বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অসীম মহাকাশের পানে

বর্তমানে সেরেসের ছায়ায় অবস্থান করছে ডন। ১৮০১ সালে আবিষ্কৃত হওয়া সেরেসের ব্যাস ৬০০ মাইল এবং এর কেন্দ্রটি পাথুরে। রোমান কৃষিকার্যের দেবীর নামে এর নামকরণ করা হয়। প্রথমে একে গ্রহ বলে ধারণা করা হলেও পরে গ্রহাণু হিসেবে একে ধরা হয়। পরে একে বামনগ্রহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গ্রহদের মতো এর শরীরটাও গোলাকার, তবে এর আশপাশে কাছাকাছি আকৃতির আরও অনেক জ্যোতিষ্ক থাকতে পারে। ডন মহাকাশযানের সোলার উইং ছড়িয়ে রাখা অবস্থায় এর দৈর্ঘ্য ৬৫ ফিট। এতে রয়েছে ইনফ্রারেড স্পেক্ট্রোমিটার এবং একটি গামা রে ও নিউট্রন ডিটেক্টর যা দিয়ে সে কক্ষপথে থেকে সেরেসকে পর্যবেক্ষণ করবে। প্রদক্ষিণের শুরুতে ডন ছিল সেরেস থেকে ৩৮ হাজার মাইল দূরে। মিশন শেষ হওয়ার পরেও সেখানেই থেকে যাবে।
আলামিন হোসেন
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

মহাকাশ নিয়ে মানুষের আগ্রহ সৃষ্টির শুরু থেকেই। আর সেই আগ্রহের সূত্র ধরেই মানুষ দিনের পর দিন চালিয়ে গেছে মহাকাশ গবেষণা। মহাকাশ নিয়ে গবেষণা চলছেই।

মঙ্গলগ্রহের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ বহুদিন থেকেই। আর মঙ্গলে নাসার সাম্প্রতিক অভিযান সেই আগ্রহের আগুনে ঘি ঢেলেছে কারণ সেই আগ্রহের কারণেই এবার নাসা পরীক্ষা চালিয়েছে 'ফ্লাইং সসার'-এর? প্রতিবেশী এই গ্রহের ভূ-প্রকৃতি কেমন, গ্রহটি আদৌ মানুষের বসবাসের উপযোগী কিনা তা নিয়ে বহুদিন থেকেই চলছে জল্পনা-কল্পনা। আর এবার সেই জল্পনার জট খুলতেই সাহায্য করবে নাসার নতুন এই প্রযুক্তি যার সাহায্যে মঙ্গলে সহজে ও নিরাপদে নভোচারীরা অবতরণ করতে পারবেন। নাসার দাবি, তারা এই পরীক্ষা থেকে যে তথ্য পেয়েছেন তা তাদের সামনের দশকেই মঙ্গলে আরও ভারী জিনিস পাঠাতে সাহায্য করবে।

ঠিক কতটা সময় পৃথিবীর বাইরে, মহাকাশে নিরাপদ থাকতে পারেন একজন নভোচারী? এ ব্যাপারটি পরীক্ষা করে দেখতে ৩৫০ দিন অর্থাৎ প্রায় এক বছরের জন্য দুজন নভোচারী মহাকাশে অবস্থান করছেন।

দীর্ঘসময় মহাকাশযানে অবস্থানের অভিজ্ঞতাটি কেমন? এ সময়ে মহাকাশের তেজস্ক্রিয়তায় নভোচারীর কি কোনো ক্ষতি হবে? এত সময় ওজনশূন্য পরিবেশে তাদের অবস্থা কেমন হবে? আর একা একা থাকার অনুভূতিটিই বা কেমন?

