শব্দহীন ভিডিও যখন বিজ্ঞানশিক্ষার অংশ

বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে অসংখ্য উদ্ভাবন রয়েছে। বিজ্ঞানে গর্বের কারণ হয়েছে অসংখ্য বাঙালি। তাদের গবেষণা এবং অনুপ্রেরণা বাংলাদেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলোর প্রতিটি বিজ্ঞানপ্রেমীর কাছে পৌঁছে দিতে চায় টিম বিজ্ঞানপ্রিয়। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানপ্রিয় তাদের নিজস্ব অ্যাপ নির্মাণ, রিসার্চ এবং প্রকাশনা, বিজ্ঞানের উপযুক্ত প্রয়োগগুলো কার্যকরভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বিনামূল্যে বিজ্ঞানসফর প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে ইচ্ছুক।

প্রকাশ | ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

সাজেদুর আবেদীন শান্ত
ভিডিওতে নেই কোনো ভয়েস, তবুও লাখ লাখ ভিউ, শেয়ার হাজারে হাজারে। বলছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় একটি শিক্ষাধর্মী পস্ন্যাটফর্ম 'বিজ্ঞানপ্রিয়'র কথা। ২০১৮ সালের পহেলা ডিসেম্বর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মাদ শাওন মাহমুদ বিশুদ্ধ বাংলায় বিজ্ঞানকে কীভাবে আরও উপভোগ্য হিসেবে এগিয়ে নেওয়া যায়, এই প্রয়াসে বিজ্ঞানপ্রিয় নামে একটি পস্ন্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। সেদিনের শূন্য থেকে যাত্রা করা এই প্রতিষ্ঠানটি আজ ৫ লাখের পরিবার। প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ শাওন মাহমুদ বলেন, 'গত ১ যুগে আলোর গতিতে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়েছি আমরা। বর্তমানে মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেবল 'শোনা এবং দেখা' মিডিয়ায় বেশি অভ্যস্ত। তাই বাংলা অক্ষরগুলো দেখে দেখে পড়ার এই চমৎকার প্রবৃত্তিকে কিছুটা হলেও ধরে রাখার উদ্দেশ্যে ভয়েসহীন টেক্সটেড ভিডিও কনটেন্ট নির্মাণের পদ্ধতিকে বেছে নিই আমরা। তথ্য এবং সময়ের অপচয় না করে ক্ষুদ্রতর সময়ে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হালনাগাদ করাই এ ধরনের কন্টেন্টের বিশেষত্ব। যদিও বিজ্ঞানের জটিল জটিল টার্মগুলোকে দুই-তিন লাইনে প্রকাশ করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তবে ভাষার সঠিক ব্যবহার এবং শব্দের উপযুক্ত বিন্যাস বিজ্ঞানপ্রিয়কে দ্রম্নততর সময়ে কিছুটা জনপ্রিয়তার দিকে নিয়ে গেছে।' চলতি বছর একুশে ফেব্রম্নয়ারিতে বিজ্ঞানপ্রিয় তাদের প্রথম ই-ম্যাগাজিন 'নেবুলা' প্রকাশ করে, যা ১৬ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত সর্বমোট ৩ হাজারের বেশি বার ডাউনলোড হয়। ম্যাগাজিনটির সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. তৌহিদুজ্জামান, যিনি একই সঙ্গে অঙ্কুর ফাউন্ডেশন এবং ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত আছেন। বিজ্ঞানপ্রিয় সম্পর্কে প্রথম আলো এবং বিজ্ঞানচিন্তা সহসম্পাদক আব্দুল গাফফার রনি বলেন, 'অসংখ্য বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠনের মধ্যে বিজ্ঞানপ্রিয় একটু একটু করে বেড়ে উঠে সুবিশাল একটা অবস্থানে পৌঁছে গেছে। ভাবতেই অবাক লাগে, ৪-৫ লাখ ছেলেমেয়ে বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করছে, তর্ক-বিতর্ক করে শিখছে, বিজ্ঞানপ্রিয় এমন একটি পস্ন্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে।' বাংলাদেশের প্রথম বায়োনিক আর্মের উদ্ভাবক এবং যুব তারকা জয় বড়ুয়া লাভলু বলেন, 'বিজ্ঞানপ্রিয় এর মাধ্যমে নতুন করে বিজ্ঞান বিষয়ে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি। বিজ্ঞানপ্রিয় সাধারণ মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলার প্রয়াসে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে নতুন কিছু শেখার পাশাপাশি, বিজ্ঞানকে নতুনভাবে জানতে এবং সবচেয়ে জরুরি কথা, বিজ্ঞানকে উপলব্ধি করতে পারছে সবাই। উলেস্নখ্য, সরাসরি বিজ্ঞানমনস্কদের নিয়ে চর্চা করা এবং সাধারণ মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলার মধ্যে পার্থক্য আছে।' ২০২১ সালের ২৮ জুলাই বিজ্ঞানপ্রিয়র ৫ লাখ ফলোয়ার বিশিষ্ট ফেসবুক পেজটি হ্যাক হয়ে যায়। পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত পেজটিতে ক্রমাগত অশালীন ছবি পোস্ট করে পেজটি ডিজ্যাবল করে দেয় সংশ্লিষ্ট হ্যাকাররা। একই বছর ০৫ ডিসেম্বর, নতুন করে বিজ্ঞানপ্রিয়র পেজের কার্যক্রম শুরু করা হয়। বিজ্ঞানপ্রিয়র অন্যান্য কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানের কৌতূহল বজায় রাখতে বিজ্ঞানপ্রিয় তাদের ফেসবুক পেজের পাশাপাশি দুটো ফেসবুক গ্রম্নপে নিয়মিত বিজ্ঞানকেন্দ্রিক নানা প্রশ্নের উত্তর, বস্নগ প্রকাশ, সুস্থ মিম এবং কনটেস্ট পরিচালনা করে চলেছে। বিজ্ঞানপ্রিয়র দুটো গ্রম্নপ, 'বিজ্ঞানপ্রিয় পরিবার' এবং 'জাস্ট আ থিওরি', যার মধ্যে বিজ্ঞানপ্রিয় পরিবারে প্রতিদিন প্রায় ২০০০+ বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশ্ন জানতে চেয়ে পোস্ট করা হয়। সেই সঙ্গে বিজ্ঞানপ্রিয়র তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে নিয়মিত বিশুদ্ধ বিজ্ঞানভিত্তিক আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকে। ২০২১-এর ১২ অক্টোবর বিজ্ঞানপ্রিয় 'সেভটিনস' নামক তাদের একটি বার্ষিক প্রোগ্রাম লঞ্চ করে। প্রোগ্রামটির মূল অভিপ্রায় হলো- কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য এবং ইন্টারনেট জগতে সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদান। ভবিষ্যৎ লক্ষ্য দেশের সবপ্রান্তে বিজ্ঞানের জড়তা, ভুল উদ্দেশ্য নিয়ে বিজ্ঞানশিক্ষা এবং বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানকে আরও জনপ্রিয় এবং উপভোগ্য করে তোলার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানপ্রিয়র ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট নিবেদিতপ্রাণ টিম নিস্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে অসংখ্য উদ্ভাবন রয়েছে। বিজ্ঞানে গর্বের কারণ হয়েছে অসংখ্য বাঙালি। তাদের গবেষণা এবং অনুপ্রেরণা বাংলাদেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলোর প্রতিটি বিজ্ঞানপ্রেমীর কাছে পৌঁছে দিতে চায় টিম বিজ্ঞানপ্রিয়। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানপ্রিয় তাদের নিজস্ব অ্যাপ নির্মাণ, রিসার্চ এবং প্রকাশনা, বিজ্ঞানের উপযুক্ত প্রয়োগগুলো কার্যকরভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বিনামূল্যে বিজ্ঞানসফর প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে ইচ্ছুক।