মস্তিষ্কের ইমেজিং প্রযুক্তি

প্রকাশ | ২১ মে ২০২২, ০০:০০

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
মানুষের তথা পুরো বিশ্বজগতের অন্যতম রহস্যময় বিষয় হচ্ছে মস্তিষ্ক। এর মধ্যে মানুষের মস্তিষ্কের দক্ষতা ও ব্যাপ্তি অন্য যে কোনো মস্তিষ্কের চেয়ে বেশি। বিজ্ঞানের আদিকাল থেকেই মানুষ মস্তিষ্ক সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বেশ ভালোভাবেই পেয়েছিলেন যে মস্তিষ্ক মানুষের অন্যতম একটি অঙ্গ। মস্তিষ্ক কোনো কারণে অসুস্থ হলে সেই রোগ সারানো কঠিন। মস্তিষ্ক স্নায়ুবিক প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে এমন একটি ব্যবস্থা যেটি মানুষের শারীরিক ও মানসিক প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রক। তাই মস্তিষ্ক নিয়ে পৃথিবীতে গবেষণা চলছে তো চলছেই। মস্তিষ্কবিষয়ক গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়টি আসলেই বেশ কঠিন ছিল। তখন মস্তিষ্ক সম্পর্কে তথ্য পাওয়া বেশ দুরূহ ছিল। কারণ মস্তিষ্কের কার্যক্রম বুঝতে হলে চাই জীবিত অবস্থায় মস্তিষ্কের ভেতরে থাকা তথ্য। মস্তিষ্কের কোন অংশ কখন কীভাবে সক্রিয় হয় সেই তথ্য। কিন্তু তা কী করে পাওয়া সম্ভব? এ প্রশ্নের অন্বেষা থেকেই বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন বিভিন্ন ইমেজিং পদ্ধতি। এ ইমেজিং প্রক্রিয়ার সাহায্যে মস্তিষ্কের বিভিন্ন কার্যক্রম বোঝা সম্ভব কোনো রকম রক্তপাত ছাড়াই। অর্থাৎ বাইরে থেকে যন্ত্রের সাহায্যে মস্তিষ্কের ভেতরকার তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। বর্তমান সময়ে এসে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও আণবিক জীববিজ্ঞান অনেক অজানা তথ্য নিয়মিত উন্মোচন করার ক্ষমতা অর্জন করেছে ইমেজিং প্রযুক্তির কল্যাণে। এমআরআই, এফএমআরআই, পেট, ক্যাট, ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাফি, ম্যাগনেটোএনসেফালোগ্রাফি, ইরোস ইত্যাদি প্রযুক্তি মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের ত্রিমাত্রিক চিত্র দেওয়ার পাশাপাশি মস্তিষ্কের কোন অংশ সক্রিয় কোন অংশ নিষ্ক্রিয়, মস্তিষ্কের নিউরাল আর জেনেটিক সার্কিটগুলো সম্পর্কে ধারণা প্রদানসহ অসাধারণ সব সুবিধা গবেষক আর বিজ্ঞানীদের দিয়ে যাচ্ছেন। এ সাফল্য থেকেই বিজ্ঞানীরা 'হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট'-এর মতো শুরু করেছেন 'হিউম্যান কগনোম প্রজেক্ট'। পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় বস্তু মস্তিষ্ককে উন্মোচনের নেশায় মেতেছেন বিজ্ঞানীরা। \হব্রেইন ইমেজিংয়ের সূত্রপাত হয় এক্স-রে ইমেজিং দিয়ে। এ এক্স-রে ইমেজিংয়েরই উন্নত সংস্করণ হচ্ছে কম্পুটেড টোমোগ্রাফি (সিটি স্কান) বা কম্পুটেড এক্সিয়াল টোমোগ্রাফি (ক্যাট)। কোনো আঘাতের চিহ্ন বা তীব্রতা বোঝার জন্য চিকিৎসকরা সিটি স্ক্যানের সহযোগিতা নিয়ে