শিমলায় কাটুক দুরন্ত প্রহর

প্রকাশ | ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুলস্নাহ
শিমলা; ইংরেজ আমলে ভারতের গ্রীষ্মকালীন এবং অধুনা হিমাচল প্রদেশের রাজধানী। বরাবরই পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় স্থান। আধুনিক ব্যবস্থা, নানা রকম সুযোগ-সুবিধা যেখানে। রয়েছে অসংখ্য দ্রষ্টব্যস্থান। শিমলা ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শৈলশহর। ২২১৩ মিটার যার ব্যাপ্তি। হিমালয়ের এই পাহাড়ি শহরটি ওক, দেবদারু, পাইন ও রডোডেনড্রন গাছে ঘেরা। খোলামেলা ম্যাল, দূরে বরফাবৃত শৃঙ্গ। উপত্যকায় বয়ে চলা ছোট ছোট জলের ধারা। দর্শককে সত্যিই মুগ্ধ করে। দ্য রিজ: শহরের মাঝে এই খোলা জায়গা দিয়ে দেখা যায় পাহাড়শ্রেণি। সকাল-সাঁঝে পায়ে পায়ে বেড়ানোর মনোরম জায়গা। এর শেষ প্রান্তে ১৭৫ বছর আগে গড়া 'নিও-গথিক' স্থাপত্যশৈলীর নজির 'ক্রাইস্ট চার্চ'। এরই লাগোয়া 'নিও টিউডর' স্থাপত্যশৈলীর নজির লাইব্রেরি ভবন দেখার মতো। স্ক্যান্ডাল পয়েন্ট : ম্যাল ও রিজের সংযোগে লাজপত রায় চক। যাকে বলে কিপলিঙের স্ক্যান্ডাল পয়েন্ট। এখান থেকেই ভাইসরয়ের কন্যা অপহৃত হন। তাই এই নাম। জাখু হিলস : রিজের পাশঘেঁষে টু্যরিস্ট অফিস। যার সামনে দিয়ে পথ গেছে শিমলার সর্বোচ্চ স্থান জাখু হিলসে। উচ্চতা ২৪৫৫ মিটার। রিজ থেকে খাড়া চড়াই পথে ২ কিলোমিটার। জাখুর চুড়োয় হনুমান মন্দিরও আছে। জাখু হিলস যাওয়ার এই পাহাড়ি পথে হেঁটে যাওয়ার মজাই আলাদা। তবে বাঁদরের উৎপাত বেশ। ওপর থেকে শিমলা শহর সুন্দর দৃশ্যমান। সেন্ট মাইকেল ক্যাথিড্রাল : এই চার্চটি শিমলার ম্যালে ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের নিচে অবস্থিত। জনি'স ওয়্যাক্স মিউজিয়াম : মাদাম তুসোর মিউজিয়ামের মতো এই মিউজিয়াম। বলিউড, খেলার জগৎসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জগদ্বিখ্যাতদের মোমের মূর্তি রাখা আছে। এই মিউজিয়ামটি ম্যালে এইচপিটিডিসি লিফটে অবস্থিত। স্টেট মিউজিয়াম : বিধানসভা ছাড়িয়ে ম্যাল। তারপর চার্চ থেকে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে ইনিভেরাম পাহাড়চুড়োয় অবস্থিত। হিমাচল প্রদেশের শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিভিন্ন নমুনা রয়েছে এই মিউজিয়ামে। রয়েছে চিত্রশিল্প, হস্তশিল্প, পুরাতাত্ত্বিক নমুনা। মিউজিয়ামটি সোমবার এবং অন্যান্য ছুটির দিনে বন্ধ থাকে। কালিবাড়ি : ম্যাল থেকে চড়াই পথে বানটনি পাহাড়ে অবস্থিত এই মন্দির পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। ১৮৪৫ সালে তৈরি এই মন্দিরে বাঙালি পর্যটকদের বেশি দেখা যায়। