ফুয়েল সেলের প্রযুক্তিগত উন্নতি

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২২, ০০:০০

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
বর্তমানে জ্বালানি সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানী ও গবেষকরা ফুয়েল সেলের প্রযুক্তিগত উন্নতির চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি প্রস্তুতকারী ফোর্ড, ভলভো, টয়োটা ইত্যাদি কোম্পানি ফুয়েল সেলের পরিচালিত গাড়ির নমুনা বা মডেল তৈরি করেছে। ফুয়েল সেলচালিত গাড়িগুলোকে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল কার বলা হয়। তবে হাইড্রোজেনের উৎপাদন, মজুত ও সরবরাহ করা বেশ কঠিন। বহুদিন আগে আবিষ্কৃত হলেও ফুয়েল সেল জনপ্রিয় না হওয়ার পেছনে এটাও একটি বড় কারণ। বর্তমানে সাধারণত প্রাকৃতিক গ্যাস, প্রোপেন, মিথানল ইত্যাদি থেকে রিফর্মিংয়ের মাধ্যমে হাইড্রোকার্বনকে হাইড্রোজেন গ্যাসে রূপান্তরিত করা হয়। তবে এ ব্যাপারে এখনো গবেষণা চলছে। এ ছাড়া বর্তমানে অল্প পরিমাণ জায়গায়, রিফর্মিংয়ের মাধ্যমে রূপান্তরিত হাইড্রোজেন গ্যাসের মজুত অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি করার জন্য মেটাল অরগানিক ফ্রেম (ধাতু ও হাইড্রোকার্বন সম্মিলিত যৌগ) নামক নতুন যৌগ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে। অটোমোবাইল ছাড়াও বিভিন্ন বহনযোগ্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি যেমন : ল্যাপটপ, ক্যামেরা, মোবাইল ফোন ইত্যাদিতে ফুয়েল সেল ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া অনেক গবেষক ফুয়েল সেলচালিত বিদু্যৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরির কথা ভাবছেন। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাগুলো যেমন বিদু্যৎ উৎপাদন খরচ, অধিক পরিমাণে হাইড্রোজেন গ্যাসের মজুত বৃদ্ধির নিশ্চয়তা ইত্যাদি কাটিয়ে উঠতে পারলে নির্ভরযোগ্য এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে ফুয়েল সেলই হয়ে উঠবে আগামী দিনের শক্তির প্রধান উৎস। ফুয়েল সেল হলো এক ধরনের রাসায়নিক ক্রিয়ার দ্বারা বিদু্যৎপ্রবাহ সৃষ্টিকারী যন্ত্র। জার্মান বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান ফ্রেডরিক স্কোবিয়েন (ঈযৎরংঃরধহ ঋৎরবফৎরপয ঝপযস্খহনবরহ) প্রথম ফুয়েল সেল সম্পর্কে ধারণা দেন ১৮৩৮ সালে। আর তার ঠিক পরের বছর ১৮৩৯ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে শৌখিন ব্রিটিশ পদার্থবিদ স্যার উইলিয়াম রবার্ট গ্রোভ ফুয়েল সেলের মাধ্যমে বিদু্যৎ উৎপাদনের ধারণা বাস্তবায়ন করেন। ১৯৫৮ সালে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে ফুয়েল সেলের ব্যবহার শুরু হয়। ফুয়েল সেল সাধারণ ব্যাটারির (তড়িৎ রাসায়নিক কোষ) চেয়ে ভিন্ন ধরনের। সাধারণ ব্যাটারির রাসায়নিক উপাদান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আর ব্যবহার উপযোগী থাকে না। কিন্তু ফুয়েল সেলের রাসায়নিক উপাদান প্রতিবার প্রদান করে তা ব্যবহার করা যায়। তাই এটা এক ধরনের নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যম। ফুয়েল সেলের প্রধান রাসায়নিক উপাদান হলো হাইড্রোজেন ও বাতাস থেকে প্রাপ্ত অক্সিজেন। তা ছাড়া অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে হাইড্রোকার্বন যৌগ যেমন অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ফুয়েল সেল পাওয়া যায় এবং এটা নির্ভর করে রাসায়নিক উপাদানের ওপর। ফুয়েল সেলের রাসায়নিক উপাদান ভিন্নতার জন্য বিভিন্ন প্রকারের নামকরণ করা হয়। আর তার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো যেমন- ১. প্রোটোন বিনিময়কারী ফুয়েল সেল ২. প্রত্যক্ষ ব্যবহৃত মিথানল ফুয়েল সেল অথবা মিথানল ফুয়েল সেল ৩. সলিড অক্সাইড ফুয়েল সেল ৪. বিগলিত কার্বনেট ফুয়েল সেল ৫. অ্যালকালাইন বা ক্ষারধর্মী ফুয়েল সেল ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের ফুয়েল সেল পাওয়া গেলেও তাদের কর্মপদ্ধতি এক। ফুয়েল সেলে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় সরাসরি ডিসি কারেন্ট হয় এবং একই সঙ্গে পানি ও তাপ উৎপন্ন হয় (চিত্র ১)। সাধারণ ব্যাটারির মতো ফুয়েল সেলেও অ্যানোড (ধনাত্মক প্রান্ত) এবং ক্যাথোডের (ঋণাত্মক প্রান্ত) মধ্যে ইলেকট্রোলাইট থাকে। তাই এর গঠন অনেকটা স্যান্ডউইচের মতো। অ্যানোডে হাইড্রোজেন ভেঙে তৈরি হয় প্রোটন (ঐ+) এবং ইলেকট্রন (ব-)। প্রোটনটি ইলেকট্রোলাইটের মধ্যদিয়ে ক্যাথোডে গিয়ে অক্সিজেনের সঙ্গে মিশে তৈরি করে পানি। আর এ ইলেকট্রনের চলাফেরায় তৈরি হয় বিদু্যৎ। ফুয়েল সেল ওজনে হালকা এবং পরিবেশবান্ধব। কিন্তু অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা এতটা লক্ষ্য করা যায় না।