পুষ্টিবিদদের স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত করার বিকল্প নেই

খাদ্য ও পুষ্টির কথা ভাবলে প্রথমেই যে বিষয়টা মাথায় আসে তা হলো ইমিউনিটি বা দেহের নিজস্ব রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। কথায় আছে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় খাদ্য। আবার সবার দেহে খাদ্যের চাহিদাও সমান নয়। মনে রাখতে হবে প্রয়োজনের চেয়ে কম খাদ্য গ্রহণ করলে সমস্যা আবার বেশি খাদ্য গ্রহণ করলেও সমস্যা। শরীরে একেক সময় একেক ধরনের পুষ্টির চাহিদা বেশি হয়।

প্রকাশ | ০১ মে ২০২১, ০০:০০

আনিসুর রহমান
পুষ্টি ক্ষেত্রে আমাদের অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে। মাতৃমৃতু্য, শিশুমৃতু্যসহ অনেক রোগের হার কমলে তা সন্তোষজনক হারে কমেনি। পুষ্টির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক খর্বতা, কৃশকায় এবং কম ওজনের শিশু এই তিনটি ক্ষেত্রে সূচকের প্রত্যাশিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পুষ্টির উন্নয়নের এই ধারা অনেক ধীরগতিতে চলছে। আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। তার জন্য থাকা দরকার সুপরিকল্পনা। একটা পরিসংখ্যানের দিকে নজর দেওয়া যাক। কয়েকবছর আগের একটি পরিসংখ্যান মতে দেশে প্রায় ৮০-৯০ লাখ লোক ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত, হৃদরোগে আক্রান্ত ২০-২২ লাখ এবং ১০-১২ লাখ লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে এ পরিসংখ্যান আরও ভয়াবহ। অথচ এসব রোগের সঙ্গে খাদ্য ও পুষ্টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এসব অসংক্রামক রোগের পরিসংখ্যান নিম্নমুখী করতে হলে খাদ্য ও পুষ্টির প্রতি জোর দিতে হবে। পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস এসব রোগের হারকে কমিয়ে আনতে পারে। পুষ্টিবিদরা (ঘঁঃৎরঃরড়হরংঃ) খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। অসুস্থ হলেই কেবল পুষ্টিবিদের কাছে যেতে হবে বিষয়টি এমন নয়, একজন সুস্থ মানুষও পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে লাইফস্টাইল ও খাদ্যাভাস করলে তার হার্ট অ্যাটাক, কিনডি ফেইল, ডায়াবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাসসহ যে কোনো রোগের ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারে। আবার কোনো রোগে আক্রান্ত হলে তার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা (ষরভবংঃুষব) কেমন হতে পারে সে পরামর্শ পুষ্টিবিদরাই দিতে পারে। খাদ্য ও পুষ্টির কথা ভাবলে প্রথমেই যে বিষয়টা মাথায় আসে তা হলো ইমিউনিটি বা দেহের নিজস্ব রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। কথায় আছে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় খাদ্য। আবার সবার দেহে খাদ্যের চাহিদাও সমান নয়। মনে রাখতে হবে প্রয়োজনের চেয়ে কম খাদ্য গ্রহণ করলে সমস্যা আবার বেশি খাদ্য গ্রহণ করলেও সমস্যা। শরীরে একেক সময় একেক ধরনের পুষ্টির চাহিদা বেশি হয়। একজন মানুষের দেহের গঠন, ওজন, বয়স, পেশা এবং লিঙ্গ বিবেচনা করে সঠিকভাবে খাদ্যের চাহিদা বলতে পারে একমাত্র পুষ্টিবিদরাই। গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের সঠিক পরিচর্যা ও খাদ্যাভ্যাস জানার জন্য পুষ্টিবিদের কাছে যাতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের সমন্বয়ে রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ফলে তাদের চিকিৎসাসেবার মান অনেক উন্নত। কিন্তু আমাদের দেশের সরকারি হাসপাতালে যান সেখানে পুষ্টিবিদ পেশার কাউকে খুঁজে পাবেন না। আপনার কি খেতে হবে তা পরামর্শ দেবে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়, ক্লিনার এবং ট্রলিবয়সহ অন্যরা। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, দেশে পুষ্টিসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেন সেখানেই কোনো পুষ্টিবিদ নেই। দেশে পুষ্টির বিভিন্ন জরিপ করা হয় সেখানেও নেই কোনো পুষ্টিবিদ। তাহলে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের পুষ্টিসংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত কারা নেন? ২০১৭ সালে পুষ্টিবিদ নিয়োগের জন্য গেজেট প্রকাশ হয়। কিন্তু অজানা কোনো কারণে এখনো কোনো পুষ্টিবিদ নিয়োগ দেওয়া হয়নি। পুষ্টিবিদ নিয়োগ না দিয়ে পুষ্টির উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেওয়া উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর মতোই। বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। এমন অবস্থায় পুষ্টিবিদদের স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত করার বিকল্প নেই।