সচেতন ব্যবহারে নিরাপদ ফেসবুক

ফেসবুক ব্যবহার এখন অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বন্ধুদের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঘটনা শেয়ার না করলে যেন দিনটা মোটেও ভালো কাটতে চায় না। কিন্তু আপনার এ ভালো লাগার ফেসবুক কতটা নিরাপদ?

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

রায়হান শাহরিয়ার
ফেসবুকের মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু সমাজবিরোধী কর্মকান্ড উস্কে দিয়েছে, যা সমাজে ছড়িয়েছে সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। তাই ফেসবুকের সতর্ক ও সীমাবদ্ধ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখনকার সময় হাতে স্মার্টফোন আছে অথচ ফেসবুক ব্যবহার করেন না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। ফেসবুক ব্যবহার এখন অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বন্ধুদের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঘটনা শেয়ার না করলে যেন দিনটা মোটেও ভালো কাটতে চায় না। কিন্তু আপনার এ ভালো লাগার ফেসবুক কতটা নিরাপদ? বিপদের হাত থেকে কিছুটা নিরাপদ রাখতে ফেসবুক 'টু-স্টেপ ভ্যারিফিকেশন' সুবিধা চালু করেছে। এটি ব্যবহার করলে প্রতিবার নতুন ডিভাইস/ব্রাউজারে আপনার কাঙ্ক্ষিত সেবায় (উদাহরণস্বরূপ ফেসবুকে) সাইন-ইন করার সময় ইউজারনেম-পাসওয়ার্ড ইনপুট করার পরেও সেখানে আরেকটি পিন কোড দিতে হবে। এই কোডটি মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে আসে। এগুলোকে সিকিউরিটি কোডও বলা হয়, যা প্রতিবারই সার্ভার থেকে পাঠানো হয়। দ্বিস্তর ভ্যারিফিকেশন সক্রিয় থাকা যে কোনো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে চাইলে কমপক্ষে তিনটি বিষয় দখলে থাকতে হবে। সেগুলো হচ্ছে ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড এবং যে মোবাইল নাম্বারে সেবাটি রেজিস্ট্রেশন করা আছে/সিকিউরিটি কোড। ইউজারনেম-পাসওয়ার্ড নিয়ে নিলেও একই সময়ে আপনার মোবাইল ফোনটি হ্যাকারের হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই ফেসবুকে সাইন-ইন করার সময় সিস্টেম যখন মোবাইলে এসএমএসে আসা পিন চাইবে তখন সেটি তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হবে না। আর এই যাত্রায় আপনার অ্যাকাউন্টটিও হ্যাকিংয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে। লগইন অ্যাপ্রম্নভাল চালু করতে চাইলে প্রথমে আপনার ফেসবুকে সাইন-ইন করুন। একই ব্যবহারকারীর একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলা আগেও নিষিদ্ধ ছিল। তবে খুব একটা কড়াকড়ি ছিল না। এখন এ বিষয়ে ফেসবুক খুব কঠোর নিয়ম মেনে চলছে। ফলে একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। ফেসবুক ছবির ব্যাপারে ভীষণ সেনসেটিভ। ফেসবুক ব্যবহারের নীতিমালায় উলেস্নখ আছে, আপনি এমন কোনো বিষয়বস্তু পোস্ট করতে পারবেন না, যাতে ভয়ভীতি, ঘৃণা কিংবা অপ্রীতিকর কিছু প্রকাশ পায়। এমন কোনো ছবি পোস্ট করতে পারবেন না, যা দৃশ্যমান সহিংসতা কিংবা নগ্নতা প্রকাশ করে। ফেসবুকের এই নিয়ম এমনিতে ঠিকঠাক মনে হলেও অনেক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন, তারা অনেক ব্যক্তিগত কথাও লিখতে পারছেন না। স্বাধীন মত প্রকাশেও বাধা তৈরি করছে বলে অভিযোগ অনেকের। ফেসবুক থেকে কোনো মেইল এলে সতর্ক থাকুন। ইনবক্সে ঢুকেই যদি মেলে থাকা লিঙ্কে ক্লিক করে বসেন, বিপদে পড়বেন। কারণ ওই মেইল হয়তো ফেসবুক থেকে আসেইনি। এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, ইদানীং কিছু অত্যাধুনিক কৌশল কাজে লাগিয়ে হ্যাকাররা ওত পেতে রয়েছে আপনার সর্বস্ব হাতানোর জন্য। সে?াশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আপনার গতিবিধির ওপর সর্বক্ষণ নজর রাখছে তারা। ফেসবুক প্রোফাইলে আপনার উপস্থিতি কিছুদিন টের না পেলেই একটি বিশেষ ধরনের মেইল ও তার সঙ্গে লিঙ্ক পাঠাচ্ছে আপনার ওই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত মেইল আইডিতে। সেই মেইলে লেখা থাকছে, 'আপনি বেশ কিছুদিন ফেসবুকে ছিলেন না। আপনার মেসেজগুলো শিগগিরই ডিলিট হতে চলেছে'। এর সঙ্গেই আপনাকে দুটো অপশন দেওয়া হবে। 'ভিউ মেসেজ' এবং 'গো টু ফেসবুক'। এর কোনো একটিতে ক্লিক করলেই আপনার যাবতীয় তথ্য চলে যেতে পারে হ্যাকারদের হাতে। ব্যবহারকারীদের বিনামূল্যে টেক্সট মেসেজ নোটিফিকেশন সুবিধা প্রদান করছে ফেসবুক। যখন কোনো কম্পিউটার অথবা মোবাইল থেকে আপনার অ্যাকাউন্টে ঢোকা হবে তখন টেক্সট মেসেজ নোটিফিকেশন আপনার কাছে পৌঁছে যাবে। এরপর বুঝতে পারবেন কে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করছে। ফেসবুকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য তৃতীয় পক্ষের অ্যাপিস্নকেশনের অভাব নেই। কিন্তু হ্যাকাররা অ্যাপসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর আইডির নিয়ন্ত্রণ কব্জা করে থাকে। অনেক অ্যাপ কোনো নির্দিষ্ট সময়ে এগুলো ব্যবহার করে থাকি কিন্তু ব্যবহার শেষে সেগুলো মুছে ফেলতে কিংবা নিষ্ক্রিয় করতে ভুলে যাই। তৃতীয় পক্ষের অ্যাপটি কতটুকু নিরাপদ তা ব্যবহারের আগে ভালো করে যাচাই করে নিন। এ ছাড়া কোনো লিঙ্কে ক্লিক করলে কোনো শপিং ওয়েবসাইট বা বিজ্ঞাপনের পাতায় পৌঁছে যেতে পারেন। আপনাকে সেখানে নিয়ে ফেলতে পারলে তাতেও সাইবার দুর্বৃত্তদের যথেষ্ট লাভ। কারণ কোনো বিজ্ঞাপন প্রদর্শন বা ওয়েবসাইটে ক্লিক বাড়াতে পারলেই প্রতি ক্লিকের জন্য অর্থ পায় তারা। সঙ্গে বহু ক্ষেত্রে সেই ওয়েবপেজের হাতে চলে আসতে পারে আপনার গোপন নথিও। যারা না জেনেই ক্লিক করে ফেলেন, তারা ভাবেন হয়তো ভুল করে অন্য সাইটে ঢুকে পড়েছেন, তাই দ্বিতীয়বার একই চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু একই জিনিস হয় আবারও। স্ক্যাম মেইলে আসা যে কোনো লিঙ্কে ক্লিক করলেও একই ঘটনা ঘটে। তাই এ ধরনের মেইল পেলে তা এড়িয়ে চলার পরামর্শই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ফেসবুকে সব ঠিকঠাক রয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ফেসবুকে ঢুকেই লগ ইন করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। পারিবারিক ঠিকানা ফেসবুকে না দেওয়াই ভালো কিংবা প্রোফাইলে নিজের সেলফোন নাম্বার উলেস্নখ করা ঠিক নয়। কখনই অপরিচিতদের থেকে পাঠানো বন্ধুত্বের অনুরোধ ভালোমতো না দেখেই গ্রহণ করবেন না। ছোট কিংবা সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। পাসওয়ার্ড দেওয়ার সময় নাম্বার, অক্ষর, চিহ্ন ব্যবহার করতে পারেন। কিছু দিন পর পর পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন। আপনার সক্রিয় ই-মেইল ব্যবহার করুন।