আর্দ্রতা চাই ত্বকের

শীত আসতে না আসতে বদল আসে প্রকৃতিতে। বদলে যায় আবহাওয়া, পরিচিত দৃশ্যগুলো। প্রকৃতি হয়ে ওঠে শুষ্ক ও রুক্ষ। সে রুক্ষতার প্রভাব পড়ে মানুষের ওপরও। ত্বক হয়ে ওঠে খসখসে। ঠোঁট ফেটে যায়। পায়ের গোড়ালি থেকে চামড়া উঠতে থাকে। চুল ভরে ওঠে খুশকিতে। আরও নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয় শীতের আবির্ভাবে। আপনার শরীর ভেতর থেকে আর্দ্র না হলে সেটার প্রভাব পড়বে আপনার ত্বকের ওপর। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। কিছু বিষয় মেনে চললে এই শীতেও আপনার ত্বক থাকবে প্রাণবন্ত ও ঝলমলে।

প্রকাশ | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

রঙ বেরঙ ডেস্ক
সুন্দর, সতেজ ত্বকের জন্য যত্নের পাশাপাশি উদ্বেগমুক্ত থাকাও জরুরি - মডেল: পিংকি হালদার
শীত আসতে না আসতে বদল আসে প্রকৃতিতে। বদলে যায় আবহাওয়া, পরিচিত দৃশ্যগুলো। প্রকৃতি হয়ে ওঠে শুষ্ক ও রুক্ষ। সে রুক্ষতার প্রভাব পড়ে মানুষের ওপরও। ত্বক হয়ে ওঠে খসখসে। ঠোঁট ফেটে যায়। পায়ের গোড়ালি থেকে চামড়া উঠতে থাকে। চুল ভরে ওঠে খুশকিতে। আরও নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয় শীতের আবির্ভাবে। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। কিছু বিষয় মেনে চললে এই শীতেও আপনার ত্বক থাকবে প্রাণবন্ত ও ঝলমলে। শীতকালে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে কিছু বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে। যেমন- পর্যাপ্ত পানি পান করা, শীতকালে প্রচুর পানি পান করতে ভুলবেন না। আপনার শরীর ভেতর থেকে আর্দ্র না হলে সেটার প্রভাব পড়বে আপনার ত্বকের ওপর। সুগার লেভেল ঠিক থাকলে আপনি ডাবের পানি ও ফলের জুস করে খেতে পারেন। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, উন্নত তেলভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার ত্বকে ব্যবহার করুন। এটি আপনার ত্বকে পানি ধরে রাখতে সহায়তা করবে। কারণ এটি জলভিত্তিক লোশনগুলোর চেয়ে বেশি আর্দ্রতাযুক্ত থাকে। ত্বকের পাশাপাশি পুরো বাড়িতে বা নিজ কক্ষে আর্দ্রতা বজায় রাখতে হিমোডিফয়ার ব্যবহার করতে পারেন। ওমেগা-থ্রি ফ্যাট বা চর্বি: খাদ্য বাছাইয়ে ওমেগা-থ্রি ফ্যাট বা চর্বি রাখুন, আপনার হাতের উপরিভাগ যদি নরম ও মসৃণ না হয় তার অর্থ আপনার শরীরে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটের ঘাটতি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আপনি স্যালমন, অলিভওয়েল ও ওয়ালনাট খাদ্যতালিকায় রাখুন। শসা ও সেলারিতে (এক ধরনের শাক) প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে যা আপনার ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ফিরিয়ে দিতে পারে। কমলা, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, লাল মরিচ, স্পিন্যাচ ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টজাতীয় খাবার যাতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, ই, আয়রন এবং ওমেগা-থ্রি ফ্যাট। যে কোনো গাঢ় সবুজ সবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন। অরগানিক সাবান ও তেল: সাবান পরিহার: ত্বকে কেমিক্যাল জাতীয় সাবান পরিহার করুন, যে কোনো এন্টিব্যাক্টেরিয়াল সাবান ও প্রসাধন সামগ্রীতে রয়েছে অ্যালকোহল ও কৃত্রিম সৌরভ যা আপনার ত্বকের স্বাভাবিক তেলকে নষ্ট করে। অরগানিক বা প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি সাবান ও তেল ব্যবহার করুন। ত্বকের যত্নে ল্যাকটিক এসিড: ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ল্যাকটিক এসিড। মুখে ব্যবহারের যে কোনো ক্রিম কেনার আগে পেছনে ইনগ্রিডিয়েন্স পড়ে নিশ্চিত হোন আপনার ক্রিমে ল্যাকটিক এসিড উপাদানটি রয়েছে কিনা। গোসলে পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখুন: শীতকালে অনেকেই গরম পানিতে দীর্ঘক্ষণ গোসল নিতে পছন্দ করেন। অতি গরম পানি আপনার ত্বককে শুষ্ক করে দিতে পারে। গোসলের পানি কুসুম গরম রাখুন। এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেল ব্যবহার করুন: এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেল ত্বকের যত্নে অত্যন্ত কার্যকর পণ্য হিসাবে কাজ করে। নারকেল তেল তার উচ্চস্তরের ফ্যারুলিক ও পিস্নকুমারিক এসিডের কারণে বিনা মূল্যে ত্বকের ভিত্তিগত ক্ষতির সঙ্গে লড়াই করে এবং এর প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলো আপনার ত্বককে সতেজ রাখবে। তা ছাড়া শীতকালে সাধারণত মুখ ও শরীরের ত্বকের পাশাপাশি গোড়ালি, হাঁটু এবং কনুইয়ের অংশগুলোও রুক্ষ ও কালো হয়ে যায়। গোড়ালি, হাঁটু এবং কনুইয়ের রুক্ষতা ও কালো দাগ দূর করতে প্রথমে কিছুক্ষণ পানি দিয়ে জায়গাটি ভিজিয়ে রাখুন। তারপর নারিকেল তেলের প্রলেপ দিন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে নিজেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন। ত্বকের জ্বলুনি ভাব দূর করতে যা করতে পারেন: অলিভ অয়েল সাধারণত সব ধরনের ত্বকের পক্ষেই খুব কার্যকর। এর মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত ফ্যাটি এসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডান্ট যা শুধু আপনার মুখই নয় বরং পুরো শরীরের ত্বকের যত্নে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। গোসলের আধ ঘণ্টা আগে মুখে ও পুরো শরীরে অলিভ অয়েল মেখে নিন। তার পর কুসুম গরম পানিতে গোসল সেরে লাগিয়ে নিন এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেল। এ ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা খুব উপকারী। অ্যালোভেরা কেটে শাঁসটা বের করে ত্বকে লাগালে খুব দ্রম্নত আপনার ত্বকের জ্বলুনি ও চুলকানি কমে যাবে। মাথার তালুর ত্বকের যত্নে যা করণীয়: মাথার তালুর ত্বকে শীতকাল ছাড়াও অনেকেই শুষ্কতা অনুভব করেন। এ ক্ষেত্রে গোসলের আগে এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেন তেল, ভিটামিন-ই তেল, আলমন্ড তেল ও রিগ্যান তেল সামান্য গরম করে মাথার ত্বকে আঙুলের ডগা দিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। তারপর শ্যাম্পু করে নিন। এতে উপকার পাওয়া যাবে। ত্বকের যত্নের পাশাপাশি যে বিষয়ে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে, তা হলো দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা। দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে দেয়। মানসিক চাপ ত্বকের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে। ফলে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, অণুজীব ও রাসায়নিকের প্রভাবে আমাদের ত্বক অধিকতর প্রভাবিত হয়। কাজেই সুন্দর, সতেজ ত্বকের যত্নে উদ্বেগমুক্ত থাকা জরুরি।