পক্ষাঘাতগ্রস্তদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে মাইন্ডওয়াকার

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
পক্ষাঘাত বা অঙ্গহানির বিশেষ অঙ্গ বা বিশেষ সুবিধে নিয়ে চলাফেরা করা যায়। তাতে রোগীর এবং তার পরিবারের জন্য তখন আর মানুষটি বোঝা হয়ে থাকেন না। পক্ষাঘাতের রোগীদের সাহায্য করছে এক এক্সোস্কেলিটন। এক ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের আওতায় সেটি সৃষ্টি ও পরীক্ষা করা হয়েছে। থেরাপিস্ট ও নিউরোলজিস্টরা মনে করেন, এ প্রোটোটাইপের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তাদেরই একজন ফেডেরিকা টাম্বুরেলা। তিনি বলেন, প্রচলিত রিহ্যাবের মাধ্যমে যে রোগীরা বিনা সাহায্যে সমান্তরাল বার ধরে হাঁটতে পারতেন না, তাদের পক্ষে হাঁটার অনুভূতি ফিরে পাওয়া সম্ভব হতো না। এই এক্সোস্কেলিটন তাদের স্বাভাবিক ও শারীরিক পথে সেই চেতনা ফিরিয়ে দিচ্ছে। শরীরের নিম্নাংশ স্বাভাবিক ছন্দে দোলানো যে কোনো প্রচলিত রিহ্যাব কৌশলের জন্য অত্যন্ত জরুরি। নিউরোলজিস্ট হিসেবে মার্কো মোলিলারি বলেন, মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও হাঁটার ক্ষমতা ফিরে পাওয়া এই রোগীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। হুইলচেয়ার ছেড়ে কিছু সময়ের জন্য উঠে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের উচ্চতায় জগৎকে দেখা, অন্যদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারা তাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তবে গবেষকরা এখানেই থেমে যেতে চান না, পক্ষাঘাতগ্রস্তদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গবেষকরা আরও এগিয়ে যেতে চান। প্যারাপ্লেজিয়া রোগীরা একদিন নিজেদের মস্তিষ্ক থেকে সংকেত পাঠিয়ে এক্সোস্কেলিটন নিয়ন্ত্রণ করবে, এটাই তাদের স্বপ্ন। এই প্রোটোটাইপ ব্যবস্থার নাম 'মাইন্ডওয়াকার'। এই প্রকল্পে সক্রিয় বিজ্ঞানীরা একদিন রোগীদের অনেক সমস্যা দূর করার আশা রাখেন। 'মাইন্ডওয়াকার' প্রকল্পের মিশেল ইলকোভিৎস বলেন, আমরা এমন এক প্রণালি তৈরি করতে চাই, যার আওতায় রোগীর মস্তিষ্কের কর্টেক্সের সংকেত এক্সোস্কেলিটন নিয়ন্ত্রণ করবে। কিছু কারণে এখনো সেটা সম্ভব হচ্ছে না। প্রথমত, মাথার খুলি মস্তিষ্ক ও পরিমাপ যন্ত্রের মধ্যে বাধা সৃষ্টি করে। অর্থাৎ সিগনাল যথেষ্ট স্পষ্ট হয় না। তাছাড়া এক্সোস্কেলিটনের ভাইব্রেশন আরেকটি সমস্যা। তার একটানা শব্দ মস্তিষ্কের সংকেতের মান বিকৃত করে। ফলে তার ব্যবহার আরও কঠিন হয়ে যায়। এমন সব বাধা দূর করতে গবেষকরা মস্তিষ্কের শটকাটের সন্ধান করছেন। চোখের মধ্যদিয়ে এমন এক শটকাট রয়েছে। রেটিনার মাধ্যমে মস্তিষ্কে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে তারা বিভিন্ন নিউরাল সিগনাল চিহ্নিত ও আলাদা করতে চাইছেন। এগুলোর সাহায্যে এক্সোস্কেলিটন নিয়ন্ত্রণের আশা করছেন তারা। নিউরোফজিওলজিস্ট গি শেরোঁ বলেন, আমরা রেটিনায় পাঠানো সিগনালের তরঙ্গদৈর্ঘ্য কী, তা জানি। মস্তিষ্ক মানানসই তরঙ্গদৈর্ঘ্য সৃষ্টি করে সেই সিগনালে সাড়া দেয়। প্রথমে যে তরঙ্গদৈর্ঘ্য পাঠানো হয়েছিল, তা জানার ফলে আমরা তার জবাবে পাঠানো মস্তিষ্কের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছেঁকে নিতে পারি। সেই মস্তিষ্ক তরঙ্গ ব্যবহার করেই সম্ভবত এক্সোস্কেলিটন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।