এসবের উত্তর জানার জন্যই শুরু নাসার ওয়ান ইয়ার মিশন।

এর চেয়েও বেশি সময় পৃথিবীর বাইরে কাটানোর কৃতিত্ব রয়েছে রাশিয়ান নভোচারী ভ্যালেরি পোলিয়াকভের। তিনি ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৯৫ সালের মার্চ পর্যন্ত টানা প্রায় ৪৩৮ দিন কাটান কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। তবে নাসার সাধারণ ওঝঝ মিশনে নভোচারীরা চার থেকে ছয় মাস পৃথিবীর বাইরে কাটান। এ ক্ষেত্রে বছরখানেকের মতো সময় বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। গবেষকরা দেখেন, বেশি সময় মহাশূন্যে কাটালে দৃষ্টিশক্তি এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতায় পরিবর্তন আসে। শুধু তাই নয়- এতটা সময় ওজনশূন্য পরিবেশে মাসল অ্যাট্রফি এবং বোন লসের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। প্রায় আট বছর লম্ব্বা ভ্রমণের পর বামনগ্রহ সেরেসে পৌঁছে গেছে নাসার একটি মহাকাশযান। এই প্রথম সেরেসে মহাকাশযান পাঠানো সম্ভব হলো।

এই রোবট মহাকাশযানের নাম হলো ডন। মোটামুটি বছরখানেক ধরে সে সেরেসকে প্রদক্ষিণ করবে, এর পৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ করবে এবং এর রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করবে। নাসার গবেষকরা বলেন, পুরোপুরি পরিকল্পনামতো একেবারে নির্বিঘ্নে সেরেসকে ঘিরে কক্ষপথে ঘুরপাক খাচ্ছে ডন মহাকাশযানটি।

২০০৭ সালে অ্যাস্টেরয়েড বেল্টের উদ্দেশে উৎক্ষেপণ করা হয় একে। এর আগে সে এক বছর কাটায় ভেস্তা গ্রহাণু পর্যবেক্ষণ করে। সেরেস হলো এর দ্বিতীয় এবং শেষ গন্তব্যস্থল।

সেরেসে পৌঁছাতে ডন মহাকাশযানকে ৩ বিলিয়ন মাইল পথ পাড়ি দিতে হয়েছে আর তা সম্ভব হয়েছে এর আয়ন প্রোপালশন ইঞ্জিনের দক্ষতার কারণে। এই ইঞ্জিন প্রচলিত থ্রাস্টারের চেয়ে অনেক কার্যকর। সেরেসের কাছাকাছি পৌঁছাতেই এর পৃষ্ঠের ছবি পাঠাতে শুরু করে দিয়েছে ডন। কিছু বিভ্রান্তিকর ছবি পাওয়া গেছে ইতিমধ্যে। একটি ছবিতে দেখা যায়, বড় একটি গর্তের ভেতরে সাদাটে কিছু ছোপ, যা হতে পারে লবণ অথবা বরফে তৈরি। সেরেসের আরও কাছে গেলে এসব এলাকা আরও স্পষ্ট করে দেখা যাবে। শুধু তাই নয়- অতীতে সেরেসের পৃষ্ঠে পানির ফোয়ারা দেখা গিয়েছিল। এই ঘটনা কী এখনো দেখা যায় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করবে ডন।

বর্তমানে সেরেসের ছায়ায় অবস্থান করছে ডন। ১৮০১ সালে আবিষ্কৃত হওয়া সেরেসের ব্যাস ৬০০ মাইল এবং এর কেন্দ্রটি পাথুরে। রোমান কৃষিকার্যের দেবীর নামে এর নামকরণ করা হয়। প্রথমে একে গ্রহ বলে ধারণা করা হলেও পরে গ্রহাণু হিসেবে একে ধরা হয়। পরে একে বামনগ্রহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গ্রহদের মতো এর শরীরটাও গোলাকার, তবে এর আশপাশে কাছাকাছি আকৃতির আরও অনেক জ্যোতিষ্ক থাকতে পারে।

ডন মহাকাশযানের সোলার উইং ছড়িয়ে রাখা অবস্থায় এর দৈর্ঘ্য ৬৫ ফিট। এতে রয়েছে ইনফ্রারেড স্পেক্ট্রোমিটার এবং একটি গামা রে ও নিউট্রন ডিটেক্টর যা দিয়ে সে কক্ষপথে থেকে সেরেসকে পর্যবেক্ষণ করবে। প্রদক্ষিণের শুরুতে ডন ছিল সেরেস থেকে ৩৮ হাজার মাইল দূরে। মিশন শেষ হওয়ার পরেও সেখানেই থেকে যাবে।

সৌরজগতে যত গ্রহ আছে, সবগুলোর প্রতিই আগ্রহ রয়েছে বিজ্ঞানীদের এবং কোন গ্রহে কী হচ্ছে না হচ্ছে, তা জানার জন্য তারা সবসময়েই উন্মুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে