ঐতিহাসিক মুজিবনগরে

প্রকাশ | ১৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০

আবু আফজাল মোহা. সালেহ
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ভারতের আগরতলায় এক সভায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীমুক্ত কুষ্টিয়া জেলার মহকুমা চুয়াডাঙ্গাকে বেছে নেয়া হয় এবং ১৪ এপ্রিল অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু হানাদার বাহিনী তা জেনে ফেলে ও চুয়াডাঙ্গার ওপর পাকিস্তানি বাহিনী হামলা শুরু করে এবং চুয়াডাঙ্গার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পরবর্তী সময়ে শপথ অনুষ্ঠানের জন্য ভারত সীমান্তবর্তী বৈদ্যনাথতলাকে বেছে নেয়া হয়। অস্থায়ী সরকার বা মুজিবনগর সরকার ১৭ এপ্রিল এখানে শপথ নেয়। পরে এ স্থানের নামাকরণ মুজিবনগর করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী ঐতিহাসিক মর্যাদা পায়। মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ : মুজিবনগর ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ হলো মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। ১৬০ ফুট ব্যাসের গোলাকার স্তম্ভের ওপর মূল বেদিকে কেন্দ্র করে ২৩টি ত্রিভুজাকৃতি দেয়ালের সমন্বয়ে স্মৃতিসৌধটি গঠিত। স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে গোলাকার বৃত্তের মাধ্যমে শহিদ বুদ্ধিজীবীর খুলি বোঝানো হয়েছে। স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে ওঠার জন্য মোট ১১টি সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে ১১টি সেক্টরের প্রতীকী হচ্ছে এই ১১টি সিঁড়ি। স্মৃতিসৌধের মূল নকশা স্থপতি তানভীর করিমের। দেয়ালগুলো উদীয়মান সূর্যের প্রতীক। ৩০ লাখ শহিদকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য স্মৃতিসৌধের মেঝেতে ৩০ লাখ পাথর বসানো হয়েছে। পাশেই রয়েছে মিউজিয়াম। স্বাধীনতাযুদ্ধের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাকে গুরুত্বপূর্ণ আলোকচিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শনের জন্য মূল কমপেস্নক্স ভবনের ভেতরে মিউজিয়ামটি নির্মাণ করা হয়েছে। মিউজিয়ামের ভেতরে ১০ জন জাতীয় নেতার তৈলচিত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ২৪টি বড় আকারের তৈলচিত্র দেখতে পাওয়া যায়। পাখির চোখে মুজিবনগর : এরপর দেখতে পাবেন অন্যতম আকর্ষণ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপেস্নক্স। ৬৬ একরের বিশাল আয়তনের নান্দনিক এই কমপেস্নক্সটিতে একটি জাদুঘর, মিলনায়তনসংলগ্ন পস্নাজা, স্বাধীনতা ক্লাব, পাঠাগার, রেস্টহাউস, হেলিপ্যাড, পিকনিক স্পটসহ নানা সুবিধা সংযোজন করা হয়েছে। মূল কমপেস্নক্সটি চারতলা উঁচু একটি বৃত্তাকার ভবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে, যার প্রতিটি তলায় দর্শনার্থীদের জন্য প্রশস্ত করিডোর রাখা হয়েছে। মানচিত্র : করিডোরে দাঁড়িয়ে নিচে তাকালে বাংলাদেশের একটি বিশাল মানচিত্র দেখতে পাওয়া যায়। মানচিত্রের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধকালীন ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। মানচিত্র শরণার্থী : বাইরে কমপেস্নক্স-সংলগ্ন ছয়টি গোলাপ বাগান-যা ছয় দফার প্রতীক। দেখবেন ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ, মন্ত্রিসভা, পতাকা উত্তোলন, পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য। আছে পাকবাহিনী কর্তৃক বাঙালি নারী ও নিরীহ জনগণের ওপর নির্যাতনের ভাস্কর্য। বিরাটাকার দুটি পাকা দেয়ালে লিখে রাখা হয়েছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণপত্র। বিশাল চত্বরে আছে হেলিপ্যাড আর পার্কিংয়ের জায়গা। আছে রেস্টহাউস। এ যেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ইতিহাস। চোখ টেনে নেবে ঐতিহাসিক কেন্দ্রিক ভাস্কর্যগুলো। পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করবে। অজান্তেই যুদ্ধকালীন অনেক অজানা জেনে যাবেন ঘুরতে ঘুরতে। একটু দূরেই চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্তবর্তী নাটদহে দেখতে পারেন ঐতিহাসিক আট কবর। স্বাধীনতা যুদ্ধে এখানে আটজন বীর যোদ্ধাকে হত্যা করেছিল পাক পিচাশ ও এ দেশের দোসররা মিলে। এখান থেকে মেহেরপুরের দিকে যেতে দেখতে পারেন আর এক ঐতিহাসিক জায়গা 'নীল কুঠি'। এখানে ইংরেজদের নীল চাষের ইতিহাস আর সে সংক্রান্ত মিউজিয়াম/স্থপনা (ধংসপ্রাপ্ত) আছে। ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারেন। মুজিবনগরে যেতে হলে ঢাকা থেকে সরাসরি মুজিবনগর যাওয়া যায়। অথবা চুয়াডাঙ্গা/ মেহেরপুর এসে পার্শ্ববর্তী স্থাপনা দেখে মুজিবনগর। খুলনা বা যশোর থেকে এলে দর্শনায় নেমে মুজিবনগর যাওয়া যাবে।