বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জীবদেহের সব তথ্যের নীলনকশা

রায়হান শাহরিয়ার
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

সব জীবিত বস্তু সে উদ্ভিদ হোক আর প্রাণী হোক, তার প্রকৃতি নির্দেশিত হয় বংশগতির বাহক জিনের কতগুলো জটিল রাসায়নিক অণুর মাধ্যমে। জিনের এই রাসায়নিক অণুগুলো হলো ডিএনএ এবং আরএনএ। এই দুটির সমন্বিত সংযোগে রচিত হয়েছে আমাদের জীবনের নীলনকশা। জীবনের স্বতঃস্ফূর্ত বা আপনা-আপনি উৎপত্তি ধারণা কিন্তু বহু প্রাচীন।

প্রজন্মের পর প্রজন্ম এসব বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরিত হয় কিছু বস্তুর মাধ্যমে যেগুলোকে বলে বংশগতি বস্তু। বংশগতি বস্তুর প্রধান উপাদান হলো ক্রোমোজম। এই ক্রোমোজম নিয়ে কিছু কথা আলোচনা করা যাক- মানুষের দেহ অসংখ্য কোষ দিয়ে গঠিত। প্রতিটি কোষের একটি কেন্দ্র থাকে যার নাম নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকে ক্রোমোজম, জোড়ায় জোড়ায়। ক্রোমোজম হলো কোষের নিউক্লিয়াসের ভেতর অবস্থিত অনুলিপন ক্ষমতাসম্পন্ন রংধারণকারী নিউক্লিও প্রোটিন নিয়ে গঠিত সূত্রাকৃতির ক্ষুদ্রাজ্ঞ, যা বংশগতির প্রভৃতি কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ক্রোমোজম আবার নিউক্লিয়াসের বাইরে সাইটোপস্নাজমেও থাকতে পারে। প্রত্যেক নিউক্লিয়াসে প্রজাতির বৈশিষ্ট্য অনুসারে নির্দিষ্টসংখ্যক ক্রোমোজম থাকে। আদিকোষে কোনো সুগঠিত নিউক্লিয়াস না থাকায় এতে কোনো সুগঠিত ক্রোমোজম থাকে না। ক্রোমোজমকে একমাত্র কোষ বিভাজনের মেটাফেজ ধাপে মাইক্রোসফটে দেখা যায়। এই ভৌত গঠনের মধ্যে টেলোমিয়ার নিয়ে বর্তমানে গবেষণা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, টেলোমিয়ারকে নিয়ন্ত্রণ করে জীবের বয়স একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্থির রাখা যাবে। টেলোমিয়ার ক্রোমোজমের উভয় প্রান্তে অবস্থিত একমাত্র অঞ্চল যেখানে ডিএনএ একসূত্রক। স্বাভাবিক কোষে টেলোমিয়ার ছোট হয় প্রত্যেক কোষ বিভাজনে এবং টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্য যখন ছোট হয়ে চরম সীমায় পৌঁছায় তখন কোষের মৃতু্য হয়। এই টেলোমিয়ার টেলোমেরাস এনজাইম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই এটা নিয়ে বিজ্ঞানীরা খুব আশাবাদী, হয়তো এরই কল্যাণে আমরা অদূর ভবিষ্যতে দেহঘড়িকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাঁধতে পারব। এবার ক্রোমোজমের রাসায়নিক গঠন নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলা যাক। ক্রোমোজমের রাসায়নিক উপাদানের ভেতর রয়েছে উঘঅ, জঘঅ, নন হিস্টোন প্রোটিন, অন্যান্য যৌগিক প্রোটিন, লিপিড, এনজাইম এবং বিবিধ আয়ন। এত সময় ধরে শুধু ক্রোমোজমের গঠন নিয়ে বলা হলো, কিন্তু এর কাজ কী তা বলা হয়নি। ক্রোমোজমকে বংশগতির ধারক ও বাহক বলা হয়, কারণ তা জীবের বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে, কোষ বিভাজনে সহায়তা করে, জিন অনুধারণ করে। এ জন্যই ক্রোমোজমকে জীবনের মূল ভিত্তি বলা হয়।

ডিএনএ হচ্ছে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিয়িক এসিড এবং আরএনএ হলো রাইবোনিউক্লিয়িক এসিডের সংক্ষিপ্ত রূপ। প্রতিটি ডিএনএতে থাকে চার ধরনের নাইট্রোজেনাস বেস-অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন, থায়মিন।

আবার প্রত্যেক আরএনএ অণুতে থাকে চার ধরনের বেস কিন্তু এখানে থায়ামিনের বদলে ইউরাসিল-ট থাকে। থায়ামিন এবং ইউরাসিলের মধ্যে সাদৃশ্য আছে বটে কিন্তু বৈসাদৃশ্যও কম নয়। আর জীবনের রসায়নে সামান্য তফাতের পরিমাণও বিশাল হতে পারে। এ জন্যই একে অন্যের থেকে আলাদা। ডিএনএ অণুর গঠনে আরও দুটি উপাদান যুক্ত থাকে তা হলো ফসফরিক এসিড ও ডিঅক্সিরাইবোজ সুগার। এই ফসফরিক এসিড এবং ডিঅক্সিরাইবোজ সুগারকে ডিএনএ অণুর মেরুদন্ড বলা হয়, কারণ এরাই ডাবল হেলিক্স গঠন করে এবং নাইট্রোজেনাস বেসগুলো এই পেঁচানো হেলিক্সের মধ্যে হাইড্রোজেন বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে।

ডিএনএ একমাত্র উপাদান যা দেহের সব কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে। প্রকৃতপক্ষে ক্রোমোজমের ভেতরে কী ধরনের প্রোটিন তৈরি হবে তা ডিএনএ নির্ধারণ করে। এসব প্রোটিনের মাধ্যমেই সব শারীরবৃত্তীয় কাজ সংঘটিত হয়। ডিএনএর আরেকটি কাজ হচ্ছে রেপিস্নকেশন তথা সংখ্যাবৃদ্ধি। ডিএনএ নিজের হুবহু প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে, ডিএনএই যেহেতু জীবনের মূল তাই আরেকটি প্রতিলিপি তৈরি হওয়ার অর্থই আরেকটি জীবন তৈরি হওয়া, এভাবেই জীবের বংশবৃদ্ধি ঘটে। মোট কথা, ডিএনএ জীবনের মৌলিক একক এবং কার্যকর শক্তি, সে-ই জীবের সব কাজকর্ম পরিচালনা করে এবং তার থেকে আরেকটি জীবের উৎপত্তি ঘটায়। ডিএনএর মধ্যে তাই জীবের সব বৈশিষ্ট্য ও বংশবৃদ্ধির তথ্য জমা করা থাকে। ডিএনএর মধ্যে থাকে জিন, জিনের সিকোয়েন্সই জীবদেহের সব তথ্যের ভান্ডার। একটা জীবিত প্রাণী কীভাবে জন্ম হবে এবং বিকশিত হবে এর একটা নীলনকশা থাকে। ক্ষুদ্র জীবাণু থেকে শুরু করে মানুষের মতো জটিল একটা প্রাণীর ক্ষেত্রেও সেই নীলনকশাটি একই প্রক্রিয়ায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা যে কোনো তথ্য সংরক্ষণের জন্য আগে কাগজে লিখে রাখতাম, আজকাল রাখি কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভে কিংবা পেনড্রাইভে। জীবিত প্রাণীরা তাদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করে ডিএনএর ডাবল হেলিক্স। তাই ডিএনএকে বলা হয় 'ঞযব ংবপৎবঃ ড়ভ ষরভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে