দৈনন্দিন জীবনে অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর ব্যবহার

প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
অ্যালুমিনিয়াম একটি মৌলিক পদার্থ যার প্রতীক অষ এবং পারমাণবিক সংখ্যা ১৩। এটি বোরন গ্রম্নপের সদস্য যার রং ধূসর সাদা; গঠনে কোমল, অচৌম্বকীয় এবং যথেষ্ট সংকোচন-প্রসারণক্ষম। ভর অনুপাতে ভূ-পৃষ্ঠের ৮ শতাংশ অ্যালুমিনিয়াম। অক্সিজেন ও সিলিকনের পর ভূ-পৃষ্ঠের মৌল হিসেবে এর অবস্থান তৃতীয়, যদিও ভূ-পৃষ্ঠের গভীরে নগণ্য মাত্রায় বিদ্যমান। এর প্রধান আকরিক হলো বক্সাইট। রাসায়নিকভাবে অ্যালুমিনিয়াম খুবই সক্রিয়। এ কারণে ২৭০ ধরনের ভিন্ন পদার্থে এর উপস্থিতি রয়েছে। এটি বেশ হালকা ও দীর্ঘদিন ব্যবহারে অক্ষয়িষ্ণু। এ কারণে এর বহুবিধ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। মহাকাশীয় যন্ত্রপাতি, যানবাহন ও নির্মাণ কাজে অ্যালুমিনিয়াম ও এর সংকর ধাতুগুলোর বহুল ব্যবহার লক্ষণীয়। এর অক্সাইড ও সালফেটগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত যৌগ। কোনো জীবন্ত প্রাণী তাদের জৈবিক কার্যাবলিতে অ্যালুমিনিয়ামের লবণ ব্যবহার না করলেও মাটিতে প্রচুর পরিমাণে থাকায় উদ্ভিদগুলোয় তাদের ভূমিকা রয়েছে। উদ্ভিদে এর ক্রিয়াবলি নিয়ে উপর্যুপরি গবেষণা চলছে। শুধু ২৭ ভরসংখ্যা বিশিষ্ট আইসোটোপ প্রকৃতিতে স্থায়ীরূপে পাওয়া যায়, বাকিগুলো তেজস্ক্রীয় প্রকৃতির ও অস্থায়ী। পৃথিবীর জন্মের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। এটি নিকটবর্তী অন্য ধাতুগুলোর তুলনায় খুবই হালকা। এর সর্বশেষ কক্ষপথে সর্বমোট তেরোটি ইলেক্ট্রন বিদ্যমান। এর ইলেক্ট্রন বিন্যাস ২, ৮, ৩। এটি দৃশ্যমান বর্ণালির শতকরা ৯২ ভাগ আলোকে প্রতিফলিত করতে পারে। এর ঘনত্ব ২.৭০ গ্রাম/ঘনসেন্টিমিটার। অ্যালুমিনিয়ামের সর্বপ্রথম ব্যবহার পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে। ফিটকিরি হিসেবে প্রাচীন গ্রিসে এর ব্যবহার ছিল এই মর্মে গ্রিক দার্শনিক হিরোডোটাসের উদ্ধৃতিতে পাওয়া যায়। ক্রুসেডের পর ইউরোপের বস্ত্রশিল্পে ফিটকিরির গুরুত্ব তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও এটি তখন গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৫৩০ সালের দিকে সুইস চিকিৎসক পারাসেলসাস ভূ-পৃষ্ঠে এর উপস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। ১৫৯৫ সালে জার্মান রসায়নবিদ আন্দ্রেস লিবাভিয়াস পরীক্ষার মাধ্যমে এর সত্যতা নিরূপণ করেন। ১৭৬০ সালের দিকে অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদন নিয়ে প্রথম কাজ শুরু হয়। যদিও এর বেশ পরে ১৮২৪ সালে ওলন্দাজ রসায়নবিদ হান্স ক্রিশ্চিয়ান ওরস্টেড প্রথম এ কাজে সাফল্য লাভ করেন। ১৮২৭ সালে আরেক জার্মান বিজ্ঞানী ফ্রিডরিক ভোলার ওরস্টেডের পরীক্ষাটি বিশদভাবে আবার পরিচালনা করেন এবং ১৮৪৫ প্রথম অ্যালুমিনিয়ামের মতো ভৌত ধর্ম বিশিষ্ট কিছু টুকরো আবিষ্কারে সক্ষম হন। এর বহু পরে তাকেই অ্যালুমিনিয়ামের আবিষ্কারকের মর্যাদা দেওয়া হয়। ভোলারের পদ্ধতিটি বাণিজ্যিকভাবে অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনে ফলপ্রসূ ছিল না। ১৮৮৬ সালে ফরাসি প্রকৌশলী পল হেরোল্ট এবং আমেরিকান প্রকৌশলী চার্লস মার্টিন হোল আলাদা আলাদাভাবে লাভবান উপায়ে অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ১৮৮৯ সালে অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী কার্ল জোসেফ বেয়ার বক্সাইট পরিশোধন করে অনুরূপ লাভবান একটি কৌশল আবিষ্কার করেন। আধুনিক পদ্ধতিগুলো ২ ব্যবস্থার উপর ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত। বিংশ শতকের মাঝামাঝি গৃহস্থালির ব্যবহার্য তৈজসপত্র তৈরিতে এর বহুমাত্রিক ব্যবহার জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। পৃথিবীতে বর্তমানে চীন সর্বাধিক পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম ধাতু উৎপাদন করে থাকে। এ ছাড়া রাশিয়া, কানাডা, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উলেস্নখযোগ্য হারে এ ধাতুর উৎপাদক। উন্নত দেশগুলোয়ই এর চাহিদা বেশি। বাণিজ্যিকভাবে লাভবান দুটি পদ্ধতিতেই সাধারণত এ ধাতু উৎপাদন করা হয়ে থাকে। পদ্ধতি দুটি যথাক্রমে বেয়ার প্রণালি ও হল-হেরোল্ট প্রণালি নামে পরিচিত। যৌগ ছাড়াও ধাতু হিসেবে অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর প্রচুর ব্যবহার দৈনন্দিন জীবনে দৃশ্যমান। অ্যালুমিনিয়ামের অ্যাসিটেট, ফসফেট ও হাইড্রক্সাইডগুলোর বহুধা ব্যবহার রয়েছে। ধাতু হিসেবে অ্যালুমিনিয়ামের প্রধান ব্যবহার মূলত লক্ষ্য করা যায়- বেশ হালকা ধাতু হওয়ায় যানবাহনের বডি তৈরিতে যেমন- বাস, ট্রাক, রেলের বগি, বাইসাইকেল, উড়োজাহাজ, মহাকাশযান ইত্যাদি এর ব্যবহার প্রচুর। প্যাকেজিংয়ের জন্য ফয়েল পেপার, ক্যান ইত্যাদি তৈরিতে কারণ এটি বিষাক্ত ও আঠালো নয়। নির্মাণ কাজে দরজা, জানালা, চৌকাঠ প্রভৃতি তৈরিতে কারণ এটি মরিচা প্রতিরোধী গুণসম্পন্ন। বৈদু্যতিক যন্ত্রপাতিতে যেমন- মোটর, ট্রান্সফর্মার, ক্যাপাসিটর (ধারক) প্রভৃতি। গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত তৈজসপত্র তৈরিতে যেমন- হাঁড়ি, পাতিল, কড়াই ইত্যাদি।