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডি : ১৯৮৩ মিটার উচ্চতায় ম্যাল থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ব্রিটিশ শৈলীতে তৈরি এই ভবনটি ব্রিটিশ আমলে ভাইসরয়ের বাসভবন ছিল। তার পর স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে হয় রাষ্ট্রপতির গ্রীষ্মবাস। এটি এখন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডি। ইনস্টিটিউট সংলগ্ন লন এবং সবুজ বনের বাড়তি আকর্ষণ। এখানে টিকেট কেটে ঢুকতে হয়। রোববার ও অন্যান্য ছুটির দিনে এটি বন্ধ থাকে। দ্য গেস্নন : শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে ১৯৮৩ মিটার উচ্চতায় ওক, দেবদারু, পাইন, পপলারের গহিন বন, বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী। এটি একটি আকর্ষণীয় পিকনিক স্পট। আনানদেল : গেস্ননের পুবে শহরের নিচুতে পাহাড়ে ঘেরা পাইন আর দেবদারুতে ছাওয়া অঞ্চল। ব্রিটিশ রমণী আন্নার প্রথম আগমনের স্মারকরূপে নাম। সান্ধ্যভ্রমণে রমণীয় আনানদেল। এর এক প্রান্তে একটি বহু প্রাচীন মন্দির আছে। প্রসপেক্ট হিল : শহর থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ২১৪৫ মিটার উঁচুতে বয়লৌগঞ্জ থেকে মিনিট পনেরো পাহাড়িপথে চড়ুইভাতির মনোরম স্থান। নৈসর্গিক শোভার জন্য প্রসপেক্ট হিলের খ্যাতি। কামনাদেবী মন্দির: প্রসপেক্ট চুড়োয় ৩০০ বছরের প্রাচীন কামনাদেবীর তথা দুর্গার মন্দির। মন্দিরচত্বর থেকে পুরো শিমলা শহরটি উপভোগ করা যায়। তারাদেবী মন্দির : শহর থেকে সাড়ে ৯ কিলোমিটার দূরে ১৮৫১ মিটার উঁচুতে তারাদেবী মন্দির। সঙ্কটমোচন মন্দির : তারাদেবী যাওয়ার পথে পড়ে সঙ্কটমোচন মন্দির। ১৮৭৫ মিটার উচ্চতায় হনুমান মন্দির। চাদউইক ফলস : শহর থেকে ৫ কিলোমিটার আগে ১৯৮৩ মিটার উচ্চতায় স্টেশন সামার হিল। এখান থেকে আরও ২ কিলোমিটার উত্তরে ১৫৮৬ মিটার উচ্চতায় ৬৭ ফুট উঁচু থেকে নামছে চাদউইক ফলস। বর্ষায় রূপ বাড়ে প্রপাতের। ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার হল : শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে কুফরির পথে রূপসী তীর্থন উপত্যকায় ২৫৯৩ মিটার উঁচুতে পাইনে ছাওয়া ২২ হেক্টর এলাকাজুড়ে ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার হল। বর্ষার পর পাহাড়ি ফুলের সম্ভার জায়গাটি মধুময় করে তোলে। কুফরি : ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার হল থেকে ৩ কিলোমিটার তথা শিমলা থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে ২৭২০ মিটার উচ্চতায় দেবদারুতে ছাওয়া পটে আঁকা ছবি কুফরি। তুষারাবৃত পর্বতশ্রেণি সুন্দর দৃশ্যমান কুফরি থেকে। এখানেই রয়েছে ইন্দিরা টু্যরিস্ট পার্ক, বিপরীতে হিমালয়ান নেচার পার্ক ও মিনি জু। হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়ে যাওয়া যায় মহাসু পিকে। আগে শীতকালে কুফরিতে স্কি-এর আসর বসত। ফাগু : কুফরি থেকে ৬ এবং শিমলা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে ২৫১০ মিটার উচ্চতায় নৈসর্গিক শোভার জন্য