বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় কাজ করছে 'বায়ো-বাংলা'

মোহাম্মদ অংকন
  ০৬ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

বায়ো-বাংলা বাংলাদেশের একটা নতুন বিজ্ঞানভিত্তিক পস্ন্যাটফর্ম যেটি শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে কিছু বিজ্ঞানপ্রেমী মানুষের দ্বারা। যাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সব থেকে আপডেটেড বায়োলজি সম্পর্কিত গবেষণা নিয়ে কাজ করা যেটিকে বলা হয় 'সিনথেটিক বায়োলজি'। সেটার প্রচার-প্রসারণ এবং এই বিজ্ঞানকে বাংলাদেশের গবেষণা খাতে পরিচিতি লাভ করানোর জন্য মূলত প্রচেষ্টাটি শুরু করা হয়। প্রচেষ্টাটি শুরু হয় চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকং-এর কোলাবোরেটিভ একটা প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে। কারওয়ান বাজারে অবস্থিত আইসিটি ভবনে সেই প্রোগ্রামটি আয়োজিত হয় ২০১৭ সালে একগুচ্ছ তরুণ বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানপ্রেমীর সমন্বয়ে। তারপর এ নিয়ে বেশ কিছু প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে উলেস্নখযোগ্য কিছু প্রোগ্রাম সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জাদুঘরে একটি প্রোগ্রাম করা হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন হোসাইন মোহাম্মদ মাসুম যিনি কিনা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ওপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন সুদূর প্যারিস থেকে। সেখানে তারা হার্ডওয়্যার সম্পর্কিত কিছু বায়ো-হ্যাকিং, সিনথেটিক বায়োলজি, জিনোম এডিটিংসহ এরকম নতুন ধরনের টপিকের ওপর আলোচনা করা হয়। এই টপিকগুলো এখন সারা পৃথিবীর অর্থনৈতিক ইনোভেশনকে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। যেমন- আমরা বলি, ১৯৬০ সালের কম্পিউটার সায়েন্স যা পৃথিবীকে এক বৈপিস্নক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।

বায়োলজিক্যাল বিজ্ঞান এমন একটি পস্ন্যাটফর্ম যেখানে নতুন ভ্যাকসিন তৈরি করা থেকে শুরু করে কৃষিপণ্য, প্যাথোজেন, সুপারবাগসহ নানাবিধ সমস্যা যেমন- ক্লাইমেট চেঞ্জ, যে সব ইমারজেন্সি ডিজিস আছে, সেগুলো থেকে শুরু করে যত ধরনের বায়োলজিক্যাল সমস্যায় বর্তমানে পৃথিবীতে মানুষ পড়ছে, মোকাবিলা করছে, তার প্রত্যেকটি সমস্যাই এই 'সিনথেটিক বায়োলজি' দিয়ে সমাধান করা যাচ্ছে। হোসাইন মোহাম্মদ মাসুম জানান, ''আমাদের 'বায়ো-বাংলা'র আরেকটি সাব-ব্রাঞ্চ হলো 'কার্ল এগ্রো'। যেটি এখন আইজিএম এবিগ্রেডের আন্ডারে ইনকিউবিশন সেন্টারে ছয় মাসের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর বিখ্যাত ইনকিউবিশন সেন্টার ফাউন্ডার ইনস্টিটিউটের ইনকিউবিশনের জন্যও নির্বাচিত হয়েছে। আমরা আমাদের পস্ন্যাটফর্ম থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং প্রোগ্রাম অফার করে যাচ্ছি, যেখানে আমরা মূলত সিনথেটিক বায়োলজি, বায়ো এন্ট্রাপায়োনিওরশিপ, জিনোম এডিটিং ইত্যাদি বিষয়ে হাতে-কলমে প্রোগ্রামের আয়োজন করে থাকি। আমাদের লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশে গবেষণা খাতে নতুন বিজ্ঞানী তৈরি করা। পাশাপাশি এই ফিল্ডের খুঁটিনাটি তাদের জানানো। যাতে তারা ভবিষ্যতে এই ফিল্ডে আসার জন্য উৎসাহিত হয় এবং নতুন একটা রেভলিউশন যুক্ত করে পৃথিবীতে যে সমস্যাগুলো আছে, তা সমাধানে কাজ করতে পারে। বায়োলজিক্যাল বিজ্ঞানকে যদি আমরা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারি, তবে আমরা আরও পিছিয়ে পড়ব। যেমনটা পিছিয়ে গিয়েছিলাম ১৯৬০ সালে। সেই সময়ের কম্পিউটার রেভলিউশনে বাঙালিদের ভূমিকা ছিল না তেমন। এখন যে নতুন বিজ্ঞান রেভলিউশনের সুযোগ তৈরি হয়েছে অর্থনৈতিক ইনোভেশনের মাধ্যমে সেটাতে যদি আমরা অংশগ্রহণ করতে না পারি, আবারও আমরা পিছিয়ে পড়ব বিজ্ঞান গবেষণাসহ অর্থনৈতিকভাবেও। নতুন জ্ঞান সৃষ্টির দ্বারও বন্ধ হয়ে যাবে। বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা খাতকে ব্যাপকভাবে প্রমোট করাই আমাদের উদ্দেশ্য।''

