বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জগৎ ছাড়িয়ে মহাজগতে

রায়হান শাহরিয়ার
  ১৪ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে...সেই জগৎ ছাড়িয়ে মানুষ এখন ছুটে চলেছে মহাজগতের পানে। মানুষ আর এখন মহাজাগতিক চিন্তার ক্ষেত্র থেকে দূরে নয়। তাদের কল্পনাতে ধরা দিচ্ছে চাঁদে বসবাসে আকাঙ্ক্ষা, মঙ্গলে অভিযান। ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্র অধু্যষিত আমাদের এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে, কমপক্ষে এক কোটি গ্রহে প্রাযুক্তিকভাবে উন্নত সভ্যতার বিকাশ ঘটা অসম্ভব নয়।

বহির্জাগতিক প্রাণ সন্ধানের ক্ষেত্রে সাফল্যের একটি ঘটনা জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গির সীমানা বাড়াবে। প্রথমবারের মতো জীববিজ্ঞানীরা বুঝতে পারবেন আর কী কী ধরনের প্রাণ কাঠামো সম্ভব। যখন বলা হয় বহির্জাগতিক প্রাণের অনুসন্ধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ তখন এ কথা বোঝানো হয় না যে নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে বহির্জাগতিক প্রাণের ব্যাপারে বরং শুধু এ কথা বলতে চাচ্ছে যে এ অনুসন্ধান মহামূল্যবান। পৃথিবীতে প্রাণের প্রকৃতি এবং গ্রহান্তরের কোনো জায়গায় প্রাণ আছে কিনা তার অনুসন্ধান হলো একই প্রশ্নের দুটি দিক। মঙ্গল অভিযানের যে আগ্রহ তা এই প্রশ্নগুলোর সঙ্গে জড়িত।

প্রায় এক বছর মহাশূন্যে কাটানোর পর মার্কিন মহাকাশচারী স্কট কেলি ও নভোশ্চর মিখাইল করনিয়েনকো আমাদের জগতে ফিরে এসে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। মহাশূন্যে দীর্ঘতম অবস্থান না হলেও কোনো আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে কারও কাটানো সবচেয়ে বেশি সময় এটা এবং এতে ওজনশূন্যতা, অপ্রশস্ত জায়গা ও ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়ার প্রতি উন্মুক্ত থাকার কারণে মানুষের শরীরে কী ঘটে, তার গবেষণার সুযোগ পেয়েছে নাসা।

পৃথিবীবাসী নির্দিষ্ট পরিমাণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিকশিত হয়ে উঠেছে। তো মহাশূন্য ভ্রমণের গোড়া থেকেই নাসা আমাদের গ্রহের টানে বাইরে থাকা অবস্থায় মানুষের শরীরে কী ঘটে, তা জানার চেষ্টা করে আসছিল।

'আমরা যেসব স্বাভাবিক ব্যাপারকে নিশ্চিত ধরে নিই, কেউ নিশ্চিত ছিল না যে কী ঘটবে'- বলেছেন স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়ামের স্পেস হিস্ট্রির কিউরেটর ও চেয়ার ভ্যালেরি নিল। 'ঠিকমতো গিলতে পারবে তো ওরা? ঠিকমতো দেখতে পাবে তো? প্রস্রাব করতে পারবে?'

একেবারে প্রথম দিকের পরীক্ষাগুলো পশুদের সাহায্যে করা হয়েছিল- যেমন কুকুর, বাঁদর ও ইঁদুরের কথা বলা যেতে পারে। তারপর ১৯৬২ সালে মহাশূন্যচারী জন গেস্নন অ্যাপল জুসের একটা টিউবসহ পৃথিবী প্রদক্ষিণকারী প্রথম আমেরিকানে পরিণত হন।

ভ্রমণের মেয়াদ বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শারীরবৃত্তীয় পরীক্ষার মেয়াদও বেড়েছে। আজকাল আইএসএস নভোচারীরা ফ্লাইটের আগে একগাদা পরীক্ষা, ইনফ্লাইট নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা আর কঠিন জমিনে ফিরে আসার পর প্রলম্বিত পুনর্বাসনের মুখে পড়েন।

কেলি ও করনিয়েনকোর পক্ষে তাদের 'মহাশূন্যে এক বছর' মিশনটি ছিল মহাশূন্যে অবস্থানের সময় কেবল শারীরবৃত্তীয় বিষয়ের প্রতি মনোযোগের প্রথম প্রয়াস- পৃথিবীর বুকে কেলির একজন যমজ ভাই থাকায় প্রকল্পটি আরও বেশি কৌতূহলোদ্দীপক হয়ে উঠেছিল। তার মানে, বিজ্ঞানীরা দুজন মানুষের দিকেই নজর রাখতে এবং মহাশূন্য সফরকালে কোনো ধরনের জেনেটিক পরিবর্তন ঘটে থাকলে অনায়াসে শনাক্ত করতে পারবেন।

মহাশূন্যে অভিযানে বিজ্ঞানীরা প্রথম যেসব ব্যাপার আবিষ্কার করেছেন, তার একটা হলো কম মাধ্যাকর্ষণের জীবনযাত্রা শক্তিশালী হৃৎপিন্ডসহ হাড় ও পেশির জোগান দেয় না। পৃথিবীমুখী থাকা অবস্থায় এসব দৈহিক অঙ্গ আসলে শ্রেফ আমাদের সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করতেই প্রচুর খেটে থাকে। মাধ্যাকর্ষণের নিম্নমুখী শক্তির অভাবে শরীর উলেস্নখযোগ্য কম কাজ করে পেশির ক্ষয় ও হাড়ের পুরুত্ব হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দৃষ্টিকে প্রভাবিত করতে পারার মতো অপটিক নার্ভের ওপর চাপসহ নানা মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করে। পৃথিবীতে ফিরে আসার পর চোখের সমস্যা সাধারণত ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি যাত্রার ক্ষেত্রে নাসার ধারণালাভের অন্যতম বড় ধরনের বিষয় এটা।

পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র এক ধরনের প্রাকৃতিক বর্মের কাজ করে, যার ফলে উচ্চক্ষমতার তেজস্ক্রিয়ার কবল থেকে পৃথিবীপৃষ্ঠের জীবন রক্ষা পায়। নইলে আমাদের ডিএনএকে তা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারত। এ নিরাপদ এলাকার বাইরে আইএসএসে কৃত্রিম আবরণ নভোচারীদের তেজস্ক্রিয়া থেকে আংশিক রক্ষা করতে পারে। কিন্তু সব ধরনের তেজস্ক্রিয়ার পক্ষে তা কার্যকর নয় বলে নভোচারীদের ক্যানসার ও অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রতি উন্মুক্ত করে তোলে।

মঙ্গলের বুকে কোনো সফর আরও নিষ্ঠুর হয়ে দাঁড়াতে পারে। তার কারণ যাত্রার সময়ের উন্মুক্ততার সঙ্গে যোগ হবে লাল গ্রহের প্রাকৃতিক চৌম্বক বর্মের অনুপস্থিতি। সর্বশেষ আইএসএস মিশন থেকে বিজ্ঞানীরা মহাশূন্যের তেজস্ক্রিয়া কীভাবে কেলির ডিএনএতে পরিবর্তন আনতে পারে এবং ভবিষ্যতের মঙ্গলমুখী অভিযাত্রীদের ক্ষেত্রে তার সম্ভাব্য তাৎপর্য ঠিকমতো বোঝার আশা করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে