বৈশাখী সাজ বৈশাখী সজ্জা

বৈশাখ হলো সাম্প্রদায়িকতাবিহীন একটি উৎসব। এটি বাঙালির একমাত্র প্রাণের উৎসব যেখানে ধর্ম, বর্ণ ভেদাভেদ ছাড়াই সবাই একসঙ্গে জড়ো হয় নতুন একটি বছর বরণ করে নিতে। আর এই দিন বরণ করতে সাদা-লাল রং-ই বেছে নিয়ে থাকে সবাই। বাংলা নববর্ষ স্বাগত জানাতে প্রাণের এই মেলায় লাল-সাদার প্রাধান্য দিয়ে চলে সাজের পালা। ভিড় জমে ছোট-বড় সব শপিং সেন্টারগুলোতেই। পান্তা ইলিশ, লাল-সাদা শাড়ি ও পাঞ্জাবিতে সবাই নিজেকে নতুন করে সাজিয়ে তোলে। শাড়ি আর পছন্দের পোশাকের সঙ্গে নিজেকে আরও সুন্দর করে তুলতে কিছুটা সাজগোজ তো চাই। প্রাণের উৎসব বৈশাখ নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন তাই বৈশাখী সাজ আর বৈশাখী সজ্জা। লিখেছেন সোরিয়া রওনক

প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বৈশাখী সাজ নতুন বাংলা বছরের প্রথম দিনে চাই মনের মতো সাজ আর মাথায় গোঁজা বেলিফুলের মালা। তীব্র গরম আর ঘামের কথা ভেবে অনেকেই চিন্তিত থাকেন এই দিনের সাজপোশাক নিয়ে। কারণ সাজার পর যদি ঘেমে গিয়ে মেকআপ নষ্ট হয়ে যায় তা হলে উৎসবের আনন্দ পুরোটাই মাটি। তাই এই দিনের সাজ হওয়া চাই হালকা। তা ছাড়া বৈশাখের দিনের এবং সন্ধ্যার মেকআপ হবে ভিন্ন। এ উৎসবের সাজ-পোশাকে থাকে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া। সকালে রোদ থাকায় সাজটা হতে হবে স্নিগ্ধ। গাঢ় মেকআপ এ সময় একেবারেই বেমানান। আর গরমের কারণে সাজ হতে হবে ওয়াটার প্রম্নফ। যাতে ঘামে সাজ নষ্ট না হয়ে যায়। দিনের সাজের ক্ষেত্রে হালকা মেকআপ বেছে নেয়া যেতে পারে। মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে চাইলে বরফ ঘষে নেয়া যেতে পারে। এরপর অবশ্যই সানস্ক্রিন মেখে নিতে হবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে অল্প পরিমাণ ম্যাট ফাউন্ডেশন নিয়ে পুরো মুখে ভালোভাবে বেস্নন্ড করে নিন। এর ওপরে সানস্ক্রিনযুক্ত ফেস পাউডার দিয়ে নিতে হবে, এতে ফাউন্ডেশন ভালোভাবে সেট হবে। পোশাকের রঙের সঙ্গে মানিয়ে আইশ্যাডো লাগিয়ে নিতে হবে। দিনের সাজে ম্যাট শ্যাডো ব্যবহার করলে ভালো দেখাবে। আর লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শ্যাডোর প্রতিটি শেড ভালোভাবে বেস্নন্ড হয়ে যায়। এই দিনে কিছুটা টেনে মোটা করে কাজল বা আইলাইনার ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে পোশাকের রঙের সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন রঙের কাজল পেন্সিল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চাইলে বিভিন্ন রঙের কাজলও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে কাজলটি যেন বেমানান না লাগে। সবশেষে হালকা করে মাশকারা দিয়ে চোখের সাজ শেষ করতে হবে। আর অবশ্যই ওয়াটার প্রম্নফ মাশকারা ও আইলাইনার ব্যবহার করতে হবে। লিপস্টিক লাগানোর আগে প্রথমেই একই রঙের লিপ লাইনার দিয়ে ঠোঁট সুন্দর করে এঁকে নিয়ে লিপস্টিক দিয়ে ভরাট করে নিতে হবে। চুলের স্টাইল নির্ভর করবে পোশাকের ওপর। শাড়ির সঙ্গে পুরো চুল একপাশে রেখে খোঁপা করে তাতে বেশি করে বেলিফুলের মালা জড়িয়ে নেয়া যেতে পারে। যাদের লম্বা চুল তারা লম্বা বেণি করে বেলিফুলের মালা পেঁচিয়ে নিতে পারে। যাদের চুল ছোট তারা ক্লিপ দিয়ে চুল আটকিয়ে ফুল লাগাতে পারেন। সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে চুল স্ট্রেইট বা কার্ল করে ছেড়ে রাখা যেতে পারে। আবার চাইলে খোঁপা, বেণি বা পনিটেইল ইত্যাদি স্টাইলও করা যেতে পারে। সঙ্গে যোগ করা যায় ফুলের মালা। কপালে বড় টিপ, হাতভর্তি কাচের চুড়ি, গলায় পুঁতির মালা, অক্সিডাইজ, মুক্তার গয়না আর পায়ে হালকা পায়েল পরলেই বৈশাখী সাজ পূর্ণতা পাবে। সন্ধ্যার মেকআপটাও হওয়া উচিত ভিন্ন। সন্ধ্যায় মেকআপের শুরুতে মুখে একটু বরফ ঘষে নিতে হবে। ফাউন্ডেশন দিয়ে মুখ, গলা, ঘাড়ে ভালো করে বেস্নন্ড করে মিশিয়ে নিতে হবে। মুখের বাড়তি খুঁত ঢাকতে কনসিলার ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপর ফেস পাউডার দিয়ে ফাউন্ডেশন বসিয়ে নিতে হবে। পোশাকের রঙের সঙ্গে মানিয়ে চোখে আইশ্যাডো লাগাতে হবে। রাতের সাজে চোখে গাঢ় মেকআপ বেশি মানানসই। পোশাকের রঙে বা সম্পূর্ণ ভিন্ন রং কন্ট্রাস্ট আইশ্যাডোর সঙ্গে নীল, সবুজ, সোনালি বা রুপালি যে কোনো রঙের আইলাইনার ব্যবহার করা যেতে পারে। পাপড়িতে ঘন করে কয়েক কোট মাশকারা লাগিয়ে নেয়া যাবে। চোখের মেকআপ গাঢ় হলে ন্যাচারাল, বাদামি, পিচ অথবা গোলাপি রঙের লিপস্টিক লাগালে ভালো লাগবে। গালের চিক বোনের ওপর কিছুটা বস্ন্যাশ লাগিয়ে নেয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রেও ভালোভাবে বেস্নন্ড করে নিতে হবে। কপালের আকার অনুযায়ী ছোট বা বড় টিপ পরা যেতে পারে। বৈশাখী সজ্জা সাদা-লাল পাড়ের শাড়ির ঐতিহ্য ধরে রেখে বর্ষবরণের পোশাকে এখন এসেছে ভিন্নতা। লাল-সাদার পাশাপাশি বৈশাখ আয়োজনে স্থান করে নিয়েছে আরও কিছু রং। বাংলা বছরের প্রথম দিন বরণ করে নিতে এ দেশের মানুষের প্রস্তুতির শেষ নেই। মেয়েরা সাদা শাড়ি-লাল পাড়ে নিজেকে কতটা আকর্ষণীয় করে তোলা যায় সে প্রস্তুতি শুরু করেছে। পাঞ্জাবিতে নিজেদের ভিন্নভাবে ফুটিয়ে তুলতে ছেলেরাও পিছিয়ে নেই। বৈশাখী উৎসবে তরুণ-তরুণীদের ফ্যাশনে লাল-সাদার প্রাধান্য থাকে সবচেয়ে বেশি। বৈশাখের হাল ফ্যাশনে বাহারি রং যোগ হওয়ায় বৈশাখী উৎসব এখন নানা রঙে রঙিন। সুদীর্ঘ সময় ধরে বৈশাখী ফ্যাশনে শাড়িই বাঙালি নারীর প্রথম পছন্দ। পাশাপাশি থ্রি-পিস, ফতুয়া, পাঞ্জাবিও রয়েছে তাদের বৈশাখী ফ্যাশনের তালিকায়। ছেলেদের বৈশাখী ফ্যাশনের প্রায় পুরোটাতেই পাঞ্জাবি-ধুতির জয়জয়কার। সেই সঙ্গে ফতুয়া এবং টি-শার্টও রয়েছে ফ্যাশন সচেতন বাঙালি বাবুদের পছন্দের তালিকায়। সবার চাহিদার কথা মাথায় রেখে দেশীয় ফ্যাশন ঘরগুলোও সেই অনুযায়ী পোশাকের পশরা সাজিয়েছে তাদের বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে। শুধু নামিদামি ফ্যাশন হাউসগুলোই নয়, ছোটখাটো দোকানগুলোও বৈশাখকে কেন্দ্র করে তাদের আয়োজন সাজিয়েছেন। বৈশাখের তীব্র রোদ আর গরমের বিষয়টি মাথায় রেখে ফ্যাশন ঘরগুলো পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে সুতি কাপড়ই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। সুতি ছাড়া লিলেন, ক্রেপ জর্জেট, সফট জর্জেট, হাফ সিল্ক ইত্যাদি কাপড়ও ব্যবহার করা হয়েছে পোশাকে। এ ছাড়া এবারের বৈশাখ বরণের পোশাকে সব থেকে বেশি চলছে বিভিন্ন ধরনের প্রিন্টের পোশাক। বস্নক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, বাটিক, সাধারণ প্রিন্ট ইত্যাদি প্রিন্টের জনপ্রিয়তা এবার বেশি। তা ছাড়া অ্যাপিস্নক, হাতের কাজ ইত্যাদি তো আছেই।