বায়ো-বাংলায় এখন পর্যন্ত ১৫০০ জনেরও অধিক গবেষক, শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তারা ট্রেনিং দিয়েছেন। এখানে উলেস্নখযোগ্য কিছু বিষয় নিয়ে তারা ট্রেনিং প্রোগ্রামগুলো চালু রেখেছেন। তারমধ্যে মলিকুলার বায়োলজি একটি, যেটা খুবই বেসিক বিষয়ক বায়োলজিস্টদের জন্য যা জানা জরুরি। এই মলিকুলার বায়োলজি আমাদের যে কোনো ধরনের বায়োলজিক্যাল জ্ঞান তৈরিতে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তারা জিনোম এডিটিং নিয়েও ট্রেনিং করাচ্ছেন যা অনেকটা মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মতো। কোডগুলো তারা পরিবর্তন করে তারা যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশিক্ষণ দেন। সেটি ক্যানসার হোক, কিংবা উদ্ভিদের কোনো প্যাথোজেনের সমস্যা সমাধানের কৌশল হিসেবে তারা জিনোম এডিটিং শিখিয়ে থাকেন। সিনথেটিক বায়োলজির একমাত্র পস্ন্যাটফর্ম হিসেবে বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তারা, যেটা কিনা ডিজাইন বিল্ড ও টেস্টিং প্রসেস শেখায়। সিনথেজিক বায়োলজিকে একদম সহজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাপ্রোসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীদের বোঝানো তাদের দায়িত্ব বলেও জানান।

হোসাইন মোহাম্মদ মাসুম তাদের পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে জানান, ''আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিজ্ঞানভিত্তিক ইনোভেশন ইন্ড্রাস্টির দিকে আগানো। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা ইতোমধ্যে আইজিএমএপিক থেকে দুটো স্টার্টআপ নমিনেশন পেয়েছি। যেটি বাংলাদেশে শুধু দুটো প্রতিষ্ঠান 'কার্ল এগ্রো' ও 'বায়ো-বাংলা'। এখন আইজিএমএপিকের এসিলারেশনের ছয় মাসের প্রোগ্রামে আছে। আমরা এখন ফান্ড তৈরির কাজ করছি।''

তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, ''বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনেকটাই নতুন। সেদিক বিবেচনায় বাংলাদেশে তেমন কোনো অপরচুনিটি নেই। তবে বহির্বিশ্বে এর চাহিদা ব্যাপক। জলবায়ু পরিবর্তন, ফুড সিকিউরিটি, খাদ্য সংকট, রোগ-জীবাণু যেমন করোনাভাইরাস, চিকুনগুনিয়া, মশাবাহিত রোগসহ অনেক কিছুর সমাধানে এগুলোর প্রয়োগ সুদূরপ্রসারী। তাই বায়োলজিক্যাল ফিল্ড তথা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, মলিকুলার বায়োলজি, সিস্টেম বায়োলজি, কোয়ান্টাম বায়োলজি নিয়ে এখনই ভাবতে হবে, প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। এ সব বিষয়ে কাজ করলে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ব্যাপক।''

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে