ঈদে রান্না ঘরের প্রস্তুতি

কোরবানির ঈদ এলেই যেন রান্নাঘরে একটা বাড়তি চাপ আসে। সারা মাসের বাজার-সদাই বা মাছ-মাংস গোছানোও ওই একদিনের বিশাল ধাক্কার থেকে অনেক সহজ মনে হয়। কেননা প্রতি বছর ওই একটা দিনে রান্নাঘরে মাংস আর হাড়ের পাহাড় জমা হয়, সঙ্গে রক্ত আর চবির্র উৎপাত তো আছেই। যতই এক্সপাটর্ হন না কেন, কোরবানির দিন সবকিছু সামলানো যে কত কঠিন তা আপনি মানতে বাধ্য! সেই ধাক্কা সামলাতে আপনার প্রয়োজন ভালো মানের ও কাযর্কর রান্নাঘরের সামগ্রী। বুদ্ধি করে সব সামগ্রী আগে-ভাগে সংগ্রহ করে আর সেগুলো ঠিকঠাক করিয়ে নিলে কোরবানির ঈদে কাজের বোঝা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। লিখেছেন সেলিনা মাহজাবিন

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পরিচ্ছন্ন রাখুন কাউন্টার আর কাটাকুটির যন্ত্রপাতি রান্নাঘরের কাউন্টার যে ম্যাটেরিয়ালেরই হোক না কেন, খাবার আর তেল-মসলা তাতেই লাগবেই আর পরিষ্কার না করা হলে তা চটচটে দাগে পরিণত হতে মোটেও সময় লাগে না। কোরবানির সময় অপরিষ্কার কাউন্টার থেকে আপনার হাড়-মাংসের পাহাড়ে জীবাণু ছড়াতে পারে। আর সবকিছু প্যাকেট করে তুলে ফেলার পরও কাউন্টার চটজলদি পরিষ্কার করে ফেলা উচিত নয়তো রক্ত-মাংসের মধ্যে থাকা জীবাণু পরবতীর্ রান্নার মধ্যেও সংক্রামিত হতে পারে। কাউন্টার পরিষ্কার করার জন্য প্রথমে এর ওপর থেকে সবকিছু সরিয়ে ফেলতে হবে। কাউন্টারের ওপরের সামগ্রীগুলোর না সরালে এগুলোর নিচে আর কোণায় ময়লা থেকেই যায়। কাটিং বোডর্ আর ছুরিও ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। একটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে কাজ করার শান্তিই অন্যরকম। কাটিং বোডের্ কাজ করার অভ্যাস যদি থাকে, তাহলে শাক-সবজি আর মাংসের জন্য আলাদা বোডর্ ব্যবহার করুন। যদি আপনার বোডির্ট টেম্পারড গøাসের হয়ে থাকে তাহলে তা ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ কেননা এর তল মসৃণ এবং এতে ব্যাকটেরিয়া বাসা বঁাধতে পারে না, যেমনটা প্লাস্টিক বা কাঠের বোডের্ প্রায়ই হয়ে থাকে। তবে যে ম্যাটেরিয়ালই হোক না কেন, কাজ শেষে ভালোভাবে বোডির্ট পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। ছুরির ক্ষেত্রেও একই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত; মাংস কাটার পরপরই ভালোভাবে না ধুয়ে একই ছুরি শাক-সবজি কাটার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। অনেক খাবারের আইটেম এমন আছে যেগুলো কাটা-ধোয়া থেকে শুরু করে রান্না করা পযর্ন্ত আলাদা রাখা উচিত, নাহলে পরস্পর থেকে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। রান্না করা খাবার কখনো কঁাচা মাংসের আশপাশে রাখবেন না। আর প্রতি কাজের পর পর আপনার হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে, নয়তো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। খাবার প্রস্তুত শুরু করার আগেই কাউন্টারের সব কাজ সেরে ফেলুন। এতে কাজ করার জন্য অনেকখানি খোলা জায়গা পাবেন। রান্না শেষ করে ফেলার পরও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। নাহলে ময়লা-আবজর্না জমে গিয়ে পিঁপড়া, পোকামাকড় থেকে শুরু করে জীবাণুর আক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। পরের দিনের জন্য বসে না থেকে দিনের কাজ দিনে শেষ করে ফেললে পরের রান্নাটা করার সময় আপনাকে আর কোনো ঝামেলাই পোহাতে হবে না। কাযর্করী রান্নাঘরের সামগ্রী আপনার বিপদের বন্ধু রান্না করা মানেই আগুন আর তাপের ব্যবহার, স্বাভাবিকভাবেই কোরবানির সময় আপনার ওভেন, চুলা আর মাইক্রোওয়েভের ওপর দিয়ে বিশাল ঝড় বয়ে যায়। কারও কারও ধারণা যে এসব সামগ্রীর কখনো মেরামতের প্রয়োজন পড়ে না, তবে যদি আপনি এগুলোর সবোর্চ্চ ব্যবহার করতে চান তাহলে কিছুটা মেহনত আপনাকে এগুলোর পিছনেও দিতে হবে। আপনার ওভেন পরিষ্কার করার জন্য ফ্যাক্টরি-সেটিংস বা সেলফ-ক্লিনিং অপশন ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে নিজেও হাত লাগিয়ে ভেতরের সব তেল-ময়লা ঘষে তুলে ফেলুন। বেকিং সোডা আর পানির মিশ্রণ নিয়ে একটি স্পঞ্জ অথবা স্ক্রাব-প্যাডের সাহায্যে যতটা সম্ভব ময়লা পরিষ্কার করে নিন। ঝঁাঝরির ফঁাকফোকর থেকে খাবারের কণা ও তেল চিটচিটে ময়লা সরিয়ে ফেলুন। মাইক্রোওয়েভের ক্ষেত্রে কেবল ভেতরটা হালকা মুছে নিলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। যদি আপনার মাইক্রোওয়েভে ঘূণার্য়মান প্লেট থেকে থাকে তবে চেক করে নিন সেটি জায়গামতো বসানো আছে কিনা আর ঠিকমতো কাজ করছে কিনা। মাইক্রোওয়েভটি সত্যিকার তাপমাত্রা দেখাচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে শঙ্কা থাকলে তাপস্থাপকটি চেক করে নিন। সমস্যা দেখা দিলে টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিন এবং সম্ভব হলে এগুলো সারিয়ে ফেলুন। হয়তো কিছু সামগ্রী আপনার কাছে নাও থাকতে পারে। সম্ভব হলে নতুন সামগ্রী কিনে নিন। ইলেকট্রিক বা ইন্ডাকশন চুলার ক্ষেত্রে সত্যিকার অথের্ তেমন কোনো রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু গ্যাসের চুলার ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। বানাের্রর মুখগুলো যেন বদ্ধ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন, সেই সঙ্গে সব বানাের্র যেন সমান মাপের অগ্নিশিখা তৈরি হয়। চুলার ঝঁাঝরিগুলো খুব সহজেই তেল-ময়লা আর ঝোল লেগে খুব শিগগিরই নোংরা হয়ে যায়, নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে অনাকাক্সিক্ষত আগুন লাগা প্রতিরোধ করা যায়। যে কোনো রান্নাঘরে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় আর সবোর্চ্চ ব্যবহৃত সামগ্রী হলো ফ্রিজ আর কোরবানি আসার আগেই ফ্রিজ গুছিয়ে ফেলা উচিত। পুরনো আর বেঁচে যাওয়া খাবার ফ্রিজে জমিয়ে না রেখে ফেলে দিন, কেননা কোরবানির সময় আপনার ফ্রিজে অনেক বেশি জায়গা প্রয়োজন হয়। আপনার যা প্রয়োজন নেই সেগুলো সরিয়ে ফেলুন। হিমায়িত খাবারেরও মেয়াদ থাকে, তাই ভালোভাবে মেয়াদোত্তীণের্র তারিখ বারবার চেক করুন। খেয়াল রাখুন যেন আপনার ফ্রিজের তাপমাত্রা সবসময় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে। মাংস সংরক্ষণের সময় ফ্রিজের সবচেয়ে ঠাÐা অংশে রাখুন। সব হাড়-মাংস ছোট ছোট প্যাকেট করে ফ্রিজারে রেখে দিন, যতদিন না আবার সেগুলো ব্যবহার করা হবে ততদিন পযর্ন্ত প্যাকেটগুলো এভাবেই রেখে দেয়া ভালো। আপনার রান্নাঘরকে যে কোনো চ্যালেঞ্জের জন্য সবসময় প্রস্তুত রাখতে পারলে কোরবানি হয়ে উঠবে আরও সহজ আর আনন্দের। তাই এবারের ঈদ ঝঞ্ঝাট ছাড়া কাটাতে আজ থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিন।