গরমে আরামের পোশাক

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সোরিয়া রওনক পোশাক যদি আরামদায়ক না হয় তাহলে ঘামে ভিজে একাকার হয়ে যাওয়ার উপক্রম। সৃষ্টি হয় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির। গ্রীষ্মকালের রূপটাই বুঝি এমন। প্রকৃতির পালা বদলের সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও জীবনাচরণে পরিবর্তন আসে। পরিবর্তনের এ তালিকায় পোশাকের আরামটা খুবই জরুরি। অতএব, আবহাওয়ার সঙ্গে তাল-মিলিয়ে পোশাক না পরলে অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। যে কারণে ঋতুভিত্তিক পোশাক মানুষের এখন প্রথম পছন্দ। কাপড় নির্বাচন দেশীয় কিংবা পাশ্চাত্য-পোশাকটার কাটছাঁট যে দেশেরই হোক না কেন, কাপড় হতে হবে পাতলা। ফ্যাশনের সঙ্গে সঙ্গে যেন আরামটাও পুরোপুরি পাওয়া যায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। শিফন, সুতি, ক্রেপ, জর্জেট, সিল্ক, লিনেন, ভালো মানের নেটের তৈরি পোশাকগুলোয় আরাম পাওয়া যাবে বলে জানান ডিজাইনাররা। সুতির কাপড় সব থেকে আরামের হলেও সেটি সব জায়গার জন্য মানানসই নয়। শিফনের কাপড় এ ক্ষেত্রে হতে পারে আদর্শ বাছাই। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ সবকিছুতেই আভিজাত্য নিয়ে আসবে। মানিয়ে যাবে দিনে ও রাতে দুই সময়েই। ডিজাইনার মারিয়া সুলতানা বলেন, 'শিফন খুব আকর্ষণীয় কাপড়। অনেক জমকালোভাবে ব্যবহার করা যায়। শিফন শাড়ির সঙ্গে অনেক ধরনের বস্নাউজই ব্যবহার করা যায়। নরম অথচ একটা চকচকে ভাব চলে আসে সাজে।' রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে : যে পোশাকটা দেখতে ভালো লাগে, সেটা পরেও আরাম। তাই আমাদের চোখের শান্তি বলে একটি কথা আছে। এসময়ের পোশাকের রং হওয়া উচিত হালকা। হালকা নীল, সাদা, গোলাপি, লেবু রং, হালকা বেগুনি, আকাশি এসব রঙের পোশাকই গরমে আরামদায়ক। তন্তু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে : বস্নকের কাপড়ের সঙ্গে বাটিক বেশ আরামদায়ক। তাই বাটিকের কাপড়টা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ছাড়া পোশাকে এক রঙের কাপড়ে লেইসের ব্যবহারও দেখা যাচ্ছে। শুধু প্রতিদিনের ব্যবহারে সুতি পোশাক নয়, এখন বিভিন্ন উৎসবে ও অনুষ্ঠানেও সুতির রাজত্ব চলছে। সে ক্ষেত্রে একটু হালকা কারুকাজটা পছন্দ করছেন অনেকেই। তা ছাড়া সুতি অ্যান্ডি কাপড়ের তৈরি পোশাকে বেশ অভিজাত দেখায়। জমকালো অনুষ্ঠান উপলক্ষেও পরা যায়। পোশাকের কাটছাঁট : গরমের পোশাকের ধরনেও আসে নানা বৈচিত্র্য। তরুণীরা পছন্দ করছে ছোট হাতার লম্বা ফতুয়া, হাতাকাটা কামিজ বা ছোট হাতার শার্ট। সালোয়ারের ক্ষেত্রে ধুতি ও প্যান্টধাঁচের সালোয়ারটা বেশ পছন্দ করছে সবাই। ফতুয়া, কামিজ, বস্নাউজ- সবকিছুর ক্ষেত্রেই উঁচু গলা এই সময়ে তেমন দেখা যাচ্ছে না। বরং চারকোণা, পানপাতা ও ভি-আকৃতির গলা চলছে। পোশাকে হাতাকাটা, ছোট হাতার ম্যাগির সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে ঘটি হাতা। গরমে শাড়ি : গরমে পরার শাড়ির ক্ষেত্রেও সুতির ছাপা শাড়ি, বস্নক, অ্যাপিস্নকের শাড়ি বেশ চলছে। বস্নাউজের গলাটা পেছনদিকে বড় ও ম্যাগি হাতা হলে বেশ আরাম পাওয়া যাবে। আরাম পাবেন যেভাবে... হুটহাট বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও শিফন শুকিয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি। তবে দৈনন্দিন দৌড়ঝাঁপের জন্য শিফন নয় বলে জানান মারিয়া সুলতানা। কারণ, এটি খুব নাজুক ধরনের কাপড়। এজন্য জর্জেটের কাপড় পরতে পারেন। তবে পাতলা বলে জর্জেট অনেকেই পরতে আরামবোধ করেন না। এ ক্ষেত্রে শিফন বা জর্জেটের কামিজ বানালে ভেতরের শেমিজটা যেন পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন। শিফন শাড়ির সঙ্গে বস্নাউজের দৈর্ঘ্য একটু বাড়িয়ে নিতে পারেন। সব রকম নকশা আসলে চাইলেও শিফন কাপড়ের ওপর করা যায় না। মেশিন অ্যামব্রয়ডারি করে হালকা চুমকির কাজ দেয়া যায়। শিফনে যদি জমকালো ভাব আনতে চান, তাহলে বস্নাউজটাতে ভারী কাজ করিয়ে নিতে পারেন। দাওয়াতে পরতে চান এমন শিফনের শাড়িগুলোতে আধা ইঞ্চি বা এক ইঞ্চি চিকন পাড় ও হালকা পাথর বসিয়ে নিতে পারেন। ডিজাইনার মায়া রহমান বলেন, 'এখনকার আবহাওয়ায় জর্জেটের শাড়ি ভালো। ভিজলে শুকিয়ে যাবে। আবার কুঁচকে যাবে না। ক্রেপ কাপড়ের তৈরি কামিজ পরতে পারেন। ঠান্ডা অনুভূতি দেবে। এ ছাড়া পাতলা সাটিনের শাড়িও গরমের জন্য আরামদায়ক। কাজের ক্ষেত্রে সুতার কাজকে প্রাধান্য দিলে পোশাকটি ভারী বোধ হবে না।' দিনের বেলার জন্য পিচ, লেবু, সাদা, প্যাস্টেল রংগুলো বেছে নিন। তবে অনেকেই উজ্জ্বলতার ছোঁয়া রাখতে চান পোশাকে। সে ক্ষেত্রে পোশাকের মূল রং হালকা রেখে নকশাগুলোকে একটু উজ্জ্বল রং দিতে পারেন। অ্যাপিস্নকের কাজ বসাতে চাইলে নেটের ওপর করতে পারেন, তাতে ভালো লাগবে। গরমের এই সময়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে থাকে শিশুরা। এতে পোশাক আরামদায়ক না হলে অস্বস্তিতে ভোগে তারা। শিশুর পোশাকে আরামের বিষয়টি মাথায় রেখে দেশীয় বুটিক হাউসগুলোয় এখন বয়সভেদে নানা ধরনের পোশাকের আয়োজন দেখা যায়। শূন্য থেকে দুই বছর বয়সীদের জন্য : একদিনের নবজাতক থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের পোশাকে সবার আগে আরামের বিষয়টি প্রাধান্য দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুতি কাপড়ের কোনো বিকল্প নেই বলে জানালেন নকশাবিদরা।?গরমের বিষয়টি মাথায় রেখে নবজাতকদের জন্য বৈচিত্র্যময় নকশার সুতি পোশাক দেখা গেল বুটিক হাউসগুলোয়। ছেলে বা মেয়ের পোশাকে কাটছাঁটে তেমন একটা পার্থক্য নেই। বেশির ভাগ দোকানেই শিশুদের জন্য থাকছে এক ছাঁটের নিমা। কাপড়ের মধ্যে বেক্সি ফেব্রিকসের ব্যবহার বেশি।?প্রিন্টের মধ্যে চেক ও ফ্লোরাল এবং নকশার ক্ষেত্রে হাতের কাজেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তিন থেকে আট বছর বয়সীদের জন্য : এই বয়সী মেয়েশিশুদের জন্য ফ্রক বা টপ এবার বেশি চলছে। গলার নকশায় থাকছে বৈচিত্র্য। জামার ওপর থাকছে আলাদাভাবে বসানো রাউন্ড কলার। প্রিন্টের মধ্যে চেকের প্রাধান্যই বেশি দেখা যাচ্ছে এবার। আবার একরঙা দেশি তাঁতের কাপড়ের ওপর থাকবে নানা ধরনের পশুপাখির মোটিফ। এই বয়সী শিশুরা যা পরে, তা-ই তাদের মানিয়ে যায়। তাই নকশাবিদরা ফ্রক নিয়ে খানিকটা ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন। এই মৌসুমে ফ্রকের সামনের দিকের ঝুল হাঁটু পর্যন্ত থাকলে পেছনের ঝুল নেমে গেছে পা পর্যন্ত। এক ছাঁটের টপগুলোয় ডানদিকে বেশি ঝুলে গেলে বাঁ দিকটা থাকছে ওপরের দিকে। হাতার ক্ষেত্রে স্স্নিভলেস, ম্যাগি আর ক্যাপ স্টাইল এবারও জনপ্রিয়। ছেলেদের জন্য নানা ধরনের টি-শার্টের পাশাপাশি আছে শর্ট শার্টের বাহারি কালেকশন। পোশাকের সঙ্গে অনুষঙ্গ : পোশাকের সঙ্গে অনুষঙ্গ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গরমে পোশাকের সঙ্গে মানানসই হালকা চটি বেশ আরামদায়ক। হাতে কাঠের বালা বা সুতোর চুড়ি পরতে পারেন। কানে পরতে পারেন পোশাকের সঙ্গে রং মিলিয়ে ছোট দুল। গরমে ধাতুর তৈরি গয়না না পরাই ভালো। এর বিকল্প হিসেবে পরতে পারেন প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি দুল, চুড়ি বা বড় মালা। ব্যাগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ঝোলা ধরনের ব্যাগ। তার ভেতরে রাখতে পারেন একটি রোদ-চশমা।