বিখ্যাত। চায়ল : শিমলা থেকে কুফরি হয়ে ৪৫ কিলোমিটার দূরে ২২৫০ মিটার উচ্চতায় চায়ল। পাটিয়ালা স্টেটের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল চায়ল। চায়ল প্রাসাদ এখন হিমাচল প্রদেশ পর্যটন পরিচালিত একটি বিলাসবহুল হোটেল। দেবদারু, ওক, রডোডেনড্রন আর হেমলকে ছাওয়া চায়লে রয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্রিকেট খেলার মাঠ। লিটল মাউনটেনস হেভেনও বলা হয় চায়লকে। মাসোব্রা : শিমলা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ২১৪৯ মিটার উঁচুতে চড়ুইভাতির মক্কা মাসোব্রা। আছে কাঠের মন্দিরে দেবী মহাকালি ও শিব। আর আছে ভীমাকালি পাহাড়চুড়ো। আরও ৩ কিলোমিটার যেতে ক্রেগনানোর-এ ওক আর পাইনের গহিন বনে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক। নলদেরা : শিমলা থেকে ৮ কিলোমিটার পুবে ঢালি হয়ে আরও ১৫ কিলোমিটার যেতে ২০৪৪ মিটার উচ্চতায় পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য নলদেরা। মুহুর্মুহু বাঁক নিয়ে পথ নামে নিচুতে, বয়ে চলেছে শতদ্রম্ন নদী। আর আছে প্রাচীন মন্দির, দেবতা মাহুং নাগ। আছে বিশ্বের প্রাচীনতম নাইন হোল গলফ্‌? কোর্স। তত্তপানি : নলদেরা থেকে আরও ২৩ কিলোমিটার দূরে ৬৫৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত তত্তপানি। উষ্ণ প্রস্রবণের জন্য বিখ্যাত। বয়ে চলেছে শতদ্রম্ন নদী। যেভাবে যাবেন : জুব্বের হাট্টি বিমানবন্দর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে শিমলা শহর। গাড়ি ভাড়া করে চলে যেতে পারেন। এ ছাড়া কালকা স্টেশন থেকে শিমলা যাওয়ার জন্য রয়েছে ন্যারোগেজ টয়ট্রেন। ভারতের প্রায় সব বড় জায়গার সঙ্গে কালকা ট্রেনপথে যুক্ত; অথবা ভারতের যে কোনো জায়গা থেকে দিলিস্ন। দিলিস্ন থেকে ট্রেনে কালকা। এ ছাড়া চন্ডীগড় থেকে ১১৭ কিলোমিটার, দিলিস্ন থেকে ৩৭০ কিলোমিটার শিমলা। দিলিস্ন এবং চন্ডীগড় থেকে শিমলা আসার জন্য লাক্সারি বাস ও ট্যাক্সির ব্যবস্থা রয়েছে। কালকা থেকেও গাড়ি ভাড়া করে শিমলা যাওয়া যায়। দূরত্ব ৮৭ কিলোমিটার। ট্রেনের সময় জানা যাবে বৎধরষ.রহ থেকে। বেড়াবেন যেভাবে : শিমলার দ্রষ্টব্যের অনেকগুলোই হেঁটে ঘুরে নিতে পারেন। একটু দূরের যেগুলো, গাড়ি ভাড়া করে ঘুরুন। এ ছাড়া হিমাচল পর্যটনের প্যাকেজ টু্যরেও ঘুরতে পারেন শিমলার আশপাশের জায়গাগুলো। আবহাওয়া : শীতকালে হিমাঙ্কের নিচে চলে গেলেও গরমকালে এখানে বেশ মনোরম আবহাওয়া থাকে। কেনাকাটা : বন্ধুবান্ধবের জন্য সু্যভেনির নিয়ে যেতে চান, ম্যালের আশপাশেই আছে অনেক সু্যভেনির শপ। নইলে সে সব ছাড়িয়ে নেমে যান লক্কর বাজারে। সবকিছুই পাবেন সেখানে, বিশেষ করে কাঠের নানা সামগ্রী। আর তা না হলে ম্যাল থেকে সঙ্কীর্ণ গলিপথে নেমে বাজার। পেয়ে যাবেন ওয়াকিং স্টিক, কিন্নরী মাফলার, কুলু টুপি, শাল, পশমজাত নানা কিছু।