বেড়ানো

নৈসর্গিক লোভাছড়ায়

লোভাছড়া মূলত একটি নদী। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্তঘেঁষা খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে চলছে অপূর্ব স্বচ্ছধারার এ লোভাছড়া। সবুজ পাহাড়, নীলাকাশ ও স্বচ্ছ পানি নিয়ে ভিন্নমাত্রার এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে লোভাছড়ায় ও নদীর চারদিকে...

প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

আবু আফজাল মোহা. সালেহ
পাহাড়, মেঘ আর স্বচ্ছ নদীর পানির সঙ্গে নীল আকাশের মিতালি। স্রোতের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। স্বচ্ছ নীলাকাশে সাদা বক আর বিভিন্ন পাখির ওড়াউড়ি। আর মাঝে-মধ্যে মাঝির কণ্ঠে মুর্শিদি বা সিলেটের আঞ্চলিক গান। দারুণ পরিবেশ সৃষ্টি হয় শীতের লোভাছড়ায়। সিলেটের কানাইঘাট থেকে সুরমার বুক চিরে লোভারমুখ বা ভারত সীমান্তের জিরোপয়েন্টে যেতে নৌকায় ঢেউয়ের নাচুনির তালে তালে দুঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন লোভাছড়া চাবাগানের কাছের জিরোপয়েন্টের পাথর কোয়ারির কাছে। কানাইঘাট লঞ্চঘাট থেকে লোভারমুখ বা পাথর কোয়ারি পর্যন্ত নৌকা চলাচল করে নিয়মিত। কেউ ইচ্ছে করলে নৌকা রিজার্ভ করতে পারেন নৈসর্গিক লোভাছড়া যাওয়ার জন্য। লোভাছড়া মূলত একটি নদী। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্তঘেঁষা খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে চলছে অপূর্ব স্বচ্ছধারার এ লোভাছড়া। সবুজ পাহাড়, নীলাকাশ ও স্বচ্ছ পানি নিয়ে ভিন্নমাত্রার এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে লোভাছড়ায় ও নদীর চারদিকে। নীলাকাশে বক আর বিভিন্ন পাখির ওড়াউড়ি, জেলেদের মাছধরা ও দুকূলজুড়ে কৃষকের কর্মব্যস্ততা, কিশোর-কিশোরী আর খাসিয়া রমণীদের জলক্রীড়ায় মাতিয়ে তোলা অপূর্ব পরিবেশের মায়াজালে বারবার কাছে টানবে লোভাছড়া ভ্রমণ। শীতের নীলাকাশের ক্ষণে ক্ষণে রূপ পাল্টিয়ে চোখ ঝলসিয়ে দেবে। চাবাগানের কাছে পোষা হরিণ ও হাতির চলাচল আর সকালের বনমোরগের ডাক ও একটু দূরের সবুজ খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় ও পাথর উত্তোলনের কার্যক্রমে মোহনীয় পরিবেশ মাতাল করছে লোভাছড়া চাবাগান সংলগ্ন অনুপম দৃশ্য। চাবাগান আর দুকূলজুড়ে আবাদের সবুজ পরিবেশ আর নিরিবিলির মধ্যে স্নিগ্ধ বাতাস ছাড়াও লোভাছড়ার ব্রিটিশ আমলের (১৯২৫ খ্রি.) ঝুলন্ত ব্রিজ ও প্রাকৃতিক ঝরনা, খাল-লেক পরিবেশকে নান্দনিকতা দিয়েছে। ঝুলন্ত ব্রিজকে স্থানীয়রা 'লটকনির পুল' বলে অভিহিত করে থাকেন। বলে রাখি লোভাছড়া চাবাগান হচ্ছে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম। বর্ষাকালের সবুজ চাবাগান আর পাহাড় সবুজের সমারোহ হয়। আর শীতকালে পাহাড় ও কুয়াশায় ফেনিল দৃশ্য অপূর্ব করে তোলে সিলেটের লক্ষ্ণীপ্রসাদ ইউনিয়নের লোভাছড়া। নদীর নামেই লোভাছড়া। এখানকার খাসিয়াপুঞ্জি বাড়তি খোরাক দেবেই। আর রাজা-রানীর পুরাকীর্তি, আউলিয়া মীরাপিং শাহর মাজার আর পাথর কোয়ারি দেখতে লোভাছড়া ডাকছে আমার। নান্দনিক দৃশ্য দেখতে দেখতে, নৌকার ঢেউয়ের তালে তালে রোদের কষ্ট ভুলে যাবে যে কেউ। নৌকায় যেতে যেতে যে দৃশ্য চোখে পড়ে তা দেখে চোখ ফেরানো প্রায় অসম্ভব। পাহাড়ের সবুজ আর স্বচ্ছ পানি যে কাউকেই মুহূর্তেই বানিয়ে দেবে প্রকৃতিপ্রেমী। আর হাতের ক্যামেরা স্মৃতিকে ধরে রাখবে আর পরবর্তীতে নস্টালজিয়ায় ভোগাবে নিশ্চয়ই। কীভাবে যেতে হবে : প্রথমে সিলেটে আসতে হবে। বাস-ট্রেন বা বিমানপথে সিলেটে যাওয়া যায়। সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট যেতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকেও সিলেটে যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। ভাড়া ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা। এ ছাড়া নন এসি বাস সিলেটে যায়। ভাড়া ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। ভাড়া শ্রেণিভেদে দেড়শ থেকে ১ হাজার ১৮ টাকা। এরপর জাফলং রোডে যাত্রা শুরু করে মাইক্রো বা বাস যাবে কানাইঘাট বাজার পর্যন্ত। সিলেট শহর থেকে কানাইঘাট সদরে বাসভাড়া সর্বোচ্চ ৬০ টাকা এবং সিএনজি-অটোরিকশা ভাড়া সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। রিজার্ভ সিএনজি ৫০০-৭০০ টাকা হবে। তিন পথেই সিএনজিযোগে যাওয়া যাবে কানাইঘাটে। লঞ্চঘাট থেকে যেতে হবে নৌকায় করে। জনপ্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা নৌকা ভাড়া লাগবে। এরপর জাফলং রোডে যাত্রা শুরু করে মাইক্রো বা বাস যাবে কানাইঘাট বাজার পর্যন্ত। সিলেট শহর থেকে কানাইঘাট সদরে বাসভাড়া সর্বোচ্চ ৬০ টাকা এবং সিএনজি-অটোরিকশা ভাড়া সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। রিজার্ভ সিএনজি ৫০০-৭০০ টাকা হবে। তিন পথেই সিএনজিযোগে যাওয়া যাবে কানাইঘাটে। লঞ্চঘাট থেকে যেতে হবে নৌকায় করে। জনপ্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা নৌকা ভাড়া লাগবে। থাকা ও খাওয়া : থাকা ও খাওয়ার জন্য কানাইঘাটে ব্যবস্থা আছে। আয়েশী ও ইচ্ছেমতো থাকা ও খাওয়ার জন্য সিলেটে অনেক ব্যবস্থা আছে। এখানকার পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট বা পাশের কয়েকটি রেস্টুরেন্টে ভর্তা বা ঘরোয়া পরিবেশের আয়োজন পর্যটকদের সন্তুষ্টি দিতে সক্ষম। সিলেটের বিভিন্ন মান-দামের হোটেল বেছে নিতে পারে যে কেউ।