আমার বাবা আমার সুপারম্যান

একটু নাটকীয়তা আনতে পারেন। বাবার পুরনো চশমাটির জায়গায় রেখে দিন নতুন চশমাটি। অথবা পকেট থেকে পুরনো কলমটা সরিয়ে নিয়ে নতুন কলমটা রেখে দিন। এ ছাড়া নামাজ পড়ার জায়গায় বিছিয়ে রাখুন নতুন জায়নামাজ। আপনার বাবার পড়ার টেবিলে রেখে দিন কিনে আনা দুর্লভ বইগুলো। সঙ্গে দিন ছোট্ট একটা চিরকুট। লিখুন, 'বাবা দিবসের শুভেচ্ছা। বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০১৯, ০০:০০

সায়রা সুলতানা
ছবি : অপূর্ব ও আয়াস
সেই শৈশব থেকে মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের রসায়নটা জমে ওঠার সুযোগ যত তাড়াতাড়ি ঘটে বাবার ক্ষেত্রে ব্যাপারটি কিন্তু সেরকম না। কাজের কারণে অনেক ক্ষেত্রে বাইরে বেশি সময় কাটানোয় সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে উঠতে সময় নেয়। স্বপ্নের আবেশে জড়ানো সময়টাতে মা-ই হয়ে ওঠেন সাথী। কিন্তু বাবাকে নিতে দেখা যায় সময়টাকে রাঙিয়ে দেয়ার দায়িত্ব। পছন্দের ভিডিও গেম কিংবা প্রথম সাইকেল কেনা। স্বপ্ন পূরণের এ ধাপগুলোতে বাবার ভূমিকার বাস্তবিকই সুপারম্যানের। চাওয়া মাত্রই হাজির করার দিব্যি দিয়েই বাবা পরিচয়টা পাওয়া। সন্তানের এমন হাজারও ছোট ছোট স্বপ্ন পূরণ, ইচ্ছাগুলো বাস্তবে রূপ দিতে তিনি লড়াই করেন। নানা অসুবিধার মধ্যেও তাকে যে সন্তানের চাওয়া পূরণ করতেই হয়। তিনি যে বাবা, সুপারহিরো! প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার পালিত হয় 'বাবা দিবস'। সে হিসেবে আজ বাবা দিবস। দিনটাকে সামনে রেখে অনেকে অনেক পস্ন্যান করে রেখেছেন। তবে এমন কিছু করা উচিত যাতে আপনার বাবাকে আপনি চমকে দিতে পারেন। বাবা খুশি হবেন এমন জিনিসের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করুন। সেই সঙ্গে হয়তো মাথায় হাত দিয়ে চুল এলোমেলো করে দেয়া বাবার আদরটুকুও পেয়ে যেতে পারেন আপনি। যাদের অফিস আছে তারা আজ অফিস থেকে ছুটি নিতে পারেন। সারা দিন আজ বাবার সঙ্গে কাটাবেন- এই ইচ্ছাটুকু বাবাকে বলুন। দেখবেন, এতটুকুতেই আপনার বাবা কত খুশি হন। তার ওপর যদি শুধু বাবা দিবসকে উপলক্ষ্য করে পরিবারের সবাই মিলে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন তাহলে খুশির মাত্রা বাড়বে বৈ কি। কোথাও ঘুরতে যেতে চাওয়ার জন্য পরিচিত স্পটগুলোর পাশাপাশি আপনার বাবার স্মৃতিবিজড়িত কোনো স্থান বেছে নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কোথায় যাচ্ছেন তা কোনোভাবেই বাবাকে আগে-ভাগে জানানো যাবে না। সেখানে যাওয়ার পর আপনাকে আর কিছু করতে হবে না। স্মৃতি হাতড়ে হাতড়ে আপনার বাবাই আপনাদের পুরনো দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। বাবা দিবসে আপনার বাবাকে কিছু একটা গিফটও দিতে পারেন। কতকিছুই তো বাজারে পাওয়া যায়। আপনার বাবার পছন্দ এমন কোনো একটা জিনিস কিনে নিয়ে আসুন। বাবাকে দিন। তবে সবচেয়ে ভালো হয়, আপনার বাবার দৈনন্দিন কাজ-কর্মে যে জিনিসটার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি, সেটা গিফট করলে। খুব ভালোভাবে খেয়াল করুন, আপনার বাবার চশমার ফ্রেমটা ভালো আছে তো? কিংবা প্রিয় ব্র্যান্ডের কলমটা? আর আগেরটা ভালো থাকলেও নতুন আরেকটা চশমার ফ্রেম কিংবা প্রিয় ব্র্যান্ডের কলম পেলে খুব একটা মন্দ হয় না। প্রতিদিন যে জায়নামাজে নামাজ পড়ছেন সেটাও কি পুরনো হয়ে যায়নি? বাজার থেকে ভালো দেখে একটা জায়নামাজ কিনে ফেলুন না। আপনার বাবা খুশিই হবেন। ডায়েরি লেখার অভ্যাস থাকলে আপনার বাবাকে একটা ডায়েরিও দিতে পারেন। এ ছাড়া যাদের বাবা বই পড়েন, তারা বইও গিফট করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনার বাবার প্রিয় লেখকের বইকে প্রাধান্য দিন। এ ছাড়া কোনো বইয়ের জন্য আক্ষেপ আছে কিনা সেটা কৌশলে জেনে নিতে পারেন। হতে পারে সেটা আপনার বাবার হারিয়ে ফেলা বই কিংবা এমন কোনো লেখকের বই যেটা অনেক খুঁজেও তিনি পাচ্ছেন না। এ কদিনে দায়িত্ব নিয়ে বইটি খুঁজে বের করুন। পৃথিবীতে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। চেষ্টা করলে অবশ্যই পারবেন। দরকার পড়লে এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নিন। কল্পনায় রাখুন, বহু আকাঙ্ক্ষিত বইটি পেলে আপনার বাবা কেমন খুশি হবেন। বাবাকে গিফট দেয়ার ক্ষেত্রেও একটু নাটকীয়তা আনতে পারেন। বাবার পুরনো চশমাটির জায়গায় রেখে দিন নতুন চশমাটি। অথবা পকেট থেকে পুরনো কলমটা সরিয়ে নিয়ে নতুন কলমটা রেখে দিন। আশা করি আপনার বাবা রাগ করবেন না। এ ছাড়া নামাজ পড়ার জায়গায় বিছিয়ে রাখুন নতুন জায়নামাজ। আপনার বাবার পড়ার টেবিলে রেখে দিন কিনে আনা দুর্লভ বইগুলো। সঙ্গে দিন ছোট্ট একটা চিরকুট। লিখুন, 'বাবা দিবসের শুভেচ্ছা। বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসি। বাবার যা কিছু পছন্দ, ভালোলাগা, মন্দলাগা, বিশ্বাস, অবিশ্বাস সব নিজের মধ্যে অনেকে ধারণ করতে শুরু করেন নিজের অজান্তেই। ভালো হোক কিংবা মন্দ পিতা বোধহয় এভাবেই প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ান সন্তানের কাছে। এ এক বহমান প্রক্রিয়া। সম্পর্কের বহুমাত্রিকতায়, ভালোবাসায় আবার একই সঙ্গে অবিশ্বাসের দূরত্বে পিতা ও সন্তানের সম্পর্ক যেন একই ক্যানভাসে হাজারও অনুভূতির কোলাজ। শেষ পর্যন্ত সেখানে সম্পর্কটাই জয়ী হন। সন্তানের মধ্যেই বাবার আসল কীর্তিগাথা। তা বয়ে চলে যুগ-যুগান্তরে। পৃথিবীর সব শিশুর সুপারহিরো বাবার জন্য ভালোবাসা।