জিনের কাযর্করী সাকির্ট

ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বিআরসিএ-১ ও বিআরসিএ-২ জিনে ও হেরাসিপটিন হরমোন-সংক্রান্ত জিনে মিউটেশনের কারণে পুরনো জেনেটিক বিন্যাসে পরিবতর্ন দেখা দেয়। ফলে তৈরি হয় ব্রেস্ট ক্যান্সার। তিনি আরও বলেছেন, বিজ্ঞানীদের এখন কাজ হলো এ মিউটেশনকে বা জেনেটিক পুনবির্ন্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করা। তাহলে নারীরা তাদের সৌন্দযর্ এবং মাতৃত্বের অন্যতম গঠনকে অক্ষত রাখতে পারবে...

প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আলিজা ইভা
জিন কোড এবং জিন সাকির্ট নিয়ে গতিশীল গবেষণা হচ্ছে বতর্মান সময়ে ছবি : ইন্টারনেট
মানুষের হাসোজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার পরিমাণের দিকটি জিনের সঙ্গে জড়িত। এ জিনটির নাম হচ্ছে ক্যানাবিনয়েড রিসেপ্টর জিন (সংক্ষেপে সিএনআর১ জিন)। সূ² এ বিষয়টি স্পষ্ট হয় অটিজম রোগীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের তাকানোর ও মনোযোগের পাথর্ক্য তুলনা করলে। ক্যানাবিনয়েড রিসেপ্টর জিনটি অটিজম রোগীদের ক্ষেত্রে বেশ খানিকটা পরিবতির্ত থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী ভারতীয় বংশোদ্ভ‚ত বিজ্ঞানী ড. বিসমাদেভ চক্রবতীর্ ক্যানাবিনয়েড রিসেপ্টর জিন আবিষ্কার করেন। তিনি দীঘির্দন ধরে মস্তিষ্কের সন্তুষ্টি ও প্রাপ্তির অনুভ‚তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যতম জায়গা স্ট্রাটিয়াম নিয়ে কাজ করছিলেন। তার গবেষণা কাযর্ক্রমে অটিজম রোগটিও জড়িত ছিল। অটিজম রোগীরা অন্য মানুষের মুখের দিকে বেশিক্ষণ মনোযোগ দিতে পারে না। পাশাপাশি তারা অন্য মানুষের মুখ যে আবেগ প্রকাশ করে তা ধরতে পারে না। ফলে ড. চক্রবতীর্ ও তার সহকমীর্ গবেষকদের একটি অন্বেষা আগ থেকেই ছিল যে, একজন মানুষ অন্য মানুষের মুখের দিকে কত সময় তাকিয়ে থাকে, অন্যের মুখের মাঝে বিরাজমান আবেগ কতটুকু ধরতে পারে তার কোনো জেনেটিক ভিত্তি আছে কিনা। এ অন্বেষা থেকে তাদের যে দীঘর্ গবেষণা তা-ই নতুন এ তথ্য উন্মোচনে সহায়তা করে। জিন সাকিের্টর এ অস্বাভাবিকতা ব্রেস্ট ক্যান্সারের সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি জিনের সিকোয়েন্সে পরিবতের্নর কারণে ক্যান্সার জিন সক্রিয় হয়, ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এ তথ্যটিও মাইক স্ট্রাটোন এবং অ্যান্ডি ফুট্রেয়ালের দৃষ্টি এড়ায়নি। ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এ রকম হতেই পারে। বিআরসিএ-১ ও বিআরসিএ-২ জিনের পুনবির্ন্যাস এবং হেরাসিপটিন হরমোনের সঙ্গে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্পকর্ আছে এটা বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েক বছর হলো আবিষ্কার করেছেন। এ আবিষ্কারের পরিবতর্ন সাধিত হয়েছে মাইক স্ট্রাটোন ও অ্যান্ডি ফুট্রেয়ালের জিনোম পুনবির্ন্যাস বা জিন সাকির্ট পুনবির্ন্যাসবিষয়ক আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। ব্রেকথ্রো ব্রেস্ট ক্যান্সার রিসাচর্ সেন্টারের বিজ্ঞানী ড. জজর্ রেইস ফিলহো একে অসাধারণ ও উল্লেখযোগ্য একটি আবিষ্কার হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ডিএনএ অণু কোনো কারণে ভেঙে গেলে তা আবার পুনরায় গঠিত হয়ে যায় জীববৈজ্ঞানিক স্বয়ংক্রিয় মেরামত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এ মেরামত প্রক্রিয়া প্রায় সময়ই পুরনো জেনেটিক বিন্যাস ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিউটেশনের কারণে পুরনো জেনেটিক বিন্যাসে পরিবতর্ন হয় তখন দেখা দিতে পারে অস্বাভাবিকতা। ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বিআরসিএ-১ ও বিআরসিএ-২ জিনে ও হেরাসিপটিন হরমোন-সংক্রান্ত জিনে মিউটেশনের কারণে পুরনো জেনেটিক বিন্যাসে পরিবতর্ন দেখা দেয়। ফলে তৈরি হয় ব্রেস্ট ক্যান্সার। তিনি আরো বলেছেন, বিজ্ঞানীদের এখন কাজ হলো এ মিউটেশনকে বা জেনেটিক পুনবির্ন্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করা। তাহলে নারীরা তাদের সৌন্দযর্ এবং মাতৃত্বের অন্যতম গঠনকে অক্ষত রাখতে পারবে। বিজ্ঞানী মাইক স্ট্রাটোন ও অ্যান্ডি ফুট্রেয়াল আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে জিনোম পুনবির্ন্যাস বা জিন সাকির্ট পুনবির্ন্যাসবিষয়ক ধারণা আরো উন্নত ও গভীর হবে এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারের পাশাপাশি অন্যান্য ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও এ ধারণা কাজে লাগবে। মাইক স্ট্রাটোন ও অ্যান্ডি ফুট্রেয়াল চেষ্টা করছেন তাদের এ অজর্নকে কাজে লাগিয়ে ব্রেস্ট ক্যান্সারের স্থায়ী সমাধান বের করতে। তাদের এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বিশিষ্ট আণবিক জীববিজ্ঞানী ওয়াল্টার সেনার। সেনার মন্তব্য করেছেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে মানুষ এ গবেষণার সুফল পাবে। এখন সময়ই বলে দেবে তাদের আশাবাদ কতটুকু সফল হবে।ব্রেস্ট ক্যান্সারের সঙ্গে জড়িত জিন আবিষ্কারে বিজ্ঞানীরা তাদের সাফল্য বেশ আগেই দেখিয়েছেন। তারা আবিষ্কার করেছেন ব্রেস্ট ক্যান্সারের সঙ্গে জড়িত বিআরসিএ জিনগুলো। এখন যে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন তা হচ্ছে এ জিনগুলোর উৎস খঁুজে বের করা এবং তাদের মধ্যে সম্পকর্ আবিষ্কার করা। এ অন্বেষা থেকে বিজ্ঞানীরা শুরু করেছেন জিন সাকির্ট নিয়ে গবেষণা। কয়েক বছর ধরে জিন সাকির্ট ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের মধ্যে যোগসূত্র বিষয়ে নানারকম নতুন তথ্য উন্মোচিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের মাঝে রয়েছে নারী আর পুরুষ এবং অনেক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমন্বিত রূপসহ নানারকম বৈচিত্র্য। এ বৈচিত্র্য বা বিভিন্নতা হরমোন নিয়ন্ত্রণকারী জিন সাকিের্টর ফলাফল। এ সাকিের্টর অস্বাভাবিকতা নারী-পুরুষ তথা মানুষের স্বাভাবিক সংগঠনে পরিবতর্ন ঘটায়। নারীর সৌন্দযর্ ও মাতৃত্বের অন্যতম গঠন ব্রেস্ট এবং জরায়ু অনেক ক্ষেত্রেই এ জিন সাকিের্টর অস্বাভাবিকতার কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ওয়েলকাম ট্রাস্ট সাঙ্গার ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা নারীর ব্রেস্টের অস্বাভাবিকতা বা ব্রেস্ট ক্যান্সারের জিনগত কারণ ও তার সমাধান বিষয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার করেছেন। এ আবিষ্কারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন ওয়েলকাম ট্রাস্ট সাঙ্গার ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানী প্রফেসর মাইক স্ট্রাটোন ও ড. অ্যান্ডি ফুট্রেয়াল। দুজনই আণবিক জীববিজ্ঞান এবং ক্যান্সার বিষয়ে দীঘির্দন ধরে গবেষণা করছেন। মানুষের একটি ক্রোমোজোমে সাধারণত একটি ডিএনএ অণু থাকে। সুনিদির্ষ্ট ক্রোমোজোমে এ ডিএনএ অণুর পুনবির্ন্যাস বা ভেঙে যাওয়ার কারণে মানুষের শরীরে নানারকম অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ব্যাপারটি ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দেখা যায়। সুনিদির্ষ্ট একটি ক্রোমোজোমে ডিএনএ অণুর পুনবির্ন্যাস বা ভেঙে যাওয়ার কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়। এ ব্যাপারটি জেনেটিক পযাের্য় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পুস্পষ্ট ছিল না। বিজ্ঞানী মাইক স্ট্রাটোন এবং অ্যান্ডি ফুট্রেয়ালের আবিষ্কার জেনেটিক পযাের্য় কী ধরনের পুনবির্ন্যাস ঘটে তা সুস্পষ্ট করেছে। অন্যদিকে, বায়োলজিক্যাল সাইকিয়াট্রি নামক আন্তজাির্তক গবেষণা প্রবন্ধে গবেষক অ্যাডাম ডি. গোয়েস্টেলা এমন একটি হরমোনের উল্লেখ করেছেন যেটি হ্যাপি ফেসের মেমরি বাড়িয়ে দেয়। এ হরমোনটির নাম অক্সিটোসিন। উল্লেখ্য, এ হরমোনটির আরো কিছু ব্যবহার ইতোমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে।