বেড়ানো

বৌদ্ধবিহারে একদিন

পাহাড়পুর বিহারের অবস্থান নওগঁা জেলাতে হলেও ঢাকা থেকে যারা যাবেন তাদের জন্য যাতায়াতের সুবিধা বেশি হবে জয়পুরহাট জেলা সদর হতে

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম
হুট করেই সিদ্ধান্ত নিই বন্ধুর নতুন কেনা গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াবো জেলা থেকে জেলা। যেই চিন্তা সেই কাজ। ফোন লাগাই জয়পুরহাট। আমন্ত্রণ মিলে আরেক বন্ধুর। যাকে বলে গায়ে পড়ে দাওয়াত নেয়া। অবশ্য অনেকে আবার দিলেও নেয় না। ব্রট মাইন্ড দাদন মুন্সী বলে কথা। যথারীতি ভোর চারটায় গাড়ি স্টাটর্। ড্রাইভারসহ পঁাচজন। গাড়ির নাম যেমন এলিয়ন কামও সেই রকম। যেই বনে বাঘ নেই সেই বনে শেয়ালও রাজা। সেই সুযোগে ফঁাকা সড়কে গাড়ি ছুটে তীব্রগতিতে। হেসে-খেলে যাওয়ার পথে জেলায়-জেলায় চা-পানের অজুহাতে ব্রেক দিয়ে, বিভিন্ন দোকানির মজাদার খাবার চেখে দুপুর একটার মধ্যেই পেঁৗছায় সবুজের মাঝ দিয়ে ছুটে যাওয়া গাড়ি জয়পুরহাট জেলা সদরে। বাড়ির সামনে আসার পরেও বন্ধুর দেখা নেই। হালকা-পাতলা ভাবতে ভাবতেই পিছন দিয়া দোস্তদার এসে হাজির। প্রথম দেখায় সামান্য কুশলাদি, সঙ্গীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া এর পর কী রকম আবেগ-কতটা উচ্ছ¡াস এই দুয়ের মিশ্রণ আমাদের মধ্যে কেমন পরিমাণ এখনো বিদ্যমান তা কষতে কষতে ঢুকি তার ফ্ল্যাটে। হিসাবের খাতায় চোখের আড়ালে থেকে বন্ধুর মহব্বত বেড়েছে বৈ কমেনি। কাপড়-চোপড় ছেড়ে, চলে ফেলে আসা দিনের গল্প-গুজব। ঘণ্টাখানেক পর ভিতর থেকে ডাক আসে ডাইনিং-এ বসার। অতঃপর মিসেস সুরভি ম্যামের মুচকি হাসিমাখা আপ্যায়ন। ভাবির নাম যেমন সুরভি ঠিক তেমনি তার হাতের রান্নাতেও সৌরভ ছড়ায়। নানান পদের মজাদার সব খাবার খেয়ে ভাতিজা সৌহাদের্র ভরাট কণ্ঠে পুরনো দিনের গান শুনে ছুটি নওগঁার পাহাড়পুর বিহারের পথে। বিহারের অবস্থান নওগঁা জেলা হলেও জয়পুরহাট সদরের পাশে বদলগাছি উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক প্রতœতাত্তি¡ক নিদশর্ন পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। প্রাইভেট কারে অল্প সময়ের মধ্যেই পেঁৗছে যাই বিহার প্রান্তর। ইতিহাসের সাক্ষী পাল রাজবংশের শৌযর্-বীযর্ বহনকারী পাহাড়পুর বিহার। বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তভুর্ক্ত এই বিহারের আরেক নাম সোমপুর মহাবিহার। এর ঐতিহাসিক ও প্রত্মতাত্তি¡ক গুরুত্ব অপরিসীম। যা পালবংশের কয়েক শতাব্দীর আথর্-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। বিশাল আয়তনের এই স্থাপনার চতুদির্ক ভিক্ষু কক্ষ বিস্তৃৃত প্রবেশ পথ। নিবেদন স্তূপ, ছোট ছোট মন্দির ও অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদশর্ন ছড়িয়ে রয়েছে। সুউচ্চ একটি কেন্দ্রীয় মন্দির রয়েছে। মন্দিরটির দৈঘর্্য উত্তর-দক্ষিণে ১১২.৪০ মিটার এবং প্রস্থ পূবর্-পশ্চিমে ৯৫.৭৮ মিটার। মন্দিরে দেয়ালের বহিভার্গ অলংকৃত ইট, কারুকাযর্ময় কানির্শ ও পোড়ামাটির ফলক দিয়ে অলংকৃত করা হয়েছে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ধ্বংসাবশেষ হিমালয়ের দক্ষিণে সবর্বৃহৎ বৌদ্ধবিহারের পরিচয় বহন করে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের প্রকৃত নাম ছিল সোমপুর বিহার। এ বিহার পালবংশীয় দ্বিতীয় রাজা ধমর্পাল কতৃর্ক ৭৭০-৮১০ খ্রি. নিমির্ত। বিহার কম্পাউন্ডে বতর্মানে একটা জাদুঘর রয়েছে। বিশাল আয়তনের পুরো বিহারজুড়ে রয়েছে সবুজের সমারোহ। নানান ফুলের বাগান, পাতাবাহার গাছগুলোকে দক্ষ হাতে শৈল্পিক রূপ দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে একটি সুন্দর বিকেল কাটিয়ে দেয়া যাবে বেশ আয়েশি ঢঙে। এরপর সন্ধ্যায় চলে যাই দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর। চোখের সামনেই দেখি অনেক কিছু। অনিয়মই যেখানে নিয়মের মাপকাঠি সেখানে নিয়মের বাণী শোনাবে এমন সাধ্য কার আছে শুনি? তাই বেশিক্ষণ না থেকে মানে মানে কেটে পড়ি। পরের দিন সকালে সদর রোডে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের স্মরণ ও জেলার শেষ সীমানায় নান্দাইলের দীঘি ঘুরে চলে যাই বগুড়ার পথে। আজ এই পযর্ন্তই। ইনশাআল্লাহ্ এর পরে হবে বগুড়ার মহাস্থান গড়ের গল্প। তথ্য : পাহাড়পুর বিহারে প্রবেশ ফি দেশি পযর্টকদের জন্য ২০/-টাকা এবং বিদেশিদের জন্য ২০০/-টাকা জনপ্রতি। যোগাযোগ : পাহাড়পুর বিহারের অবস্থান নওগঁা জেলাতে হলেও ঢাকা থেকে যারা যাবেন তাদের জন্য যাতায়াতের সুবিধা বেশি হবে জয়পুরহাট জেলা সদর হতে। ঢাকার গাবতলী বাস টামির্নাল হলে বিভিন্ন পরিবহনের বাস দিনে-রাতে জয়পুর হাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এসি নন এসি দুই ধরনের বাস সাভির্স রয়েছে। ভাড়া ৪৫০/= টাকা হতে ৮০০/=টাকা পযর্ন্ত। শহর থেকে অটোতে সোমপুর বিহার, জনপ্রতি ভাড়া ৩০/=টাকা থাকা-খাওয়া : শহরের পূবর্বাজার ও স্টেশন রোডে বেশ কিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল ও খাবার রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ভাড়া নাগালের মধ্যেই। আমি শুধু ধারণা দিলাম মাত্র বাকিটা আপনি আপনার সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী সেরে নেবেন।