বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবেগের বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন

সোরিয়া রওনক
  ০২ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

মস্তিষ্কের চিন্তা ও কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় বোধ ও তা উপলব্ধির সৃষ্টি করে আবেগ। সেই বোধ বা উপলব্ধি অনুযায়ী আচরণ করে জীব। এ বোধ বা উপলব্ধি থেকে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী আচরণ করে মানুষ। এ বোধ বা উপলব্ধি সৃষ্টিতে অনেক সময় একটি একক আবেগ কাজ করে, আবার অনেক সময় অনেক আবেগের মিশ্রণ কাজ করে। যেমন- প্রেম আবেগটি এককভাবে প্রেমের বোধ সৃষ্টি করে। আবার নৈতিকতাবোধ কাজ করে সিমপ্যাথি গিল্প আর গ্রাইভের মতো আবেগগুলোর সমন্বয়ে। কেন একটি চুক্তি অথবা নিয়ম মানার ক্ষেত্রে নৈতিকতা বোধ আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে? এভাবে আমাদের বোধ তৈরি এবং বাস্তব পরিস্থিতি মোকাবিলায় আবেগগুলো তার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে অথবা কয়েকটি আবেগ পরস্পরের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে কাজ করে। আবেগ আমাদের পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজিত হতে সাহায্য করেছে। আমাদের পূর্বপুরুষকে বিপদ থেকে রক্ষা করে টিকে থাকতেও সাহায্য করেছিল এ আবেগ।

কোনো শিশুকে ভাষা শিখতে হলে ভাষা শুনতে হবে। সে যে ভাষা শিখবে সেই ভাষার মানুষের মধ্যে থাকতে হবে। শিশুর মধ্যে ভাষাসংক্রান্ত থাকা জিনগুলো শিশুকে ভাষা শিখতে সাহায্য করে। এ জিনগুলো না থাকলে শিশু ভাষা শিখতে পারে না। তবে শুধু জিনগুলো থাকলেই হবে না। জিনগুলোকে নির্দিষ্ট বিন্যাসে সক্রিয় হয়ে কাজ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন বিশেষ পরিস্থিতি। এ পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারিত হয় সে কীভাবে কোন ভাষা শিখবে। বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে থাকলে বাংলা ভাষা শিখবে। ইংরেজি ভাষাভাষীদের মধ্যে থাকলে ইংরেজি ভাষা শিখবে।

কালচারালি স্পেসিফিক আবেগও এ রকম একটি বিষয়। কালচারালি স্পেসিফিক আবেগের ক্ষেত্রে যা হয়- আবেগসংক্রান্ত বেসিক ইমোশন রিলেটেড জিনকে কাজে লাগিয়ে বিশেষ পরিস্থিতির সাপেক্ষে আবেগসংক্রান্ত আচরণ করে থাকে। এ বিশেষ পরিস্থিতি মানুষকে সে যে সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠে সেই সংস্কৃতির প্রকাশে সাহায্য করে থাকে।

কালচারালি স্পেসিফিক ইমোশনের সঙ্গে মিথ্যা আবেগের যোগসূত্র স্থাপন করা যায়। কীভাবে? যে কোনো ধারাবাহিক আচরণ মানুষ করতে পারে যদি সে বিষয়টি ভালোভাবে শিখে নেয়। গবেষকরা বলছেন, কোনো একটি বিশ্বাস বা তত্ত্ব যদি আবেগত প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ধারাবাহিক আচরণের শর্তারোপ করে বা পরিস্থিতি তৈরি করে, তাহলে এ পরিস্থিতিতে কালচারালি স্পেসিফিক আবেগ যেমন সক্রিয় হয় সে রকম ফলস ইমোশন বা মিথ্যা আবেগ সক্রিয় হয়।

বেসিক ইমোশন ও কালচারালি স্পেসিফিক ইমোশনের পাশাপাশি তৃতীয় আরেক ধরনের ইমোশন কাজ করে মানুষের মধ্যে। তা হলো হায়ার কগনিটিভ ইমোশন।

রাস্তায় পায়ের সামনে একটি সাপ দেখে ভয়ে আপনি দৌড়ে পালালেন। অর্থাৎ সাপ দেখার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আপনার মধ্যে ভয় জেগে উঠল এবং আপনি দৌড়ে পালালেন। এ ঘটনাটা হচ্ছে ভয়ের প্রাথমিক পথমালার উদাহরণ।

অর্থাৎ নিম্ন মস্তিষ্কের সেনসরি থ্যালামাস সাপের ছবির তথ্য নিল বা ভয়ের উদ্দীপনা নিল সেই উদ্দীপনায় তথ্যকে উচ্চ মস্তিষ্কে বা সেরেব্রাল কর্টেক্সে না পাঠিয়ে নিম্ন মস্তিষ্কের ভেতরে রেখেই স্নায়বিক পথে অ্যামিয়াপলাত পাঠাল। অ্যামিগডালা প্রয়োজনীয় প্রসেসিং শেষে ভয়ের প্রতিক্রিয়া দেখাল। পুরো প্রক্রিয়াটি কয়েক সেকেন্ডে ঘটে থাকে।

তবে প্রয়োজনীয় স্মৃতি শিক্ষা আর মনোযোগ থাকলে প্রাথমিক পথে নয় বরং উচ্চতর পথে ভয়ের অনুভূতি কাজ করে। তখন দেখা যায়, ভয়ের উদ্দীপনাকে সেনসরি থ্যালামাস প্রসেস করে উচ্চ মস্তিষ্কে পাঠায়। উচ্চ মস্তিষ্ক থেকে প্রসেস হয়ে ভয়ের তথ্য অ্যামিগডালায় যায়। অ্যামিগডালায় সর্বশেষ প্রসেস শেষে প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া হয়।

প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এ নতুন পথ? নির্ভুল প্রতিক্রিয়ার জন্য। এর মানে হলো, অনেক সময় দেখা যায় প্রাথমিক পথে দ্রম্নত প্রতিক্রিয়া দেখালে ভয় হয়। যেমন পায়ের সামনে দড়ি দেখে সাপ মনে করে প্রতিক্রিয়া দেখানো। এভাবে প্রাথমিক পথে দ্রম্নত প্রতিক্রিয়া দেখালে ভুল হয়ে থাকে। ভুল সংশোধনের উপায় দেখিয়েছে উচ্চতর পথ বা হায়ার পাথওয়ে। একে কর্টিকেল পাথওয়েও বলা হয় কারণ এ পথে কর্টিকেল প্রসেসিং হয়। আবার কনগিটিভ পাথওয়েও বলা হয় কারণ এ পথে সেরেব্রাল কর্টেক্সের সহযোগিতায় কগনিশন প্রক্রিয়া হয়। যা হোক, উচ্চতর পথে গেলে প্রয়োজনীয় স্মৃতি এসে মনোযোগকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সচেতন বিশ্লেষণ করে, তখন এ উপলব্ধি হয়, না এটা দড়ি, সাপ নয়। তখন অ্যামিগডালা প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া দেখায়। অর্থাৎ ভয়ের প্রতিক্রিয়াকে থামিয়ে দেয়। আর যদি ওটা সত্যি সত্যি সাপ হয়, তাহলে ঠিক করে যে ভয়ই চলবে নাকি অন্য কোনো আবেগ যেমন বোধ বা অন্য কিছুকে সক্রিয় করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে