ইলেকট্রনিক কাডর্ আর অ্যাপসে চলছে ই-কমাসর্

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আল-আমিন হোসেন
অনলাইনের এই যুগে ইলেকট্রনিক কাডর্ আর অ্যাপসে চলছে কেনাকাটা মডেল : অপরাজিতা
বাংলাদেশে উন্নত বিশ্বের মতো শুরু হয়েছে ইলেকট্রনিক কাডর্ আর অ্যাপসের ই-কমাসর্। এক্ষেত্রে ব্যাংক এবং বিভিন্ন ই-কমাসর্ প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভ‚মিকা রাখছে। ব্যাংকিং সেবার সুবিধা বঞ্চিত বা ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা সাধারণ মানুষের আথির্ক অন্তভুির্ক্তর লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিকাশ। দেশের অভ্যন্তরে টাকা পাঠানোর পাশাপাশি আরও নানা সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সব ধরনের মানুষ সম্পকের্ গবেষণা করেই এই অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এখানের শিক্ষিত শ্রেণির মানুষের জন্য যেমন সুবিধা রাখা হয়েছে, তেমনি যারা কম অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন তাদের জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাংলা ছাড়াও ইংরেজি ভাষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘ছবি ও লেখা সমৃদ্ধ এই অ্যাপে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্স বা মৌখিক নিদের্শনারও সুবিধা আছে। অথার্ৎ যে কোনো লেনদেনের ক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নিতে হবে তা সুনিদির্ষ্ট ধাপে গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী বাংলা বা ইংরেজি ভাষায় নিদের্শনা দেয় এই অ্যাপ।’ কামাল কাদীর বলেন, বিকাশে লেনদেনের ক্ষেত্রে এখন আর প্রাপকের নম্বর টাইপ করার দরকার নেই। বিকাশ অ্যাপে সেন্ড মানি, বাই এয়ারটাইম (মোবাইলে রিচাজর্) ও রিকোয়েস্ট মানি লেনদেনের সময় সরাসরি কন্ট্যাক্ট লিস্ট থেকে নম্বর নেয়া যাবে। ফলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভুল এড়াতে রাখা হয়েছে কিউআর কোড ব্যবস্থাও। নতুন অ্যাপ ব্যবহারের কিছু ছাড় দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, আমরা প্রোমোশনের জন্য সাভির্স কমিয়ে রেখেছি। যারা এই অ্যাপের মাধ্যমে ক্যাশ আউট করবেন, তাদের প্রতি হাজারে ১৫ টাকা সাভির্স চাজর্ কাটা হবে। অ্যাপের বাইরে যেটা সাড়ে ১৮ টাকা নিধাির্রত আছে। অথার্ৎ হাজারে সাড়ে ৩ টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা অ্যাপের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছি। এটার মাধ্যমে কোনো পাসোর্নাল নম্বরে টাকা পাঠানো হলে কোনো চাজর্ কাটা হবে না। অ্যাপের বাইরে যেটি ৫ টাকা বিদ্যমান আছে। তাছাড়া এই অ্যাপের মাধ্যমে পবিত্র রমজান মাসে কেনাকাটার টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া যাবে। তবে সেটা নিধাির্রত আউটলেটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। গ্রাহকরা এ ক্ষেত্রে টাকা পরিশোধের পর ২৫ শতাংশ ক্যাশ-ব্যাক পাবেন। কিন্তু অ্যাপ কীভাবে পাবেন? কামাল কাদীর বলেন, গুগলের অ্যাপ স্টোর থেকে বিকাশের অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। এরপর সেটিকে ইনস্টল করে নিতে হবে। এটা স্মাটের্ফানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ই-কমাসর্ বিজ্ঞাপনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ক্রিশেওর তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়ার ই-কমাসর্ লেনদেনের ২৭ শতাংশ হয় মোবাইল ডিভাইসে। আর এ হার সময়ের সঙ্গে বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী এক বছরের ১৬ হাজার কোটি ডলারের ১৪০ কোটি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ক্রিশেও। প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়ায় ই-কমাসের্র লেনদেনে মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহারের হার স্পেন ও ইতালির সমান। যুক্তরাষ্ট্রে এর হার কিছুটা বেশি। ই-কমাসর্ ও মোবাইল ডিভাইসের মধ্যে সম্পকের্র গভীরতা বোঝাতে বেশকিছু তথ্য তুলে ধরেছে ক্রিশেও। প্রতিবেদনে জানানো হয়, মোবাইল ডিভাইস সাপোটর্ করে এ ধরনের ই-কমাসর্ সাইটের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে বাড়ছে। ফলে মোবাইল ডিভাইসেই মানুষ এখন কেনাকাটায় প্রয়োজনীয় যে কোনো সাইটের সন্ধান পাচ্ছে। আরো জানানো হয়, ডেস্কটপের চেয়ে মোবাইল ডিভাইসেই ই-কমাসের্র লেনদেন বেশি হচ্ছে। ফ্যাশন, লাক্সারি ও ভ্রমণসংক্রান্ত পণ্যই ই-কমাসের্ বেশি কেনাকাটা হচ্ছে বলে জানানো হয়। দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়ায় ই-কমাসর্ খাতে মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার বৃদ্ধি নিয়ে ক্রিশেওর দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়া বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়োকো সাইতো বলেন, ই-কমাসর্ খাতে পুরো বিশ্বে দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়ার অগ্রগতি সবচেয়ে বেশি। এর পেছনে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে মোবাইল ডিভাইস। বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের মতো উন্নয়নশীল বাজারগুলোয় এ প্রবণতা অধিক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব বাজারে মোবাইল ডিভাইসকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। নতুন গ্রাহকরা ডেস্কটপ কেনার আগে মোবাইল ডিভাইস কিনছেন। এতে আগামীতে ই-কমাসর্ লেনদেনে এসব ডিভাইসের ব্যবহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ছে। সাইতো আরো বলেন, উন্নয়নশীল বা উন্নত বাজার সবর্ত্রই মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে বিশ্বব্যাপী ই-কমাসের্র প্রসারে এটি গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা রাখছে এবং রাখবে। তাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মোবাইলবান্ধব ই-কমাসর্ সেবা চালুর দিকে মনোনিবেশ বাড়ানো উচিত। এরই মধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ ই-কমাসর্ প্রতিষ্ঠান তাদের মোবাইল সংস্করণ চালু করেছে। শুধু ই-কমাসর্ নয়, অনলাইনের অনেক সেবাই এখন মোবাইলভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। আগামীতে হয়তো এমন সময় আসবে যখন ইন্টারনেটের সমাথর্ক হিসেবে মোবাইল ডিভাইসের নামটি ব্যবহৃত হবে। পৃথকভাবে বিবেচনা করতে গেলে দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়ার মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় ই-কমাসর্ খাতে লেনদেনে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহৃত হয় ৩১ শতাংশ ক্ষেত্রে। তাইওয়ানে এ হার ৩১ ও সিঙ্গাপুরে ২৯ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ই-কমাসর্ লেনদেনে মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়েই বাড়ছে দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়ায় ডিভাইসের এ ধরনের ব্যবহার। দেশের মধ্যে এ খাতে সক্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার নানাভাবে সহযোগিতা করছে।