স্টপ মোশন ও অ্যানিমেশনের জগতে

প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
বাস্তবজগতের বস্তু বা পুতুল-মডেলের স্থান অল্প অল্প পরিবর্তিত করে এটি ক্রমে ফুটিয়ে তোলে নির্মাণ করা অ্যানিমেশন। এতে পারস্পরিক অ্যানিমেশনের মতো ছবি আঁকা যায় না। বহু পদ্ধতিতে স্টপ মোশন ছবি নির্মাণ করা যায়। পুতুল অ্যানিমেশন, ক্লে' অ্যানিমেশন বা পস্নাস্টিসিন অ্যানিমেশন, সাঁ অ্যানিমেশন, কাট-আউট অ্যানিমেশন, মডেল অ্যানিমেশন, গো মোশন, অবজেক্ট অ্যানিমেশন, গ্রাফিক অ্যানিমেশন, পিক্সিলশন এসবই অ্যানিমেশনের প্রকারভেদ। পারস্পরিক অ্যানিমেশনকে সেল (ঈবষ) অ্যানিমেশন বা হাতে আঁকা (ঐধহফ ফৎধহি) অ্যানিমেশন বলেও ডাকা হয়। বিংশ শতকের অ্যানিমেশন ছবি এ পদ্ধতিতে নির্মাণ করা হয়েছিল। অ্যানিমেশনের জন্য ছবি আঁকা ব্যক্তিকে 'অ্যানিমেটর' (অহরসধঃড়ৎ) বলে। প্রতিটি ছবি একটা গতির ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হওয়া স্থানের ছবি। কাগজ থেকে পারদর্শী 'সেল'-এ ছবিটি 'ট্রেসিং' করে নেওয়া হয়। এই সেলের ওপরে রঙ লাগানো হয়। প্রয়োজন অনুসারে একটির বেশি 'সেল'-এর ওপরে লাগিয়ে দিয়ে বহু চরিত্র একসঙ্গে রাখা যায়। 'ব্যাকগ্রাইন্ড'-এর ছবিও আলাদাভাবে এঁকে সেলের তলায় রাখা হয়। পরে সেই ছবি ক্যামেরায় একটি একটি করে চলচ্চিত্রের 'ফিল্ম'-এ ফুটিয়ে তোলা হয়। সম্পূর্ণ অ্যানিমেশন : পরম্পরাগত পদ্ধতিতে উচ্চমানের ছবি এবং মসৃণ চলাফেরা গতিতে নির্মাণ করা অ্যানিমেশন। এ ধরনের অ্যানিমেশনে চলন মসৃণ রাখার জন্য নির্মাতাকে অধিক কষ্ট করতে হয়। সীমিত অ্যানিমেশন : পরম্পরাগত পদ্ধতি ব্যবহার করে নির্মাণ করলেও এটিতে কম মানসম্পন্ন ছবি এবং গতির মসৃণতা বজায় রাখতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না। সাধারণত দূরদর্শনের জন্য নির্মাণ করা অ্যানিমেশন ছবিতে ব্যবহার হয়। এই পদ্ধতিতে নির্মাণ করলে কষ্ট এবং সময় দুই-ই লাঘব হয়, দ্রম্নতগতিতে ছবি নির্মাণ করতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। রটোস্কোপিং (জড়ঃড়ংপড়ঢ়রহম) মেক্স ফ্লেইসার-এর (গধী ঋষবরংপযবৎ) ১৯১৭ সালে উদ্ভাবন করা একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একজন অভিনেতার দ্বারা অ্যানিমেশন করণীয় অংশের চলচ্চিত্র বানিয়ে নেওয়া হয়। পরে সেই ছবি একটি একটি করে কাগজে পরিবর্ধন করে 'ট্রেসিং' করে ছবি আঁকা হয়। এই পদ্ধতিতে বাস্তব চলাচলের নকল তৈরি করা যায়। অবশ্য বাস্তব চলাচল ট্রেসিং করলে চলাচলের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যেতে দেখা যায়। জীবন্ত ছবি এবং অ্যানিমেশনের সমাহার : এই পদ্ধতিতে একটি ফ্রেমে আঁকা ছবি এবং সিনেমার ক্যামেরায় তোলা ছবি থাকে। কম্পিউটারের সহায়তায় নির্মাণ করা অ্যানিমেশনকেই কম্পিউটার অ্যানিমেশন বলা যায়। কম্পিউটার অ্যানিমেশনের কয়েকটি প্রকার আছে। সেগুলো হলো- দ্বিমাত্রিক অ্যানিমেশন : ছবি সংযোগ এবং সম্পাদনা করে 'দ্বিমাত্রিক অ্যানিমেশন' নির্মাণ করা হয়। দ্বিমাত্রিক ছবিটি কম্পিউটারের সফ্‌টওয়্যার ব্যবহার করে আঁকা হতে পারে বা হাতে এঁকে স্ক্যান করে নেওয়াও হতে পারে। ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন : এটি মডেল অ্যানিমেশনের কম্পিউটার রূপ বলা যায়। ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন নির্মাণ করার জন্য কম্পিউটার সফটওয়্যারে ত্রিমাত্রিক মডেল সাজিয়ে নেওয়া হয়। ফিল্মের উপরে অংকন: এই পদ্ধতিতে চলচ্চিত্রের রিলের প্রতিটি ফ্রেমে ছবি এঁকে অ্যানিমেশন তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতিতে অ্যানিমেশন নির্মাণ করা কিছু ব্যক্তির নাম ঘড়ৎসধহ গপখধৎবহ, খবহ খুব ও ঝঃধহ ইৎধশযধমব. কাচের উপরে পেইন্ট অ্যানিমেশন: কাচের উপরে ধীরে শুকানো রঙ (সাধারণত তেল রঙ) ব্যবহার করে আঁকাটি শুকাবার আগেই রঙটি সঠিকভাবে এদিক-সেদিক করে প্রতিটি ফ্রেমের ছবি নেওয়া হয়। অস্কার পুরস্কার বিজয়ী রুশ অ্যানিমেটর আলেকসেন্দ্র পেট্রভ-এ (অষবীধহফৎ চবঃৎড়া) এই পদ্ধতিতে কয়েকটি অ্যানিমেশন ছবি নির্মাণ করেছেন। মুছে মুছে নির্মাণ করা অ্যানিমেশন: শিল্পীর আঁকা ফুটিয়ে তুলে ফ্রেম সাজিয়ে তৈরি করা অ্যানিমেশন। পিনের পর্দা অ্যানিমেশন : একটি পর্দার উপরে 'পিন' বিঁধিয়ে নিয়ে পিনগুলোকে সময়মতো ওলটপালট করে নির্মাণ করা অ্যানিমেশন। এই পদ্ধতিতে আলোর কোনাকুনি করে পর্দাটির উপরে ফেলা হয় যাতে উঠে থাকা পিনের ছায়া বাকি অংশে পড়ে একটি দৃশ্যের সৃষ্টি করতে পারে। বালি অ্যানিমেশন : তলার থেকে বা উপর পর্যন্ত আলো পড়ে থাকা কাচের ওপরের বালির তরপকে হাতের মাধ্যমে এদিক-সেদিক করে নির্মাণ করা অ্যানিমেশন।