মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণ আছে শুক্র গ্রহে!

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

শুক্র গ্রহে প্রাণ আছে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। শুক্র গ্রহকে ঘিরে রাখা মেঘে ফসফিন গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এ থেকেই তাদের ধারণা-গ্রহটিতে অণুজীবের অস্তিত্ব থাকতে পারে। জানা গেছে, শুক্র গ্রহের মেঘ ভীষণ রকম অম্স্নীয় (এসিডিক)। এই মেঘে ফসফিনের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ এই গ্যাস পৃথিবীতে উৎপন্ন হয় ব্যাকটেরিয়া থেকে। অক্সিজেন রয়েছে- এমন পরিবেশে থাকা ব্যাকটেরিয়া এই গ্যাস নিঃসরণ করে। শুক্র গ্রহে ফসফিনের অস্তিত্বের পেছনে এমন কোনো কারণ থাকলে, সেখানে প্রাণের উৎপত্তি বিকাশের পরিবেশ রয়েছে বলে আশাবাদী তারা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজ্ঞানীরা কোনো প্রাণের অস্তিত্ব শনাক্ত করতে পারেননি। তারা বলছেন, পৃথিবীতে ফসফিন গ্যাস মূলত ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্টি হয়, যা অক্সিজেন-সমৃদ্ধ পরিবেশের একটি চিহ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে স্থাপিত জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল টেলিস্কোপের সাহায্যে এই ফসফিন গ্যাসের অস্তিত্ব শনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। পরে চিলির অ্যাটাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে (এএলএমএ) রেডিও টেলিস্কোপের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হন তারা।

বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্বের সন্ধান করছেন। এই কারণে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য অনুকূল পরিবেশ রয়েছে কিনা, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া হয়েছে মঙ্গলগ্রহের দিকে। বিশ্বের পরাশক্তিগুলো মঙ্গলের দিকে বরাবরই দৃষ্টি রেখেছেন। মঙ্গলে রোবটও পাঠানো হয়েছে। মূলত প্রাণের অস্তিত্বের পরোক্ষ উপস্থিতি শনাক্তের জন্যই টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা গোটা পৃথিবী খুঁজে বেড়িয়েছেন এবং এখনো বেড়াচ্ছেন। এই সৌরজগতের অন্য গ্রহ এবং পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ কোনো কিছুই এ ক্ষেত্রে বাদ পড়েনি। এই প্রেক্ষাপটে শুক্র গ্রহে ফসফিনের উপস্থিতি শনাক্ত একটি বড় ঘটনা।

গবেষণা নিবন্ধের সহলেখক ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) আণবিক জ্যোতির্পদার্থবিদ ক্লারা সুসা-সিলভা বলেন, 'শুক্র গ্রহ সম্পর্কে আমরা এই মুহূর্তে যা জানি এবং ফসফিন গ্যাসের অস্তিত্বের যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা যা হতে পারে, তা হচ্ছে সম্ভবত সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। আমি এই বিষয়টির ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে চাই। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, যদি এটা ফসফিন হয়, তবে সেখানে প্রাণ আছে। এর অর্থ হচ্ছে, আমরা একা নই। আর তা যদি হয়, তবে শুধু শুক্র গ্রহে নয়, এই সৌরমন্ডলে আরও অনেক প্রাণ রয়েছে।'

ফসফিন গ্রহ এমনিতে মানুষের জন্য ভীষণ বিষাক্ত। শুক্র গ্রহের বায়ুমন্ডলে যে ফসফিনের অস্তিত্ব রয়েছে, তার ঘনত্ব ২০ পিপিবি (পার্টস পার বিলিয়ন)। এটিই একমাত্র আশা দেখাচ্ছে। এর বাইরে আগ্নেয় শিলা, উল্কা বা ধাতবখন্ডসহ বিভিন্ন অজৈব উপাদানের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে অবশ্য হতাশ হতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। এখন বিজ্ঞানীরা ফসফিনের অস্তিত্বকে ধরে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। না হলে অন্য কোনো ব্যাখ্যা হাজির করা যায় কিনা, সে বিষয়ে গবেষণা করছেন।

এবারের এই গবেষণা বেশি আশাবাদী করছে। কারণ, শুক্র পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের গ্রহ। আকারে ছোট হলেও এর গঠন পৃথিবীর মতো। সূর্যের থেকে দূরত্বের বিবেচনায় এটি দ্বিতীয় গ্রহ; পৃথিবী তৃতীয়। এর চারপাশে রয়েছে ভারী ও বিষাক্ত বায়ুমন্ডল, যা তাপ ধরে রাখে। ফলে এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা অনেক বেশি (৮৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। ফলে সেখানে কী ধরনের প্রাণ থাকতে পারে, তা নিয়ে সংশয়ে বিজ্ঞানীরা।

এ বিষয়ে ক্লারা সুসা-সিলভা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, 'শুক্র গ্রহে প্রাণ থাকলে, তার স্বরূপ কী হবে, তা অনুমানের চেষ্টা করছি। একেবারে বাসযোগ্যহীন গ্রহটিতে অন্য কোনো প্রাণের পক্ষে থাকা সম্ভব নয়। যদি থাকে, তবে তাদের সবকিছুই চেনা প্রাণ থেকে আলাদা হবে।'

তবে গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত নন এমন কিছু বিজ্ঞানী ধারণা করছেন, শুক্র গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে অনেক ওপরের মেঘের গড় তাপমাত্রা ৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। ফলে সেখানে কোনো অণুজীব থাকলেও থাকতে পারে। তবে সেই অণুজীবের উচ্চ ঘনত্বের অম্স্নীয় পরিবেশে টিকে থাকার সক্ষমতা থাকতে হবে। কারণ, শুক্র গ্রহের চারপাশের মেঘ সালফিউরিক এসিড (ঘনত্ব-৯০ শতাংশ) দ্বারা তৈরি। পৃথিবীর চেনা কোনো অণুজীব সেখানে নিশ্চিতভাবেই টিকতে পারবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে