সুস্থ থাকুন হেমন্তের দিনেও

খুব সকালে হালকা কুয়াশা যেমন শীতের আমেজ তৈরি করে দুপুরে কিন্তু টানা রোদ একেবারে গ্রীষ্মের কথা মনে করিয়ে দেয়। বিকেলটা অল্প সময় হলেও খুব দারুণ একটা সহনশীল তাপমাত্রা থাকায় মনটা ফুরফুরে থাকে। রাতে কিন্তু আবার হঠাৎ একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব।

প্রকাশ | ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ডা. তানজিনা আল্‌-মিজান
প্রকৃতি সৃষ্টিকর্তার অসীম দান। প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ আমরা সবাই। তবে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনারও কিন্তু শেষ নেই। এই প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাই যেন ভার। যেমন- হেমন্তকালের ঝুম বৃষ্টি তো পৌষের শেষেও গরম কাপড়ের তেমন ব্যবহার নেই। বর্ষাকালে বৃষ্টির অপেক্ষা করতে করতে হেমন্তের হিম হিম বাতাস দোলা দিয়ে যাচ্ছে শরীরে। হেমন্তের এই হিম হিম বাতাস কিন্তু শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসছে আমাদের মধ্যে। বিভিন্ন ধরনের সবজি আর পিঠা-পায়েসের উৎসব যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে আমাদের। কিন্তু সাবধান! কারণ ঋতু পরিবর্তনের এই দোদুল্যমান অবস্থায় বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিও কিন্তু হাতছানি দিয়ে ডাকছে। একটু নিয়মের ব্যতিক্রম হলেই ব্যাস। অসুস্থ হয়ে পড়তে হবে। খুব সকালে হালকা কুয়াশা যেমন শীতের আমেজ তৈরি করে দুপুরে কিন্তু টানা রোদ একেবারে গ্রীষ্মের কথা মনে করিয়ে দেয়। বিকেলটা অল্প সময় হলেও খুব দারুণ একটা সহনশীল তাপমাত্রা থাকায় মনটা ফুরফুরে থাকে। রাতে কিন্তু আবার হঠাৎ একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। এই যে, প্রকৃতির তাপমাত্রার হেরফের এটা আমাদের শরীরের তাপমাত্রার সঙ্গে মিলিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন। তাই তো এই সময় জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা যেন প্রত্যেক ঘরে ঘরে বাসা বাঁধে। সঙ্গে বয়স্কদের বিভিন্ন হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা, মাথাব্যথা, সব শরীরে ব্যথা এগুলো তো আছেই। শরীরটাকে সময়মতো বিছানা থেকে তুলে আনাটাই যেন কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় গৃহকর্ত্রীর। তাকেই তো সকালে উঠে নাশতা তৈরি থেকে একেবারে রাতের খাবার পর্যন্ত সব নিজ দায়িত্বেই করতে হয়। প্রকৃতির কথা ভাবার সময় তো তার নেই বললেই চলে। তবে এই সময়ে গৃহকর্ত্রীকে অবশ্যই কিছু জিনিস খেয়াল করতে হবে। এতে বাড়ির বৃদ্ধ থেকে ছোট শিশুটি পর্যন্ত সবাই ভালো থাকতে পারবে এবং গৃহকর্ত্রী নিজেও ভালো থাকবেন যা অতি প্রয়োজনীয়। সকালবেলা যেহেতু একটু শীত শীত ভাব থাকে কাজেই এই সময় শরীরে পাতলা একটি চাদর জড়িয়ে নিতে পারলে ভালো। এতে বয়স্কদের শরীরে ব্যথা, হাড়ের ব্যথা এগুলো অনেক সময় কমে যায়। বাচ্চারা যারা স্কুলে যায় তাদের ইউনিফর্মের নিচে পাতলা একটি গেঞ্জি পরিয়ে দিতে পারলে হঠাৎ সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে ঠান্ডা লেগে সর্দি হওয়ার হাত থেকে বাঁচা যাবে। বাচ্চার স্কুল থেকে ফিরলে তখন কিন্তু তাদের গরম লাগবে কারণ দুপুরের চড়া রোদে আর স্কুলের ক্লাসের ফাঁকে খেলাধুলা করার জন্য তাদের গরম লাগাটাই স্বাভাবিক। তবে মনে রাখতে হবে বাইরের গরম থেকে বাসায় এসেই সঙ্গে সঙ্গে গোসল না করানোই ভালো। একটু সময় পার করে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলে তখন কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দিলে বাচ্চা অনেক আরাম পাবে। এখন দিন যেহেতু ছোট হয়ে আসছে কাজেই গোসল করাতে করাতে দেরি করা ঠিক হবে না। বৃদ্ধ এবং বাচ্চারা এমনকি সবাই যারা বাসায় থাকেন তারা দুপুরের মধ্যে গোসল সেরে নিলে ভালো। বিকেলবেলা বাচ্চারা বাইরে খেলতে যাওয়ার সময় ফুল হাতা গেঞ্জি অথবা জামা পরিয়ে দিলে ভালো হবে। তবে খুব বেশি গরম লাগবে এমন পোশাক বাচ্চাদের পরানো যাবে না এই সময়। কারণ খেলাধুলার পরই কিন্তু বাচ্চারা ঘেমে যায়। এই ঘাম শরীরে বসে গেলেও বাচ্চাদের সর্দি, কাশি এমনকি জ্বর পর্যন্ত আসতে পারে। যে সব পরিবারে বাচ্চারা স্কুল ও কলেজে যায় সে সব পরিবারের মায়েদের যেন চিন্তার শেষ নেই। কারণ এখন পরীক্ষার সময় এবং বার্ষিক পরীক্ষা। এই সময় বাচ্চাদের সুস্থ থাকাটাই যেন একটা চ্যালেঞ্জ। কাজেই বাচ্চাদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। যেন কোনোভাবেই তারা অসুস্থ হয়ে না পড়ে। বয়স্করা যেন বিকালে বাসায় বসে না থাকেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একটু বাইরে হাঁটাহাঁটি করা যেমন হার্টের জন্য ভালো তেমনি বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথাও কিন্তু কমে। আর ডায়াবেটিস রোগীদের তো হাঁটা অতি জরুরি। গৃহকর্ত্রীরও উচিত বিকালে যেভাবেই হোক একটু সময় বের করে আধা ঘণ্টা হলেও হাঁটা। তাতে তার শরীর ও মন উভয়েই ভালো থাকবে। তার সুস্থতার উপরেই তো পরিবারের অন্য সবার সুস্থতা অনেকাংশে নির্ভর করছে। রাতে শোবার সময় গরম লাগলেও ভোরের দিকে কিন্তু শীত শীত ভাব অনুভূত হয়। কাজেই রাতে শোবার সময়ই যদি ফ্যানের গতি মাঝামাঝি করে রাখা যায় তবে কিন্তু সর্দি ও শরীরে ব্যথা থেকে দূরে থাকা যাবে। খুব প্রয়োজন ছাড়া এসি এসময় ব্যবহার না করাই ভালো। বাড়ির কর্তা যিনি সকালে অফিসে যান আর বাড়ি ফেরেন সন্ধ্যায়, তার জন্যও বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। সকাল আর সন্ধ্যার এই ঠান্ডা তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্য পাতলা কিছু গরম কাপড় ও মোজা ব্যবহার করা যেতে পারে। যেহেতু যাত্রাপথে অনেক বাতাসও থাকে যা কান, নাকে লেগে সর্দি-কাশি হতে পারে। সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফিরে এক বাটি গরম সু্যপ কিন্তু কর্তাবাবুকে একেবারে চাঙ্গা করে তুলবে। বিভিন্ন প্রতিকূলতা তো থাকবেই। তাই বলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা তো আর যাবে না। একটু সাবধানতা আর একটু নিয়ম মেনে চলতে পারলেই প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব হবে এবং সুস্থ ও সুন্দর থাকা যাবে।