ঘুরে এলাম আনারসের রাজধানী

কীভাবে যাবেন ঢাকা থেকে বাস অথবা আন্তঃনগর ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে পারেন। সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত অনেক বাস পাবেন (হানিফ, শ্যামলী, ইউনিক ইত্যাদি)। ভাড়া ৪৫০-৫০০/- অথবা চাইলে সিলেট থেকেও যেতে পারেন শ্রীমঙ্গলে।

প্রকাশ | ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

সুমন্ত গুপ্ত
দীর্ঘ একটা যাত্রা শেষে এসে পৌঁছালাম শ্রীমঙ্গলে। এবার বিরতির পালা, কারণ সবার পেটে রাম-রাবনের যুদ্ধ চলছে। আমরা এসে নামলাম চৌমোহনা এলাকার প্রখ্যাত ম্যানেজার স্টলে, সেখানে নাশতা সেরে রওনা দিলাম আমাদের ভ্রমণ গন্তব্যে। পথে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলো আমার বন্ধু তন্ময়। চা-বাগানের মাঝ দিয়ে চলছে আমাদের গাড়ি। গাছের ফাঁকে সুয্যি মামা উঁকি দিচ্ছেন। চলতি পথে চোখে পড়ল সারি সারি ভ্যানভর্তি আনারস নিয়ে শহরে যাচ্ছে একদল লোক। ভ্যানের পাশাপাশি সাইকেলেও আনারস ঝুলিয়ে বাজারে যাচ্ছে অনেকেই। দেশের সবচেয়ে বেশি আনারস উৎপন্ন হয় এই শ্রীমঙ্গলে, তাই শ্রীমঙ্গলকে অনেকে আনারসের রাজধানীও বলে থাকেন। এই আনারস সারা দেশজুড়েই বিখ্যাত, কেননা স্বাদে এই আনারস অতুলনীয় বলছিল আমার বন্ধু তন্ময়। সে সুনামের নমুনা দেখতেই এক শুক্রবার সকালে এখানে আসি। গাড়ি থেকে নেমে আমরা হাঁটা শুরু করি মোহাজেরাবাদের আনারস বাগানের দিকে। সাইকেলবোঝাই আনারস নিয়ে বিক্রির অপেক্ষায় থাকা বনমালী গওলা বলেন, শ্রীমঙ্গলের সুমিষ্ট 'বিলাতী' (হানিকুইন) এবং রসালো 'ক্যালেন্ডার' (জায়ান্ট) আনারসের নাম আজও রয়ে গেছে, কিন্তু মিষ্টতা, সুগন্ধ এবং রসে পরিপূর্ণ আনারসের সে সমাহার আর নেই। উৎপাদন কমে যাওয়ায় শ্রীমঙ্গলের বাজার এখন দখল করে নিয়েছে অন্য জেলার আনারস। ষাটের দশকে শুরু হওয়া আনারস চাষের হিড়িকে দুই দশকের ভিতরেই স্থানীয় 'বালিশিরা হিলস' এবং 'ফয়েজাবাদ হিলস'-এর পুরোটাই আনারস চাষের আওতায় চলে আসে এবং 'শ্রীমঙ্গলের আনারস'-এর পরিচিতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শ্রীমঙ্গলের মৌসুমী ফলের বাজারের চিত্র বদলে গেছে। শ্রাবণ-ভাদ্র পর্যন্ত যেখানে ফলের পাইকারি বাজার পূর্ণ থাকত স্থানীয় আনারসে, সেখানে আষাঢ়ের মাঝামাঝিতেই স্থানীয় আনারসের সমাহার কমে যায়। শুরু হয় অন্য জেলা থেকে আনারসের আমদানি। শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা হিলস এবং বাহুবলের ফয়েজাবাদ হিলসের ২০-২৫ হাজার একর জমির আনারস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভোক্তার রসনা জুগিয়েছে গত চার-পাঁচ দশক পর্যন্ত। কিন্তু এখন ভোক্তার সংখ্যা বাড়লেও আনারসের প্রাপ্যতা তিন-চতুর্থাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। আর এ শূন্যতা পূরণ করছে মধুপুরের আনারস। তবে মধুপুরের আনারসে ভোক্তার রসনা তৃপ্ত হয় না পরিপূর্ণভাবে। মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় ফাঁপানো এ আনারসের সুগন্ধ ও মিষ্টতা শ্রীমঙ্গলের আনারসের ধারে-কাছেও না বলে আনারস ভোক্তাদের অভিমত। এখানে বেচা-কেনা শুরু হয় খুব সকালে, চলে বিকাল পর্যন্ত। এখনে প্রতি ১০০ আনারস বিক্রির জন্য ভ্যান বা সাইকেলওয়ালা পান ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। আবার অনেক চাষি বা মহাজন নিজেরাই সাইকেল বা ভ্যানে করে শহরে নিয়ে বিক্রি করেন। আমরা হাঁটছি টিলা বেয়ে আনারস বাগানে, সঙ্গে সঙ্গেই নাকে এলো পাকা আনারসের সুমিষ্ট গন্ধ, আর আমি একের পর এক ছবি তুলতে লাগলাম। চোখে পড়ল শত শত শ্রমিক বাগানের টাটকা আনারস পেড়ে ঠেলাগাড়িতে সাজিয়ে রেখেছে। সাজানো-গোছানো আনারস বাগানের এই সৌন্দর্য কোনো অংশে চা-বাগানের চেয়ে কম যায় না। দেখতে দেখতে আমাদের বিদায় নেয়ার পালা চলে এলো। পাহাড়ি টিলায় থরে থরে সাজানো আনারসের গাছের মায়াবী রূপ ছেড়ে চলে আসতে ইচ্ছা করছিল না। ছবির মতো সাজানো প্রতিটি আনারস বাগান আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছে আনারসের রাজ্যে। তাই সময় নিয়ে চলে আসুন শ্রীমঙ্গলের আনারস রাজ্যে।