গহনা এবং স্টেজ সবকিছুর বণর্না দেয়া থাকলে সাজটা হয় পারফেক্ট। সহজেই মানিয়ে যায় এবং দ্রæত দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। লুকটা হয়ে থাকে একদম ডিফারেন্ট। তবে এসব বিষয় না জানা থাকলে ট্রেডিশনাল মেকআপ অথবা শাড়ি গহনার ওপর বেজ করে মেকআপ করা হয়ে থাকে। থিম বেজ ছাড়া কেউ কেউ বিয়েতে মডানর্ লুক ডিমান্ড করে। তখন সেভাবেই সাজানো হয় কনেকে। এটা সম্পূণর্ভাবে নিভর্র করে কনের চাহিদার ওপর। বিয়ে-শাদির আনুষ্ঠানিকতায় সবচেয়ে সুন্দর সাজ হয়ে থাকে বৌভাতে। কারণ বৌভাতে শাড়ি কিংবা গহনার রঙের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না। যে কারণে সাজটাও হয় ডিফারেন্ট। এ পবের্ বর এবং কনে উভয়ই বেশ রিলাক্স মুডে থাকে। যে কারণে সাজের আবহটা বজায় থাকে। এ কারণেই পুরো অনুষ্ঠানেই এক ধরনের রিফ্রেশমেন্ট কাজ করে। বিয়ে এবং বৌভাতে চুলের সাজে বড় রকমের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। চোখের শেডে ভারী কাজ বেশ মানিয়ে যায়। বরের সাজ আদিকাল থেকেই বরের বিয়ের পোশাক হিসেবে শেরওয়ানির কোনো জুড়ি নেই। নবাবী নাগরা পায়ে, বাহারি পাগড়ি মাথায় দিয়ে রাজকীয় শেরওয়ানি গায়ে সাজবে বর রাজপুত্রের বেশে। এটাই আমাদের দেশের ট্রেডিশন। হাল ফ্যাশনের যুগে বরের শেরওয়ানি কনের পোশাকের সঙ্গে রীতিমতো মিল রেখে তৈরি হয়। বেনারসি, জামদানি, সিল্ক ধুপিয়ান ধরনের কাপড় দিয়েই বরের পোশাক তৈরি করা হয়। দিনের জন্য হালকা কালার আর রাতের জন্য ডাকর্ কালার হলে ভালো হয়। এখনকার শেরওয়ানিতে বডি ফিটিং কাট বেশি চলছে। আর গলায় হাই নেক ও ভি শেপ এবং লম্বার ক্ষেত্রে লং কাটটাই বেশি চলছে। পায়জামার ক্ষেত্রে চুড়িদার বা সোজা ছঁাটের পায়জামা চলছে। শেরওয়ানিতে খুব ভারী কাজ না করে ছিমছাম ডিজাইনেও আভিজাত্য ফুটে ওঠে। শেরওয়ানির কাজে হ্যান্ড অ্যামব্রয়ডারি, কারচুপি, মেশিন অ্যামব্রয়ডারি মিক্সড থাকে। শেরওয়ানিতে জমকালো ভাব ছেড়ে ক্যাজুয়াল ঢঙের চাহিদা বাড়ছে। লম্বা শেরওয়ানির পাশাপাশি এখন সেমি লং শেরওয়ানিও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অফহোয়াইট, মেরুন, পাপের্ল, ব্রাউন, হালকা সোনালি, নীল, সবুজ এমনকি কালো রঙের শেরওয়ানিও এখন নজর কাড়ছে। নকশার জন্য শুধু কারচুপি নয়, শেরওয়ানিতে ঠঁাই পেয়েছে জরি, চুমকি, পুঁতি, কলকা, নকশাদার কারচুপি আর পাথরের কাজ। শুধু গলা ও হাতেই নান্দনিক কাজ এখন ট্রেন্ড। শেরওয়ানির সঙ্গে এখন ম্যাচিং করা জরির ওড়না নিয়ে থাকেন বরেরা। পাগড়ি কেনার বদলে তৈরি করে নিলেও তা অনেক বৈচিত্র্যময় হতে পারে। এ ছাড়া বরের পোশাক বিক্রি করে এমন যে কোনো দোকান থেকে শেরওয়ানির সঙ্গে মিলিয়ে পাগড়ি নিতে পারেন। ছেলেদের নাগরা, স্যান্ডেল, জুতা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে বাটা, অ্যাপেক্স, লিবাটির্, পোলো এ ছাড়া দেশীয় অনেক শোরুমে পেয়ে যাবেন বিয়ের জুতো। আসলে, বিয়েটা যেমনই হোক না কেন, বর-কনের বিশ্বাস আর আস্থার সম্পকর্টাই এখানে বেশি ডিমান্ড করে। সেই সঙ্গে নতুন পরিবেশে নতুন পরিবার আর সবার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার বড় একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে যেতে বর-কনে আবিষ্কার করে ঝলমলে সুন্দর একটি জীবন।