বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খোলা আকাশে তাঁবুতে রোভার স্কাউট

স্বজন কুমার রায়
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

পৌষ মাস। বাংলা পুঞ্জিকায় পৌষ ও মাঘ মাস শীত ঋতু। কথিত আছে মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে। এ সময় কুয়াশার আবরণে ঢেকে গেছে চারদিক। সবুজ ঘাসের ডগায় জমেছে শীতের শিশির। দিনের বেলায় সূয্যি মামার দেখা মিলছে খুবই কম। মাঝেমধ্যে শন শন বাতাসও বইছে। রাতে তাপমাত্রা নামছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরের ঠান্ডা হাওয়ায় ঘরের বাইরে যাওয়া যেন সে এক যুদ্ধের ব্যাপার। সত্যিই এ পরিস্থিতিতে চার দেয়ালের বাইরে আর পরিবার ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে দিনরাত বাস করা একটা যুদ্ধের সমান। যদিও এ যুদ্ধে নেই কোনো বন্দুক, গোলাবারুদ। তারপরও কয়েকশ' রোভার স্কাউট শিক্ষার্থী যেন শীতের বিরুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে সমবেত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান মাঠে।

বলছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ হবিবুর রহমান মাঠে ৮ম রোভার স্কাউট মুট ২০২৩-এর কথা। সকাল সাড়ে ১০টায় এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৮ম রোভার স্কাউট মুট শুরু হয়। শেষ হবে ৯ জানুয়ারি। মুট বলতে মিলন। এখানে শুরুতে রাজশাহী জেলার ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪৮টি স্কাউট দল নিবন্ধন করলেও ৪১টি স্কাউট দল অংশগ্রহণ করে। প্রতিটি দলে মোট ৮ জন করে রোভার স্কাউট সদস্য রয়েছে।

এবার শিক্ষার্থীদের ১৩টি চ্যালেঞ্জ পালন করতে হবে। এগুলো হচ্ছে সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন, তাঁবুকলা, অজানার পথে, বাধা পেরিয়ে, আনন্দ খেলা, তথ্যপ্রযুক্তি, পাইওনিয়ারিং ও প্রাথমিক প্রতিবিধান, যাব বহুদূর, জিডিভি,

উদ্ধার অভিযান, ইয়ুথ পার্লামেন্ট, তাঁবু জলসা ও ফেরার পালা।

সরেজমিনে দেখা যায়, তাদের থাকার জন্য মাঠের চারপাশে গোল করে তাঁবু টানানো হয়। মাঠের একপাশে রয়েছে একটি মঞ্চ। তার পাশে মাইকের মাধ্যমে দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। তাঁবুতে রোভার স্কাউট সদস্যরা

দিন এবং রাত অবস্থান করে। মেয়ে রোভার স্কাউট সদস্যদের জন্য আলাদা কোয়ার্টারে রাত্রে থাকার ব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তাঁবুগুলো রোভার স্কাউট সদস্যরা তাদের নিজের মতো সাজিয়ে নিয়েছে নানা সৌন্দর্যে নিজের বাড়ির মতো। তারা কেউ বাঁশ, খড়, তালপাতা, ককসিট দিয়ে তাঁবুর প্রধান ফটক তৈরি করেছে। একটি তাঁবুর সামনে দেখা যায় বাঁশ ও রশি দিয়ে তৈরি মাকড়সার জালের অনুরূপ চিত্র। কেউ কেউ নানা রঙে বাঁশের চাটাই-এর উপর নকশা করেছে। কথা বলে জানা যায় এগুলোকে বলে গেজেট।

কেউ আবার ফুলের বাগানও করেছে। তাঁবুগুলোর চারপাশে সীমানা তৈরি করা।

যদিও সীমানা এখানে রশি দিয়ে ঘেরা। তাঁবুর পাশে বাঁশ দিয়ে তারা তৈরি করছে চেয়ার, টেবিল, কাপড় রাখার স্থান, কাপড় শুকানোর ব্যবস্থা। মাঠে কিছু স্কাউট সদস্য গোল দাঁড়িয়ে ডিসিপিস্নন শিখছে। শীতের ঠান্ডা নিবারণে তারা নিয়ে এসেছে শীতের লেপ, কম্বল ও উষ্ণ কাপড়। ভেতরে শোবার জায়গায় রয়েছে খড় ও সিটের। শিক্ষার্থীরা এর উপর তোষক দিয়ে রাতে ঘুমায়।

খাবারের কথায় আসি- এখানে তাদের কেউ বাইরে থেকে খাবার দিয়ে যায় না।

বাড়ির ঠিক বিপরীত। রোভার স্কাউটের প্রত্যেক শিক্ষার্থী তারা নিজেদের খাবার নিজেরা রান্না করে। এ জন্য প্রতিটি তাঁবুতে প্রতিটি দল তাদের দলের সদস্যদের জন্য এক হাঁড়িতে রান্না করে।

সকালে দেখা যায় একটি তাঁবুর পেছনে সকালের খাবার খিচুড়ি রান্না করছে কয়েকজন রোভার স্কাউট সদস্য। কথা বলে জানা যায়, তারা দুর্গাপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে আসা স্কাউট সদস্য। তাদের মধ্যে তারেক রহমান ও তাহসিন

শিহাব শুভ জানান, আমরা এখানে গত বুধবারে এসেছি। আমাদের দলে আমরা আটজন আছি। সঙ্গে স্যারও আছেন। আমরা এখানে অনেক কিছু শিখছি।

এই যে খিচুড়ি রান্না করছি এটা থেকেও শিখছি। পানি ছাড়া ডিম সিদ্ধ করাও শিখেছি। এই শীতে তাঁবুতে অবস্থান করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে-

তারা জানান, তাঁবুতে থাকতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। মাটির উপরে খড় ও মোটা সিট দেওয়া আছে। আর আমরা নিজেরা লেপ, কম্বল নিয়ে এসেছি। ফলে তাঁবুর ভেতরে তেমন ঠান্ডা লাগে না। সব মিলিয়ে ভালোই লাগছে।

নওহাটা সরকারি ডিগ্রি কলেজের রোভার স্কাউট সদস্য নয়ন ইসলাম ও হাবিব জানান, আমাদের ভালোই লাগছে। এর আগেও তাঁবু ক্যাম্প করেছি।

গতকাল হাইকিং ও পাইওনিয়ারিং হয়েছে। এর আগে অনেক খেলাধুলাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনেক মজা করেছি। আজকে ক্লাস নেবেন। যেগুলো শিখছি অবশ্যই এগুলো পরে আমাদের কাজে লাগবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে