অফিস পাড়ায় বর্ষা

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আষাঢ় শেষে এখন শ্রাবণ মাস। এক-আধটু রোদের দেখা পেলেও অনেকটা সময় থাকছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নয়তো ঝুম ঝুম বৃষ্টি। সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় এলে ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ নাকে আসে। দৃষ্টি মেলতেই চোখে পড়ে বৃষ্টি ধোয়া সবুজ পাতা। তখন আপনিতেই মনটা তো একটু কেমন যেন করেই ওঠে! আকাশজুড়ে ধূসর মেঘের আনাগোনা আর তার মধ্যে প্রকৃতির এই যে বিচিত্র রঙের খেলা এটাই তো বর্ষা ঋতুর বৈচিত্র্য। তবে বৃষ্টি দেখে মনে দোলা লাগলেও যেই না অফিসের যাওয়ার কথা মনে হয়, তখনই বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যান আপনি। কিন্তু উপায়ও তো নেই, অফিসে তো যেতেই হবে। তাই এ সময় অফিসে যাওয়ার জন্য পোশাক ও অনুষঙ্গ নির্বাচনে একটু সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ইস্ত্রি করা পোশাক বা ফরমাল জুতায় রাস্তার কাদাজল ছিটকে এসে পড়লে ভিজে হবে সয়লাভ। বিপাকে পড়বেন আপনি, বিগড়ে যাবে মেজাজটা। মেজাজ বিগড়ে লাভ কী বলুন! বৃষ্টি বলে কথা। আর তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে আপনাকে। আপনি যদি একটু সচেতন হোন তাহলে বৃষ্টির দিনেও অফিস হতে পারে আনন্দময়। এ সময় অফিসে যাওয়ার জন্য চাই বর্ষার প্রস্তুতি। পোশাক : সব সময় চেষ্টা করতে হবে, এক সেট জামা যেন অফিসের ড্রয়ারে রাখা যায়। এ ক্ষেত্রে অফিসে যাওয়ার সময় ভিজে গেলেও পরে সেটা কাজে দেবে। আর পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একটু সজাগ থাকা প্রয়োজন। আমাদের দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো বর্ষার কথা মাথায় রেখে কাপড়, রং ও ডিজাইন নির্বাচন করে। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস বর্ষা ঋতুর থিম ব্যবহার করে থাকে। বৃষ্টি, বর্ষার ফুল, লতাপাতা, মেঘলা আকাশ এসব বিষয় উঠে আসে পোশাকের মোটিফ হিসেবে। এ ছাড়া বস্নক, স্ক্রিন প্রিন্ট, হালকা অ্যামব্রয়ডারি ও চুমকির কাজ থাকে পোশাকগুলোতে। রঙের ক্ষেত্রে সবুজ, নীল, ছাই, আকাশী ইত্যাদি প্রাধান্য দিয়ে থাকে হাউসগুলো। মেয়েদের কামিজের কাটিংয়ে থাকবে একটু ঢিলেঢালা ভাব। বর্তমান সময়ে এই কাটিংই বেশি চলছে। স্স্নিভলেস বা বাটারফ্লাই হাতার কামিজগুলো ট্রেন্ডি কামিজ থেকে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি হচ্ছে। সালোয়ার হিসেবে পস্নাজো অথবা প্যান্ট কাটিং মেয়েদের বেশি পছন্দের। টপস, কুর্তি বা শাড়িতে বর্ষার পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে অত্যন্ত ট্রেন্ডি লুকে। এসব পোশাকের পাশাপাশি বর্ষার গাঢ় রঙের ট্রেন্ডও প্রচলিত রয়েছে। চাইলে গাঢ় নীল, সবুজ পোশাক বেছে নিতে পারেন। বৃষ্টির সময়টাতে আবহাওয়া খানিকটা গুমোট থাকে বলে জর্জেট কাপড়কে অনেকে বেশি প্রাধান্য দেন। কোনো অনুষ্ঠানে যেতে চাইলে অ্যান্ডি সিল্কের পোশাকও পরা যেতে পারে। রংটাও একটু গাঢ় পরাই সুবিধাজনক। সহজে ধোয়া যায় বা ভিজলে তাড়াতাড়ি শুকোয় তেমন পোশাকই নির্বাচন করুন। বর্ষায় সালোয়ার-কামিজের ক্ষেত্রে সুতির বদলে সিনথেটিক ফেব্রিকের কাপড় বেছে নিতে পারেন। শাড়ির ক্ষেত্রেও সুতি এড়িয়ে শিফন বা জর্জেট বেশি উপযোগী। কাপড়ের রং নির্বাচনে উজ্জ্বল ও গাঢ় রংগুলো বাছাই করুন। বর্ষার সঙ্গে নীল রঙের একটা সম্পর্ক রয়েছে। চেষ্টা করুন নীলের ছোঁয়া বা কম্বিনেশনে পোশাক পরতে। খুব বেশি পাতলা কাপড় এ সময় পরবেন না। ব্যাগ : বর্ষার সঁ্যাতসেঁতে, আর্দ্র বাতাসে আপনার সাধের চামড়ার ব্যাগের অবস্থা খুবই খারাপ হয়, বিশেষ করে ভিজে যাওয়ার পর। বাইরে থেকে তাপ দিলেই চামড়ার নিজস্ব তেলের ভাঁড়ার শুকোতে শুরু করবে ক্রমেই। ফলে ব্যাগ কঠিন হয়ে যাবে, বাইরের স্তরে ফাটলও দেখা দিতে পারে। তার চেয়ে সারা রাত পাখার নিচে রেখে দিন। খবরের কাগজ বা টিসু্য পেপার পুরে দিন ব্যাগের মধ্যে, সেগুলো বাড়তি জল শুষে নেবে। বর্ষার জলে না ভিজলেও আর্দ্রতায় আমাদের পা ঘামে, সেই ঘামেও জুতোর মধ্যে সঁ্যাতসেঁতে ভাব দেখা দেয়, কখনো কখনো বাজে গন্ধ হয়। ফলে নিয়মিত খবরের কাগজ বা টিসু্য পেপার দিয়ে জুতোর বাড়তি আর্দ্রতা শুষে না নিলেও ফাঙ্গাস ধরতে পারে। সম্ভব ফলে একই ব্যাগ প্রতিদিন ব্যবহার করবেন না। খবরের কাগজ বা টিসু্য পেপার দিয়ে শুকনো করে নেয়ার পরে সামান্য ট্যালকম পাউডার ছড়িয়ে দিলে সেটির মধ্যকার সব আর্দ্রতা চলে যাবে। জুতা: বৃষ্টির সময় নোংরা পানিতে পা ভিজে অনেক সময় ফুসকুড়ি, চুলকানির মতো নানা চর্মরোগ হতে পারে। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশুদের বেলায় এ সময় জুতার ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক হওয়া উচিত। তাদের জন্যও নানা ডিজাইনের পানিরোধক জুতা পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। বর্ষার এই সময়ে তরুণদের পস্নাস্টিক বা পানি নিরোধক স্যান্ডেলই হবে যুতসই। প্রবল বর্ষণে বাড়ি থেকে বেরোনো দায়; কিন্তু না বেরিয়ে উপায় নেই। তখন একমাত্র ভরসা হতে পারে কাফ লেংথ রেইন বুট। শক্ত-পোক্ত আর রাবারের তৈরি। বাজারে মিলবে পিভিসি পস্নাস্টিকের তৈরি অ্যাঙ্কল লেংথ বুটও। পাওয়া যাবে নানা ডিজাইন আর রঙে। নতুন ট্রেন্ড হিসেবে যুক্ত হচ্ছে কার্টুন থেকে শুরু করে নানা ইমোটিকন প্রিন্টেড প্যাটার্ন। হালকা হিল থাকায় এসব জুতায় কাদা ছিটার ভয় নেই। ব্রিদেবল স্যান্ডেল রাবারের তৈরি বলে ভিজলেও তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। পেছনে বেল্ট থাকায় ফিট করে পরা যায়। জেলি শু বর্ষার জন্য একদম পারফেক্ট। পস্নাস্টিকের তৈরি বলে নষ্ট হয় না। অফিশিয়াল জুতা হিসেবে চামড়ার জুতা, কনভার্স, স্নিকার্স এড়িয়ে চলুন। আর নারীরা এ সময় স্স্নিপার স্যান্ডেল হাইহিল না পরে বিভিন্ন ধরনের পস্নাস্টিক পাম্প শু জুতা পরতে পারেন। খুব ভালো হয় অফিসে আলাদা এক জোড়া জুতা রেখে দেয়া যায়। বেঁচে যাবেন কাদা মাখা নোংরা মেঝে আর কলিগদের সামনে জুতার ময়লাজনিত বিব্রত অবস্থা থেকে।