কাশফুলের দোলায়

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

সুমন্ত গুপ্ত
কাশবনে খেলায় মেতেছে শিশুরা
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে মুগ্ধপ্রাণ প্রকৃতি কেবলই আবেশ ছড়িয়ে দেয়। এর কোনো সীমাপরিসীমা নেই। আনন্দযজ্ঞের এই লীলানিকেতন বাংলাদেশে একের পর এক ঋতুর আগমন ঘটে। এর মধ্যে শরতের রূপ অন্য যে কোনো ঋতুর থেকে ভিন্ন। প্রকৃতিপ্রাণতা জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। ঋতুবৈচিত্র্যের বহু বর্ণিল আবহ সমাচ্ছন্ন হয়ে আছে আমাদের প্রকৃতি। গত সপ্তাহে এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় ফেরার পথে দিয়াবাড়িতে গিয়ে দেখা মিলল কাশফুলের মেলা, এর আগের সপ্তাহেও গিয়েছিলাম তখন এত সুন্দর রূপ দেখি নাই। শরতের আকাশের বর্ণিল আলোয় কাশফুলগুলো ঢেউ খেলে যাচ্ছিল। শরৎ প্রকৃতির মধ্যে একটা নতুন আবেগের সৃষ্টি করে। রৌদ্র আঁধারির খেলায় যে কার মন বিলিন হয়ে যেতে চায় প্রকৃতির সঙ্গে। এই স্বভাবপ্রকৃতির সঙ্গে যেন বাঙালি চরিত্র অনিষ্ট হয়ে আছে। শরতের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দিয়াবাড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে নিয়ে যাবে শুভ্রতায় পরিপূর্ণ কোমল এক রাজ্যে। শরৎকালে উপভোগ করে আসুন কাশফুলের কোমল পরশ আর সাদা সাদা নরম মেঘের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসা সোনাঝরা রোদ। পশ্চিমে হেলেপড়া সেই সূর্যের কিরণ যখন কাশফুলের ওপর পড়ে তখন এই দুইয়ের মিথষ্ক্রিয়ায় অদ্ভুত এক আভা প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে। যা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। যত দূরে চোখ যায় দৃষ্টিজুড়ে শুধু কাশবন আর কাশবন। বিস্তীর্ণ এলাকা যেন শুভ্রতার চাদরে মোড়া এক অপরূপ সৌন্দর্যের রাজ্য। কাশফুল শোভন শুভ্র ফুল। চোখে পড়লেই আমরা বুঝে নিতে পারি আবহমান বাংলায় এখন শরৎকাল। বিস্তীর্ণ নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাশফুলের সমারোহ শরৎ প্রকৃতির এক নান্দনিক রূপ। কাশফুল প্রাণবন্ত ঋতু শরৎকালীন ফুল। ধবল কাশফুল শোভন সুন্দর বলে সবুজ প্রাণ আর মেঘের আকাশ মিলে মূর্ত প্রকৃতি নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে। কাশফুল আবহমান বাংলার চিরায়ত শরতের সুনন্দ স্নিগ্ধ ফুল। সাদা লোমের মতো শুভ্রতা নিয়ে ফোটে কাশফুল। এর মঞ্জরি ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। গুচ্ছমূল জাতের কাশ ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। এর পাতা কিছুটা রুক্ষতায় সরু সোজা রেখার মতো। উচ্চতা তিন থেকে সাড়ে তিন মিটার পর্যন্ত হয়। কাশ নদীতীর, জলাভূমি, আবার কখনো উঁচু পতিত জমিতে গোছায় গোছায় জন্মে। কাশফুলের ((শধহংয) বৈজ্ঞানিক নাম ঝধপপযধৎঁস ংঢ়ড়হঃধহবঁস আর উদ্ভিদবিজ্ঞানে এর গোত্র পরিচিতি চড়ধপবধব। এর ইংরেজি নাম এরধহঃ জববফ. ইট কাঠ, কংক্রিটের এই কর্মব্যস্ত শহরে একটু মন ভরে দম নেয়ার স্থান তেমন নেই বললেই চলে। এক টুকরো সবুজের দেখা মেলাই যেখানে ভার, সেখানে সবুজের প্রান্তরে হারিয়ে যাওয়া অনেকটাই অসম্ভব। উত্তরা দিয়াবাড়িতে এলে সেই অসম্ভবকে সত্যি বলে মনে হবে। দিয়াবাড়ির আরেকটি অন্যতম দর্শনীয় জায়গা হচ্ছে বিশাল বটগাছ। আজকাল নাটকে এই বটগাছটি প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায়। এক বিশাল বটগাছ আর তার দুপাশে রাস্তা। এই বটগাছেরও দেখা মিলবে দিয়াবাড়িতে। এই জায়গাটার নাম এখন হয়ে গেছে 'দিয়াবাড়ি বটতলা'। প্রায় সময় সেখানে কোনো না কোনো নাটকের শুটিং চলে। ভাগ্য ভালো থাকলে হয়তো দেখা হয়ে যেতে পারে আপনার প্রিয় কোনো তারকার সঙ্গে। বেশ কিছুদূর সামনে গেলে দেখা পাওয়া যায় একটি মরা নদী। এটি তুরাগ নদীরই একটি শাখা। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি নান্দনিক সংযোগ সেতু। এই সেতুর উপর দাঁড়ালে আঁকা-বাঁকা নদীর নজরকাড়া সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। পরিত্যক্ত নৌকা। জাল ফেলে মাছ ধরছে জেলেরা। অদ্ভুত, অসাধারণ, রোমাঞ্চকর ও মনোরম পরিবেশে প্রিয়জনকে নিয়ে কাটিয়ে আসতে পারেন দারুন এক বিকাল। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এখানে রয়েছে পাড়বাঁধানো লেক যা দিয়াবাড়ির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। ভ্রমণ আরও উপভোগ্য করতে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে লেকের এদিক-ওদিক থেকে নৌকায় করে ঘুরে আসার সুব্যবস্থা। চারদিকে সুনসান নীরবতা। একটু পর পর সেই নীরবতা ভেঙে শাঁই শাঁই করে উড়ে যায় উড়োজাহাজ! অদ্ভুত সুন্দর একটি দৃশ্য। খুব কাছ থেকে উড়োজাহাজ ওড়া দেখতে চাইলে এর চেয়ে ভালো কোনো জায়গা হবে না। মাথা উঁচু করে উড়ে যাওয়া উড়োজাহাজ দেখা মনে করিয়ে দেবে হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলাকে। কীভাবে যাবেন : ঢাকার যে কোনো প্রান্ত থেকে উত্তরা রুটের যে কোনো বাসে চড়ে হাউসবিল্ডিং বাস স্ট্যান্ডে নামতে হবে। সেখানে নর্থটাওয়ার ও মাসকট পস্নাজার সামনেই দেখতে পাবেন দিয়াবাড়ি যাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ রিকশা। রিকশায় না চড়তে চাইলে উঠে পড়তে পারেন লেগুনায়। লেগুনা আপনাকে নামিয়ে দেবে সরাসরি দিয়াবাড়ি বটতলায়। লেগুনার ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা (উৎসবের দিনে)। আর সেখানে রিকশা ভাড়া উৎসবের দিনে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।