থাকেন। ক্ষতিকর টিসু্য থেকে যে নিঃসরণ হয় তার পরিমাপ এক্স-রে বিমের থেকে পাওয়া যায়। একটি ছোট্ট স্থানে কতটুকু এক্স-রে বিম শোষিত হচ্ছে তা থেকে ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। এক্স-রে ইমেজ কম্পিটারে প্রদর্শিত হয়ে থাকে। গাণিতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইমেজকে বাস্তবসম্মত ও সুস্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়। আরেক ধরনের ইমেজিং প্রযুক্তি হচ্ছে ডিফুজ অপটিক্যাল ইমেজিং বা ডিফুজ অপটিক্যাল টোমোগ্রাফি (ডট)। এ পদ্ধতিতে ইনফ্রারেড লাইটের সাহায্যে মস্তিষ্ক ও দেহের ইমেজিং করা হয়ে থাকে। তবে এটি বেশি জনপ্রিয় নয়। \হঅন্যদিকে ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাফি (ইইজি)-তে ইলেকট্রিক ফিল্ডের মাধ্যমে মস্তিষ্কের ইলেকট্রিক্যাল কার্যক্রম পরিমাপ করে ইমেজিং করা হয়ে থাকে। আর ম্যাগনেটোএনসেফালোগ্রাফি (মেগ)-এ চুম্বক ক্ষেত্রের সাহায্যে মস্তিষ্কের ইলেকট্রিক্যাল কার্যক্রম পরিমাপ করে ইমেজিং করা হয়ে থাকে। ইইজির চেয়ে মেগ বেশি কার্যকর এবং ব্যবহার করা সহজ। ইভেন্ট রিলেটেড অপটিক্যাল সিগন্যাল (ইরোস) পদ্ধতিতে ডট পদ্ধতির মতো ইনফ্রারেড লাইট ব্যবহার করা হয়ে থাকে তবে এ ক্ষেত্রে ইরোস পদ্ধতিতে কাজ করা সহজ। ইরোস খুব স্বল্প সময়ে ক্ষুদ্র স্থানের সক্রিয়তা ও তীব্রতা পরিমাপ করতে পারে বলে এটি বেশ জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। আরেকটি জনপ্রিয় ইমেজিং প্রযুক্তি হচ্ছে পজিট্রন ইমিশন টোমোগ্রাফি বা পেট। এ প্রযুক্তির কাজ করে থাকে মেটাবোলিক্যালি অ্যাকটিভ তেজস্ক্রিয় রাসায়নিকের সহযোগিতায়। রক্তের মধ্যে এ রাসায়নিক ইনজেকশন করে প্রবেশ করানো হয় এবং তারপর সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে যন্ত্রের সাহায্যে ইমেজিং করা হয়। এটি অনেক জনপ্রিয় একটি ইমেজিং পদ্ধতি। \হইমেজিং প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) ও ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এফএমআরআই)। এ প্রযুক্তি ব্যবহার সহজ এবং মস্তিষ্কের ত্রিমাত্রিক চিত্র প্রদানে সক্ষম। এফএমআরআই মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহের তারতম্য তুলনা করার মাধ্যমে ইমেজ করে দেখায় যে মস্তিষ্কে কোনো অংশ বেশি সক্রিয় আর কোনো অংশ কম সক্রিয়। এভাবে কোনো কাজ করার সময় কোনো ব্যক্তির কোনো অংশ সক্রিয় থাকে বা মস্তিষ্কের কোন অংশ কী কাজ করে তা এফএমআরআই প্রযুক্তির সাহায্যে জানা সম্ভব হচ্ছে। তাছাড়া মস্তিষ্কের জেনেটিক ও নির্উযাল বিন্যাস উন্মোচনে এ প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি কার্যকর। \হএভাবে মস্তিষ্কের ইমেজিং প্রযুক্তিগুলো মানুষের জ্ঞানের অন্বেষাকে ও চিকিৎসাব্যবস্থাকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। মানুষ এখন মানবমনের রহস্য উন্মোচনে নিয়োজিত।