উচ্ছল কিশোরীর উজ্জ্বল ফ্যাশন

নিজের পছন্দের রং, নকশা, অলঙ্করণ নিয়ে সচেতন হয়ে ওঠার এটাই বয়স। এ সময় তৈরি হয় ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য। তাই এ বয়সে কিশোরীর মতামতকে দিতে হবে গুরুত্ব। তার নিজস্বতার বহিঃপ্রকাশ সে ঘটাতে চাইবে সাজ-পোশাকের মাধ্যমে

প্রকাশ | ১০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

রঙ বেরঙ ডেস্ক
এখন রঙের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য পছন্দ করছে কিশোরী মেয়েরা
কিশোরী বয়সের রয়েছে এক নিজস্ব রং। নিজের পছন্দকে জানতে শুরু করার এটাই বয়স। বৈচিত্র্যময় এ বয়সে পোশাক নিয়ে করা যেতে পারে নিরীক্ষা। শিশুকাল থেকে কৈশোরে পদার্পণের সময়টায় ফ্যাশন অনুভূতির সঙ্গে পরিচয় ঘটে। এ সময় মা-বাবার মতামতের সঙ্গে সঙ্গে নিজের মতামতকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে কিশোরীরা। নিজের পছন্দের রং, নকশা, অলঙ্করণ নিয়ে সচেতন হয়ে ওঠার এটাই বয়স। এ সময় তৈরি হয় ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য। তাই এ বয়সে কিশোরীর মতামতকে দিতে হবে গুরুত্ব। তার নিজস্বতার বহিঃপ্রকাশ সে ঘটাতে চাইবে সাজ-পোশাকের মাধ্যমে। ফ্যাশন হাউসগুলো এখনকার কিশোরীদের ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়েই পোশাক বানাচ্ছে। ইন্টারনেটের যুগে সব তথ্য তো ঘরে বসেই পাওয়া যাচ্ছে। ফিউশনধর্মী স্টাইলের অনেকটাই যেন সেখান থেকে বেছে নেওয়া। ডিজাইনার অদিতি হাসান বলেন, 'কিশোরীরা এখন যেন বয়সের থেকেও বড় হয়ে গেছে। পোশাকের ক্ষেত্রেও এখন তাদের আর ফ্রেমে আটকানো যাচ্ছে না। তারা সবকিছুই এখন বহন করতে পারে। তারা এখন এতটাই স্মার্ট যে শাড়ি থেকে সালোয়ার-কামিজ, সবই পরছে। আমরা এখন সেটা মাথায় রেখেই কাজ করছি।' আসলেই তাই। যেহেতু ব্যক্তিত্বের বেশ খানিকটা প্রভাব পোশাকে দেখা যায়, তাই কিশোরীর পোশাক কেনার সময় তার জীবনযাপন এবং আগ্রহের কথা মাথায় রাখতে হবে। কিশোরকাল চঞ্চলতায় অতিবাহিত হয়। নানারকম ব্যস্ততায় সময় কাটে। শুধু পড়াশোনা নয়- তার বাইরেও নানা ধরনের কাজে ব্যস্ত সময় কাটে। স্কুল থেকে ফিরেই আবার ছুটতে হয় টিউশন কিংবা সৃজনশীল কোনো প্রশিক্ষণে। ঘরের বাইরেই কাটে বেশির ভাগ সময়। এ সময়ের পোশাক তাই আরামদায়ক না হলে কিশোরী স্বস্তিবোধ করবে না। ফেব্রিকের বিষয়ে সচেতনতা আবশ্যক। ঋতুর কথা রাখতে হবে বিবেচনার প্রথম দিকে। আরামদায়ক ফেব্রিকে শিশু অস্বস্তি অনুভব করবে না। বেশিক্ষণ বাইরে থাকলেও যেন ত্বকে কোনো ধরনের অস্বস্তি তৈরি না করে, এমন ধরনের ফেব্রিক বেছে নেওয়া তাই জরুরি। এ ক্ষেত্রে সুতি, লিলেন, ভিসকস, সিল্ক থাকতে পারে আপনার পছন্দের তালিকায়। বর্তমানে বেশ আরামদায়ক একটি আবহাওয়া রয়েছে। এমন আবহাওয়ায় মোটামুটি সব ধরনের ফেব্রিকেই স্বস্তি মেলে। কেননা, এ সময়ে তাপমাত্রার পারদের ঊর্ধ্বগতি তেমন থাকে না। রঙের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রং মানেই কিশোরী বেলার দীপ্তি। উজ্জ্বল রং তাই বেছে নেওয়া যেতে পারে অনায়াসেই। প্যাস্টেল রং এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আছে। তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে কিশোরীদের পোশাকেও। এর সঙ্গে সঙ্গেই উজ্জ্বল রং রয়েছে আলোচনায়। পোশাকের কাটগুলো এ বছর নজর কাড়ছে বেশ। ভিন্ন ধরনের কাটগুলো বেশ নিচ্ছে কিশোরী ক্রেতারা। জায়গা করে নিয়েছে ফিউশন। দেশ ও পাশ্চাত্যের সম্মিলন বেশ প্রভাব তৈরি করছে কাটিংয়ের ক্ষেত্রে। আর পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকের জনপ্রিয়তা এখনো আছে আগের মতোই। বর্তমান সময়ে এ বয়সীদের পোশাকে দেখা যাচ্ছে প্যাটার্নের পরিবর্তন। নেকলাইন এবং স্স্নিভে কাজ হচ্ছে সব থেকে বেশি। গলার নকশায় নানারকম পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি বেশ খানিকটা সময় ধরে। এর ধারাবাহিকতায় জামার স্স্নিভে এসেছে নানারকম পরিবর্তন। কিশোরীরা বেশ ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করছে এ পরিবর্তনগুলো। পোশাকের অসমান কাটের জনপ্রিয়তা রয়েছে এখনো। অসমান পোশাকে নান্দনিকতা যেন নতুন মাত্রা পায়। সালোয়ার-কামিজ, কুর্তা, টিউনিক, ফ্রক ইত্যাদি পোশাকের নিচের অংশটায় বেশ উঁচু-নিচু ঢেউয়ের মতো করে কাটা। নতুন ধারা অনুযায়ী কুর্তার সামনের নিচের দিকটা ছোট, পেছনের দিকটা বেশ লম্বা। একটু ঢিলেঢালা কাটই রাখা হচ্ছে। টিউনিকগুলো করা হচ্ছে মূলত সোজা কাট দিয়ে। সিঙ্গেল কুর্তা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। নিচের অংশটা কিশোরীরা নিজের মতো করে মিলিয়ে নিচ্ছে। কুচির ব্যবহার হচ্ছে সামনের দিকে। গলায় বোট নেক, কলার প্রভৃতি থাকবে। পালাজ্জো, প্যান্টের নিচের অংশে আসছে নকশা পালাজ্জো, চাপা প্যান্ট, সালোয়ারের নিচের অংশে প্রিন্ট বা হাতের কাজ দেখা যাচ্ছে এবার। অনেকে কামিজের সঙ্গে সালোয়ারের বদলে স্কার্ট নিচ্ছে। একসময় কিশোরীদের পোশাকে কালো রংটা খুব একটা প্রশংসা পেত না। এখন রঙের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য পছন্দ করছে এই বয়সের মেয়েরা। কালো, সাদা বা হালকা যে কোনো রং পোশাকে বহন করছে তারা। তবে উজ্জ্বল রংগুলো তাদের বেশি মানায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। হলুদ, নীল, সবুজ, কমলা, গোলাপি, কালো, লাল, বেগুনি সব রংই রাঙাচ্ছে তাদের পোশাকগুলো। আমাদের দেশে কোনো রঙের ধারাকে অনুসরণ করা হয় না। উৎসবের সময় সব রংই ফুটে ওঠে পোশাকে। অনেক সময় কিন্তু গয়নার ওপর নির্ভর করেও পোশাক বেছে নেওয়া যায়। কিশোরীরা একটু ভিন্নতা আনতে এ ফ্যাশনটি বেশ ভালোভাবেই করছেন। এখন ভারী গয়নার চল। রুপা, অক্সিডাইজড ধাতু, বিডস, কাঠ, সুতা ব্যবহার করে বড় নকশার গয়না বানানো হচ্ছে। সঙ্গে লম্বাটে ধরনের পুঁতির মালাও চলছে। গয়নার একটা সাধারণ নিয়ম গলায় ভারী মালা হলে কানে ছোট দুল ভালো লাগবে। একই ভাবে কানে যখন বড় দুল ঝুলবে, গলায় থাকবে হালকা মালা। অন্য কোনো কিছু লাগানোর প্রয়োজনীয়তা নেই। বরং পোশাক, গয়না, জুতা, ব্যাগের ওপর মনোযোগ দিয়ে পুরো সাজটাতে ভিন্নতা আনা যায়। নানারকমের উৎসবের ডামাডোল শোনা যায় বছরের এ সময়টায়। কিশোরীদের তাই দরকার হয় উৎসবের পোশাক। এ বিষয়টি তাই ভাবতে হবে। উৎসবে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে জাঁকজমক পোশাকের দরকার হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেক কিশোরী বেছে নিতে চায় ঐতিহ্যবাহী পোশাক। জমকালো পোশাক এ সময় বেছে নেওয়া যেতে পারে।