সাইবার হামলা থেকে ব্যাংকিংয়ের নেটওয়াকর্ রক্ষণাবেক্ষণ

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

ছবি ঘোষ
আন্তঃসীমান্ত ব্যাংকিংয়ের বিশাল নেটওয়াকের্ক সাইবার হামলা থেকে সুরক্ষিত করতে বোডর্ রুল বেঁধে দেয়ার জন্য একটি টাস্কফোসর্ চালু করেছে বিশ্বের বৃহৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকসমূহ। এ বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির প্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকগুলো। দুটি সূত্রের বরাতে এ খবর দিয়েছে বাতার্সংস্থা রয়টাসর্। খবরে বলা হয়, এ গ্রীষ্মে সুইজারল্যান্ডের ব্রাসেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর একটি কমিটি এই টাস্কফোসর্ গঠন করে। বিশ্বের প্রভাবশালী ২৫টি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এই কমিটি ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস (বিআইএস)-এর অংশ। টাস্কফোসের্ও এই ২৫টি ব্যাংকের প্রতিনিধিরা থাকবেন। দুই সূত্র জানায়, প্রতারণার বিরুদ্ধে নিজেদের সুরক্ষার কৌশল সম্পকের্ সদস্য ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে কমিটি। এ টাস্কফোসর্ শেষ পযর্ন্ত আন্তঃব্যাংক লেনদেনের জন্য একটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা সনদ তৈরি করতে পারে, যা গৃহীত হতে পারে বিশ্বব্যাপী। এই নতুন নীতিমালা বা দিকনিদের্শনা অথর্ লেনদেনে জড়িত ব্যাংক ও সুইফটের মতো নেটওয়াকর্সমূহের দায়িত্বের আওতায় পড়তে পারে যারা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর পেমেন্ট ইন্সট্রাকশন আদান প্রদান করে। হ্যাকারদের কাছে নিজেদের সিস্টেম সুরক্ষিত করতে কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেয়া ব্যবস্থায় ঘাটতি থাকলে প্রত্যেক সদস্যের কী পদক্ষেপ অনুসরণ করা উচিত তা সুপারিশ করারও লক্ষ্য আছে টাস্কফোসের্র। এছাড়া সুপারিশ করা হবে এমন প্রেক্ষাপটে স্থানীয় রেগুলেটরদের কী ভূমিকা পালন করা উচিত এবং আরেকটি অনুপ্রবেশ ঘটলে কী করা উচিত তা নিয়েও। একটি সূত্রের ভাষ্য, ‘এটি এখনও রূপদানের পযাের্য় রয়েছে। তবে এটি কোন দ্রæত প্রক্রিয়া নয়।’ আরেকটি সূত্র জানায়, টাস্কফোসের্র একটি লক্ষ্য হবে কারেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিংয়ের ‘ভাঙন’ (ব্রেকডাউন) কোথায় লুকিয়ে আছে তা খুঁজে বের করা। কমিটি অন পেমেন্টস অ্যান্ড মাকের্ট ইন্সফ্রাসট্রাকচাসর্ (সিপিএমআই) এই উদ্যোগ শুরু করেছে। তবে মূল প্রতিষ্ঠান বিআইএস এ ব্যাপারে কোানা মন্তব্য করেনি। দুই সূত্র জানিয়েছে, ফেডারেল রিজাভর্ ব্যাংক অব নিউইয়কের্ রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার চুরির চেষ্টা ও পরবতীের্ত অন্যান্য সাইবার হামলার ঘটনাগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর এই কমিটিকে তৎপর হতে নাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চুরির ঘটনাটি ঘটে ফেব্রæয়ারির গোড়ার দিকে। রয়টাসের্র অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিউইয়কর্ ফেডের মধ্যে যোগাযোগে ঘাটতি ছিল। এছাড়া সতকর্তার লক্ষণ গুরুত্ব সহকারে নিতে ব্যথর্ হয় ফেড। কয়েক মাস ধরে একে অপরের ওপর দায় চাপানোর পবর্ শেষে, একাধিক কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও পুলিশের তদন্তকারীরা অথর্ উদ্ধার, দায়ীদের খুঁজে বের করা ও ঝুঁকিতে থাকা ব্যাংকিং সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে একে অপরকে সহযোগিতা করছে। মাকির্ন ডেমোক্রেট সিনেটর গ্যারি পিটাসর্ সম্প্রতি বিশ্বের শীষর্ ২০ অথর্নীতির জোট জি২০-র প্রতি সাইবার অপরাধকে অগ্রাধিকার দেয়ার আহŸান জানিয়েছেন। এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এটি দুবর্লতা দেখিয়ে দিয়েছে। আর বাংলাদেশের নজির দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে বিপুল পরিমাণ অথর্ অল্প সময়ের মধ্যেই স্থানান্তরিত করা সম্ভব।’ রয়টাসের্র খবরে আরও বলা হয়, একটি সূত্র জানিয়েছে বেলজিয়ামের ন্যাশনাল ব্যাংক, যেটি সরাসরি সুইফটের তত্ত¡াবধানে রয়েছে, সেটিও টাস্কফোসর্ গঠনে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে। নিউইয়কর্ ফেডও এই টাস্কফোসের্ অংশ নিয়েছে। প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের মতো অথর্ লেনদেন করে ব্যাংকটি। জুনে ফেড জানায়, সাইবার নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক পেমেন্ট কাঠামোর ব্যাপারে অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করছে তারা। তবে এ ব্যাপারে বেলজিয়ামের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, নিউইয়কর্ ফেড, সুইফট Ñ কেউই কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। এই টাস্কফোসের্ সবচেয়ে প্রভাবশালী ২৫টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিরা থাকবেন। বিআইএস’র ওই কমিটিতেও এ ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিরা রয়েছেন। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক অব জাপান, দ্য ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক অব চায়না ও ফেডারেল রিজাভর্ ব্যাংক (আমেরিকা)। তবে কাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নেই। তবে ব্যাংক-টু-ব্যাংক পেমেন্ট ও সেটেলমেন্টের নিরাপত্তা ও কাযর্কারিতা নিয়ে কাজ করে এ কমিটি। এ বছরের মধ্যেই কমিটি বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পরামশর্ শুরু করতে পারে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। তবে কোনো কিছু আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।