ঘুরে এলাম আমের রাজধানী

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশ | ২৩ জুন ২০১৯, ০০:০০

আবু আফজাল সালেহ
দেশে উৎপাদিত বেশির ভাগ আম চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেই আমরা পাই। তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জকে আমের রাজধানী বলা হয়। শুরু হয়ে গেছে আমের মৌসুম। এ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রক্রিয়াকরণ, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি ভ্রমণকে মধুময় করে তুলবে। বাগান থেকে আম পেড়ে খাওয়া দারুণ হবে। এখানকার আমের স্বাদ অতুলনীয়। গতবছর আমের সিজনে কনসাট, রহনপুর বা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন বাজার আমাকে মুগ্ধ করেছিল! ভোলা যাবে না কোনোদিন। গম্ভীরা আর মিষ্টি মিষ্টি আঞ্চলিক ভাষা ভ্রমণকে জমিয়ে তুলবে! আম, কাঁসা, পিতল, নকশিকাঁথা, রেশম, গম্ভীরাসহ মেয়েলি গীতের মতো লোক উপাদানে সমৃদ্ধ চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এ জেলার অতীত ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময়। ইসলামী স্থাপত্যকলার অজস্র নিদর্শন বুকে ধারণ করে আছে। যা এক সময় ছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ের এক উলেস্নখযোগ্য জনপদ। শুধু ঐতিহাসিক নিদর্শনেই সমৃদ্ধ নয়, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে এখানকার মানুষের সংগ্রামের ইতিহাসও অত্যন্ত গৌরবময়। আম বাগান ছাড়াও আপনি দেখতে পারবেন বিভিন্ন স্থাপত্য। সোনামসজিদ স্থলবন্দর, ছোট সোনা মসজিদ, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি, তিন গম্বুজ মসজিদ, তিন গম্বুজ মসজিদের পাশেই রয়েছে শাহ নেয়ামতুলস্নার মাজার। রাস্তার যেদিকেই যাবেন আমের বাগান আপনাকে মুগ্ধ করবেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ঢুকলেই রাস্তার দুই পাশে দেখবেন অগণিত আমের বাগান। এক একটি বাগানে ঢুকলে মনে হবে যেন আমের রাজত্বে চলে এসেছেন বিস্তীর্ণ এ আমের বাগান রয়েছে পুরো এলাকাজুড়েই তবে জেলা সদর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জ উপজেলায় আমের বাগানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই উপজেলার কানসাট বাজার হচ্ছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় আমের বাজার। আমের মৌসুমে আসলে এখানে যেদিকে তাকাবেন শুধু আম আর আম। সারা বাংলাদেশে এখান থেকে আম সরবরাহ করা হয়। আমের বাগানের আম এখানকার আমের বাগানগুলোও বেশ সুন্দর এবং গোছানো। এ ছাড়া এখানে হরেক রকম ফলের দেখাও পাবেন। খেতে পারেন তালের মিষ্টি রস কাঁচামিঠা আম। এখানে সরাসরি বাগান থেকে বা কানসাট বাজার থেকে কিনতে পারেন নানা প্রজাতির হরেক রকম আম। দামেও সবচেয়ে সস্তা। তবে আমের সিজনে গেলেই মূলত ভালো আমের দেখা পাবেন। এখানে যাওয়ার আদর্শ সময় হচ্ছে মে-জুন মাস। কনসাটের আমের বাজার ঐতিহাসিক ছোট সোনা মসজিদ: চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে ৩৬ কিলোমিটার উত্তরে শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদগামী মেইন রোডে অবস্থিত ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন এ মসজিদটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে অটোতে করে সহজেই যাওয়া যায় সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন হিসেবে খ্যাত ছোট সোনা মসজিদ দেখতে। কালচে পাথরে নির্মিত এ মসজিদটির স্থাপত্যশিল্প বেশ আকর্ষণীয়। আয়াতকার এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ২৫ মিটার ও প্রস্থ ১৬ মিটার। মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে ৫টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ৬টি করে মোট ১১টি প্রবেশ পথ রয়েছে। এ ছাড়া এর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে কারুকার্যময় পাথরের তৈরি ৫টি মেহরাব। সোনা মসজিদের ছাদ গম্বুজ আকৃতির এবং এখানে মোট ১৫টি গম্বুজ আছে। এ গম্বুজগুলোতে একসময় সোনার পাত দিয়ে বাঁধানো ছিল যা ছিল এ মসজিদের প্রধান আকর্ষণ। সোনার পাত বাঁধানো এ গম্বুজের কারণেই এ মসজিদের নামকরণ হয়েছে সোনা মসজিদ। যদিও কালের বিবর্তনে সে সোনায় বাঁধানো পাতের কোনো অস্তিত্ব এখন আর অবশিষ্ঠ নেই। তবে সোনা মসজিদের মূল দেয়ালের নান্দনিক পাথরের অলঙ্করণ আজও সবাইকে মুগ্ধ করে। ভারতে অবস্থিত বড় সোনা মসজিদের তুলনায় আকারে ছোট তাই এটি ছোট সোনা মসজিদ নামে পরিচিত। বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ১৪৯৩-১৫১৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। এখান থেকে প্রাপ্ত শিলালিপি হতে পাওয়া যায় সুলতান আলা-উদ-দীন শাহের শাসনামলে (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে) ওয়ালি মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন এ মসজিদটি বেশ ভালোভাবেই সংরক্ষণ করা হয়েছে। ছোট সোনা মসজিদ থেকে কয়েকশত গজ দূরেই রয়েছে তিন গম্বুজ মসজিদ। এই মসজিদটি শাহ নেয়ামতুলস্নাহ (রহ.) ১৬৩৯-৫৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেন। এর দৈর্ঘ্য উত্তর-দক্ষিণে ১১৬ ফুট ও প্রস্থ ৩৮ ফুট। তিন গম্বুজ মসজিদের পাশেই রয়েছে শাহ নেয়ামতুলস্নাহর মাজার। ১২ দরজা বিশিষ্ট চতুষ্কোনায়তন সমাধিটির পাশেই রয়েছে আরও কয়েকজন সাধক পুরুষের সমাধি।