মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল ফোন তথ্যপ্রযুক্তির আশ্চর্যজনক আবিষ্কার

মোবাইল কোম্পানিগুলো বস্তুত টাওয়ারের মাধ্যমেই আমাদের সেবা প্রদান করে থাকে। যে এলাকাজুড়ে মোবাইল ফোন কাজ করবে সে এলাকাটিকে কতগুলো অংশে ভাগ করা হয়। প্রতিটি অংশে শক্তিশালী বেতার টাওয়ার বসানো হয়। এই টাওয়ারগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে যোগাযোগের একটা অদৃশ্য জাল (নেটওয়ার্ক) তৈরি করে।
শেখ একেএম জাকারিয়া
  ১৩ মার্চ ২০২১, ০০:০০

এ সময়ে মোবাইল ফোন চেনে না বা দেখেনি- এমন কাউকে বোধ হয় আর পাওয়া যাবে না। কেননা, এখন প্রায় সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে জানে- তবে কেউ একটু কম, কেউ একটু বেশি। মোবাইল ফোন ছাড়া অত্যাধুনিক যুগে মানুষজীবন অতিবাহিত হবে সেটা ভাবাই যায় না। একটি মোবাইল ফোন মানুষের জীবনে কত যে দরকারি তা এখন সবাই জেনে গেছে। যারা একটু কম জানেন তারাও তাদের জরুরি কাজটুকু মোবাইল ফোনে সেরে নিতে পারেন। মোবাইল ফোনে এখন ইন্টারনেট সংযোগ থাকায় গুগল, ইউটিউব, টুইটার ফেসবুকে সিনেমা-নাটক দেখা যায়, গান শোনা যায়, বই-পত্রাদি পাঠ করা যায়, এসএমএস পাঠানো যায়, ছবি তোলা যায়। মোবাইলে তোলা ছবি ফেসবুকে ইউটিউবে গুগলে আপলোড দেওয়াসহ মুহূর্তেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো যায়। আবার ইন্টারনেট থেকে নাটক, সিনেমা, গান, ছবি ইত্যাদি ডাউনলোডও করা যায়। এমনকি মোবাইল ফোনে বিকাশ একাউন্ট খুলে স্বজন-পড়শিদের নিকট টাকাও পাঠানো যায় মুহূর্তেই। মোটকথা মোবাইল ফোনের উপকারিতা এতটাই বেশি, এ ছোট রচনায় লিখে শেষ করা যাবে না।

বিশ্বের এ অনন্য চমক মোবাইল ফোন সম্পর্কে জানতে গেলেই টেলিফোন আবিষ্কারের প্রসঙ্গ চলে আসে। তাই বইপত্রাদি ঘেঁটে টেলিফোন বিষয়ে যতদূর জানা যায় তা হলো, আমেরিকার খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল প্রথম টেলিফোন আবিষ্কার করেন। ১৮৭৬ সালে ১০ মার্চ তিনি তার সহকর্মী টমাস অগাস্টাস ওয়াটসনের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সফল টেলিফোনে কল করেন। এভাবেই আবিষ্কার হয় টেলিফোন। টেলিফোন উদ্ভাবনের পরপরই তার ছাড়া টেলি সংবাদ আদান-প্রদানের কথা গবেষণাকারী ও বিজ্ঞানীরা ভাবতে শুরু করেন।

এ যুগ মোবাইলের যুগ। নুনাধিক সবার হাতে হাতেই দেখা যায় স্মার্টফোন। এ স্মার্টফোন দিয়ে আমরা কত কিছুই না করি। কিন্তু অনেকেই জানি না মোবাইল ফোন আসলে কী? মোবাইল ফোন আবিষ্কার হলো কেমন করে, অথবা এটা কেমন করে কাজ করে। মোবাইল ফোন সেলুলার ফোন হ্যান্ড ফোন অথবা মুঠোফোন হচ্ছে তারবিহীন টেলিফোন বিশেষ। বাংলা অভিধানে যার আভিধানিক অর্থ করা হয়েছে এরকম- এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া যায় এমন একটি ফোন অথবা হাতের মুঠোয়, পকেটে বা হাতব্যাগে বহন করা যায় এমন তারবিহীন টেলিফোন। একটি শব্দে যার মূল অর্থ দাঁড়ায়, 'ভ্রাম্যমাণ বা স্থানান্তরযোগ্য'।

সারকথা এ ফোন সহজে যে কোনো স্থানে বহন ও ব্যবহার করা যায় বলে মোবাইল ফোন নামপ্রদান করা হয়েছে। মোবাইল ফোনকে আবিষ্কার করেছেন? যদি এ ধরনের প্রশ্ন করা হয়, উত্তর একটাই-আসলে কেউ একজন মোবাইল ফোন আবিষ্কার করেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই এটার উদ্ভাবন কাজ শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশেষ করে ১৯৪০ সালে মিলিটারিরা রেডিও টেলিফোন ব্যবহার করেন। এ রেডিও টেলিফোন ব্যবস্থার উদ্ভাবনকারী ছিলেন রেজিনালদ ফেসেন্দেন। এর কয়েকবছর পরে অর্থাৎ ১৯৪৬ সালে একটি গাড়ি থেকে প্রথম কল করা হয়। উলেস্নখ্য, সে সময় শুধু গাড়িতেই মোবাইল ফোন থাকত। যে মোবাইলের ওজন ছিল প্রায় ১ কেজি। এর পরের বছরই (১৯৪৭) সীমিত আকারে মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু হয় সেন্ট লুই শহরে। তারপর যুগে যুগে একটু একটু করে আজকের মোবাইল ফোন বেরিয়েছে এবং প্রতি মুহূর্তেই এর পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটছে। ১৯৭১ সালে সবার আগে ফিনল্যান্ডে সব মানুষের জন্য মোবাইল ফোনের প্রয়োগ শুরু হয়। পরে ১৯৭২ সালে বিশ্ববিখ্যাত মটোরোলা কোম্পানির গবেষক মার্টিন কুপার সেলুলার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রথম হাতেধরা ছোট মুঠোফোন উদ্ভাবন করে বিজ্ঞানের ইতিহাস-পাতায় নিজের নাম গৌরবময় অক্ষরে লিপিবদ্ধ করেন। বর্তমানে পাশের ঘরে ফোন করা থেকে শুরু করে বিশ্বের যে কোনো দেশে বা প্রান্তেই মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আমরা মানুষজাতি প্রাত্যহিক কত কাজেই না মোবাইল ফোন ব্যবহার করি। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি কীভাবে এই মোবাইল ফোন কাজ করে?

আসুন তবে এখনই জেনে নিই কীভাবে কাজ করে এই মোবাইল ফোন। আমরা যখন আমাদের আশপাশে তাকাই বিভিন্ন রকমের মোবাইল টাওয়ার (মাস্তুল) দেখতে পাই। মোবাইল কোম্পানিগুলো বস্তুত টাওয়ারের মাধ্যমেই আমাদের সেবা প্রদান করে থাকে। যে এলাকাজুড়ে মোবাইল ফোন কাজ করবে সে এলাকাটিকে কতগুলো অংশে ভাগ করা হয়। প্রতিটি অংশে শক্তিশালী বেতার টাওয়ার বসানো হয়। এই টাওয়ারগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে যোগাযোগের একটা অদৃশ্য জাল (নেটওয়ার্ক) তৈরি করে। উলেস্নখ্য, প্রতিটি মোবাইল সেটের মধ্যে থাকে একটা করে 'অ্যান্টেনা'। যা সব সময় তরঙ্গের মাধ্যমে টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। মনে করেন, আপনি কোনো ব্যক্তিকে কল করতে চান, তখন ওই ব্যক্তির নাম্বার আপনার মোবাইল সেট থেকে ডায়াল করার জন্য কল বাটনে চাপলে আপনার মোবাইল বাস্তবিকপক্ষে এই টাওয়ারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাদের জানান দেয়, আমার এ নাম্বারে সংযোগ দরকার। তখন ওই মোবাইল টাওয়ার অন্য মোবাইল টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের ডায়ালকৃত লোকটিকে খুঁজে নেয় এবং হ্যালো বলার সঙ্গে সঙ্গে বিদু্যৎগতিতে তা তরঙ্গে পরিণত হয়। মোটকথা, নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমাদের মুখে উচ্চারিত শব্দগুলো খুব সহজে চলে যায় অন্যপ্রান্তে। গ্রাহকের ফোনসেট বেতার তরঙ্গকে কথায় বা আওয়াজে রূপান্তরিত করে। এ সব কাজ টাওয়ার করে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। যার ফলে আমরা বুঝতে পারি না এর মধ্যে কত কাজ ঘটে যায়। এভাবেই অনেক জায়গায় বসানো নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে সমন্বয় করে মোবাইল ফোনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

\হলেখক: মেডিকেল টেকনোলজিস্ট

সদর হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ,বাংলাদেশ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে