বাদলা দিনের পোশাক-আশাক

বষার্য় সালোয়ার-কামিজের ক্ষেত্রে সুতির বদলে সিনথেটিক ফেব্রিকের কাপড় বেছে নিতে পারেন। শাড়ির ক্ষেত্রেও সুতি এড়িয়ে শিফন বা জজের্ট বেশি উপযোগী। কাপড়ের রং নিবার্চনে উজ্জ্বল ও গাঢ় রংগুলো বাছাই করুন। বষার্র সঙ্গে নীল রঙের একটা সম্পকর্ রয়েছে। চেষ্টা করুন নীলের ছেঁায়া বা কম্বিনেশনে পোশাক পরতে। খুব বেশি পাতলা কাপড় এ সময় পরবেন না...

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

সাবিহা তানজুম
বষার্র পোশাক এখন আর আগের গাঢ় রঙের থিমে আটকে নেই। সাদা, অফহোয়াইট, হালকা গোলাপি, হালকা সবুজ, আসমানিসহ মোলায়েম রংগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। এসব রং আপনার চোখকে যেমন প্রশান্তি দেবে, তেমনি মনকেও ভরিয়ে তুলবে প্রাকৃতিক আনন্দে। কে ক্র্যাফটের ফ্যাশন ডিজাইনার শায়লা নূর বলেন, ‘বষার্য় আগের মতো আর গাঢ় রংকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে না। বষার্র সময় বেশিরভাগ সময় গরম থাকায় ঘুরেফিরে স্বস্তির জায়গায় আটকে যাচ্ছেন সবাই। সেজন্য বেছে নিচ্ছেন সুতি আর হালকা রঙের পোশাক। তাই এবারের বষার্য় আমরা এক রঙা ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি পেইন্ট ইমেজ। সেখানে বেছে নেয়া হয়েছে বষার্য় ফোটা কয়েকটি ফুল।’ যদিও বিগত দিনের ধারায় বষার্র পোশাকের রং হিসেবে ধরে নেয়া হয় গাঢ় রংকে। নীল, সবুজ তার মধ্যে অগ্রগণ্য। কিন্তু সময় বদলেছে। পরিবতর্ন ঘটেছে মানুষের রুচির। শৌখিনতা ভর করেছে প্রতিটি স্তরে। তাই তো বষার্র পোশাক আজকাল হালকা রঙে হাজির হচ্ছে। আসলে এখনকার ঋতু বৈচিত্র্যতাও কেমন জানি। এই মেঘ-বৃষ্টি তো এই প্রখর রোদ। আবার দেখা যাচ্ছে একদিন বৃষ্টি তো পরপর কয়েকদিন টানা গরমের প্রভাব। কখনো মনে হতে পারে আপনি আছেন ঋতুরাজ বসন্তে। তাই আর বষার্য় ভিজে কাপড় নষ্ট হবে সে চিন্তার দরকার হবে না। একই সঙ্গে শৌখিনতার পরিচয় দিতে হালকা রঙের এসব পোশাকই ক্রেতাদের আগ্রহের জায়গা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। আমাদের দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো বষার্র কথা মাথায় রেখে কাপড়, রং ও ডিজাইন নিবার্চন করে। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস বষার্ ঋতুর থিম ব্যবহার করে থাকে। বৃষ্টি, বষার্র ফুল, লতাপাতা, মেঘলা আকাশ এসব বিষয় উঠে আসে পোশাকের মোটিফ হিসেবে। এ ছাড়া বøক, স্ক্রিন প্রিন্ট, হালকা অ্যাম্ব্রয়ডারি ও চুমকির কাজ থাকে পোশাকগুলোতে। রঙের ক্ষেত্রে সবুজ, নীল, ছাই, আকাশি ইত্যাদি প্রাধান্য দিয়ে থাকে হাউসগুলো। মেয়েদের কামিজের কাটিংয়ে থাকবে একটু ঢিলেঢালা ভাব। বতর্মান সময়ে এই কাটিংই বেশি চলছে। ¯িøভলেস বা বাটারফ্লাই হাতার কামিজগুলো ট্রেন্ডি কামিজ থেকে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি হচ্ছে। সালোয়ার হিসেবে প্লাজো অথবা প্যান্ট কাটিং মেয়েদের বেশি পছন্দের। টপস, কুতির্ বা শাড়িতে বষার্র পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে অত্যন্ত ট্রেন্ডি লুকে। এসব পোশাকের পাশাপাশি বষার্র গাঢ় রঙের ট্রেন্ডও প্রচলিত রয়েছে। চাইলে গাঢ় নীল, সবুজ পোশাক বেছে নিতে পারেন। বৃষ্টির সময়টাতে আবহাওয়া খানিকটা গুমোট থাকে বলে জজের্ট কাপড়কে অনেকে বেশি প্রাধান্য দেন। কোনো অনুষ্ঠানে যেতে চাইলে অ্যান্ডি সিল্কের পোশাক পরা যেতে পারে। রংটাও একটু গাঢ় পরাই সুবিধাজনক। সহজে ধোয়া যায় বা ভিজলে তাড়াতাড়ি শুকায় তেমন পোশাকই নিবার্চন করুন। বষার্য় সালোয়ার-কামিজের ক্ষেত্রে সুতির বদলে সিনথেটিক ফেব্রিকের কাপড় বেছে নিতে পারেন। শাড়ির ক্ষেত্রেও সুতি এড়িয়ে শিফন বা জজের্ট বেশি উপযোগী। কাপড়ের রং নিবার্চনে উজ্জ্বল ও গাঢ় রংগুলো বাছাই করুন। বষার্র সঙ্গে নীল রঙের একটা সম্পকর্ রয়েছে। চেষ্টা করুন নীলের ছেঁায়া বা কম্বিনেশনে পোশাক পরতে। খুব বেশি পাতলা কাপড় এ সময় পরবেন না। পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে সাজের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। এই সময়ে মুখের সাজ হালকা হলেই ভালো লাগবে। কপালে ছোট টিপ এবং চোখে নীল, সবুজ বা ছাই রঙের কাজলের টান দিতে পারেন। চোখের সাজের ক্ষেত্রে ওয়াটারপ্রæফ কাজল, মাশকারা, লাইনার ব্যবহার করুন। আইশ্যাডো দিলে হালকা কোনো রং বেছে নিন। হালকা ফেস পাউডার লাগাতে পারেন। লিপস্টিকের বেলায় গেøাসি হলেই ভালো। হালকা গোলাপি, বাঙ্গি, হালকা বাদামি ধরনের রং বাছাই করতে পারেন লিপস্টিকের ক্ষেত্রে। চুলের জন্য চাই বষার্ উপযোগী বঁাধন। যাদের চুল লম্বা বা মাঝারি, তারা হাত খেঁাপা করতে পারেন। খেঁাপা আটকানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন চুলের কঁাটা বা ক্লিপ। পনিটেল করলেও খারাপ লাগবে না। এই বঁাধনটি যে কোনো পোশাকের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে যায়। চাইলে সাধারণ বেণির পাশাপাশি করতে পারেন ফ্রেঞ্চ বেণিও। চুলে দুটি ফুল গুঁজে দিলে আরও ভালো লাগবে। বৃষ্টি হলেই কাদা হবে, এ কথা নতুন করে মনে করিয়ে দেয়ার নিশ্চয়ই প্রয়োজন নেই। ছোট করে মনে করিয়ে দিই। বৃষ্টির মধ্যে চামড়ার জুতা একদম পরা যাবে না। আজকাল বাজারে প্লাস্টিকের কিছু জুতা পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো পরা যেতে পারে। বষার্য় কাদা থেকে পা বঁাচাতে অনেকে উঁচু স্যান্ডেল পরেন। তবে, অভ্যস্ত না হলে উঁচু জুতা পরা উচিত নয়। এতে বরং দুঘর্টনা ঘটতে পারে। আর জুতা কেনার সময় সোল দেখে নিতে হবে। পিচ্ছিল সোলের জুতা-স্যান্ডেল শুধু এই মৌসুমে নয়, সব সময় এড়িয়ে চলা উচিত। বৃষ্টির দিনে পাট ও চামড়ার ব্যাগও আলমারিতে তুলে রাখুন। ভিজে গেলেই শেষ! বষার্য় বাইরে যাওয়ার আগে সঙ্গে যা যা রাখতে পারেন ১। ছাতা বা রেইনকোট। ভেজা ছাতা ও রেইনকোট অনেক সময় বাইরে মেলে দেয়া সম্ভব হয় না। ভেজা ছাতা নিয়ে কোনো অফিস বা মাকেের্ট গেলে তা থেকে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে; যা খুব বিব্রতকর। এ জন্য ব্যাগে বড় একটি পলিথিনের ব্যাগ রাখতে পারেন। ভেজা ছাতা ও রেইনকোট সঙ্গে সঙ্গে মেলে দিতে না পারলে সেই প্যাকেটে ঢুকিয়ে রাখুন। ২। ব্যাগে রুমাল রাখা যেতে পারে। ভিজে গেলে গা ও চুল মুছে নিতে পারবেন। ৩। ছোট একটা পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগ পকেটে রাখুন। মোবাইলকে ভিজে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন। ৪। অফিসে পরার জন্য একটি বাড়তি স্যান্ডেল ও সম্ভব হলে বাড়তি পোশাক রাখুন। কাক ভেজা হয়ে গেলে পরনের পোশাক পালটে নিতে পারেন। ৫। মেয়েরা এ সময় লিপস্টিক, আইলাইনার, মাসকারা ইত্যাদি প্রসাধনী ব্যবহারের আগে তা পানিরোধক কিনা, দেখে নেবেন। ব্যাস! এসব ঠিকঠাক থাকলে বষাের্ক আর কী ভয়? ঝুমঝুম বষার্টা এবার জমিয়ে উপভোগ করুন।