বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রযুক্তি যেভাবে বদলে দিয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের জীবন

বর্তমান যুগ উদ্যোক্তাদের যুগ। বাংলাদেশেও এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। অধিকাংশ উদ্যোক্তাই নারী। উদ্যোক্তা শব্দটা যদিও আমাদের সবার পরিচিত কিন্তু আমরা অনেকেই এ শব্দের অর্থ ও গুরুত্ব বুঝি না। অনেকেই মনে করেন ব্যবসায়ী বলতেই উদ্যোক্তা, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। মনে রাখতে হবে যে 'সকল উদ্যোক্তাই ব্যবসায়ী কিন্তু সকল ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা নন'। যারা বংশ পরিক্রমায় পূর্ব পুরুষের ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং অনেক বেশি মূলধন নিয়ে সচরাচর বা প্রচলিত লাভজনক ব্যবসাগুলো শুরু করেন তাদের মূলত ব্যবসায়ী বলা হয়। আর ব্যবসা করতে বেশি পরিমাণের মূলধন লাগে কিন্তু উদ্যোক্তা হতে দরকার মেধা, শ্রম, বুদ্ধি আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি। প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক নারীই এখন উদ্যোক্তা। প্রযুক্তি তাদের উদ্যোক্তা জীবনকে করেছে সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। তারা নিজে স্বাবলম্বী হচ্ছে এবং পরিবারের উপার্জনে অবদান রাখছে। এর নেপথ্যে যার ভূমিকাটি সবচেয়ে বেশি তা হলো প্রযুক্তি। তেমনি কয়েকজন নারী উদ্যোক্তাদের জীবন বদলে দিয়েছে প্রযুক্তি। তাদের সাথে কথা বলে লিখেছেন- সাজেদুর আবেদীন শান্ত
নতুনধারা
  ০২ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

১. নারী উদ্যোক্তা কান্তা চক্রবর্তী বলেন, 'প্রযুক্তির কারণে পণ্যের সোর্সিং সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারি। আমরা সহজেই নিজেদের পণ্যের প্রসার ঘটাতে পারছি, খুব কম খরচে। ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে সম্পর্ক তৈরিতে প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ঘরে বসে নিজেদের উদ্যোগ গ্রহণ করা থেকে শুরু করে পরিচালনা করা সহজতর হয়েছে শুধুমাত্র প্রযুক্তির কারণে।

২. আন্তর্জাতিক শেফ ও বেভেন্দা ভেনেজুয়েনা রেস্টুরেন্টের মালিক তানজিনা আফরোজ নীশো বলেন, 'প্রযুক্তির মাধ্যমে একজন নারী উদ্যোক্তা হবার উপায় থেকে কোথায়, কীভাবে, কি করতে হবে তা শিখতে পারে। ফেসবুক জাতীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করা সম্ভব। প্রযুক্তির সহায়তায় ঘর-সংসার সামলিয়েও নিজের উদ্যোগ পরিচালনা করতে পারছে নারীরা। এ ছাড়া পরিচিতি পাওয়ার বড় মাধ্যম এখন প্রযুক্তি'।

৩. এসএস এগ্রো প্রোডাক্টের কর্ণধার ও উদ্যোক্তা শিরীন সুলতানা অরুনা বলেন, 'বর্তমান যে কোভিড অবস্থা এর যেমন সমস্যা আছে অন্যদিকে সুবিধাও আছে। এ কোভিড অবস্থা আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহারের দিক থেকে কমপক্ষে ৩০ বছর এগিয়ে দিয়েছে। যেমন আমি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা রাঙামাটি বাস করি সেখান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমি অনলাইন ব্যবসা করছি, ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করছি, আন্তর্জাতিক বায়ারদের সাথে মিটিং করছি। যা আগে কখনো চিন্তাও করিনি'।

৪. তরুণ উদ্যোক্তা রুবাইদা রাখী বলেন, 'প্রযুক্তির কারণে ঘরে বসে আমরা অনলাইনে কাজ করতে পারছি এটা অনেক বড় পাওয়া আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের জন্য। অনলাইননির্ভর ব্যবসার কারণে ঘরে যে বাধা সেটা থাকছে না মেয়েদের জন্য এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে সব কাজের পাশাপাশি প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা আমি খুব দরকারি বলে মনে করি। এটাতে পরিশ্রম বেশি থাকলেও সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়'।

৫. রাইজিংবিডির উদ্যোক্তা পাতার সহ-সম্পাদক মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া বলেন, 'ইন্টারনেটের দ্রম্নতগতি ও সহজলভ্যতার জন্য দেশে ই-কমার্সের কার্যক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় ৩২ শতাংশ নারী রয়েছে, যাদের আয়ের মাধ্যম অনলাইনকে কেন্দ্র করে। ফেসবুক বা জুম অ্যাপ ব্যবহার করে নারীরা ঘরে বসে উদ্যোক্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। যার কারণে নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা দিয়ে স্টার্টআপে বেড়েছে নারীদের অংশগ্রহণ'।

৬. টেস্টবিডির স্বত্বাধিকারী সালমা নেহা বলেন, 'প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে নারী উদ্যোক্তাদের জীবনে আত্মনির্ভরশীলতা এনে দিতে সক্ষম হয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার। আমি মনে করি প্রযুক্তির সহায়তা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। ইন্টারনেট ও ফেসবুক ব্যবহার করে আমি আমার ব্যবসায় পরিচালনা করছি। চাকরি ছেড়ে এ পেন্ডামিক সিচুয়েশনেও পরিবারের পাশে থাকতে পেরেছি এবং আর্থিকভাবে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে পেরেছি অনলাইন বিজনেসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে স্মার্টফোনের মাধ্যমে। পাশাপাশি বিজনেস রিলেটেড বিভিন্ন ওয়ার্কশপ এবং টেকনিক্যাল বিষয়গুলো শিখেছি ফেসবুক গ্রম্নপ 'উই' এবং 'ডিজিটাল স্কিল ফর বাংলাদেশ' থেকে। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তি ব্যবহার করে। আমি একজন স্বাবলম্বী নারী উদ্যোক্তা হয়েছি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমেই'।

৭. তরুণ উদ্যোক্তা বনি বলেন, 'আমার মতে অনলাইন ব্যবসায় প্রযুক্তি ছাড়া সম্ভবই না। অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন খুবই জরুরি। কারণ পণ্যের ছবি দেখানোর জন্য মোবাইল ফোন অপরিহার্য, এছাড়া ফোন কলের মাধ্যমে অর্ডার কনফার্ম করা, পেমেন্ট প্রেরণ ও গ্রহণ বা প্রমাণ রাখতে ফোনের জুড়ি নেই। এছাড়া ভিডিও কলের মাধ্যমে কোয়ালিটি বোঝানোর কাজও করা যাই ড়ুব সহজেই। এছাড়া কাস্টমার অনলাইন মিটআপও করা যায় সহজেই'।

৮. কুমিলস্নার খাদিরানী মুক্তা বলেন, 'প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে, গ্রাম থেকে সারা বাংলাদেশের ই-কমার্স সেক্টরে কাজ করতে পারছি। কুমিলস্নার খাদিকে মোবাইল ব্যবহার করে ফেসবুকের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে তুলে ধরতে পেরেছি। ব্যাংকিং সুবিধাসহ নানাভাবে দেশীয় পণ্য ও খাদির প্রচার প্রচারণা করতে পেরেছি। প্রযুক্তির জন্য নারী উদ্যোক্তাদের সব কাজ পরিচালনা করা খুব সহজ হয়ে গেছে'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে